রুমা মোদক :কদিন ধরেই নানা সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, পতিত স্বৈরাচার এরশাদের অবস্থা সংকটাপন্ন। যেকোনো মুহূর্তে তার চলে যাওয়ার খবর ব্রেকিং হবে। আসলে আনন্দিত হবো না ব্যথিত হবো ঠিক বুঝতে পারছি না। নারী, কবিতা,রাষ্ট্রধর্ম, জন্মাষ্টমী বন্ধ ঘোষণা ইত্যাদিসহ জনগণের জন্য ‘তোমাদের কাছে এসে বিপদের ভাগী হতে’ গেয়ে বন্যার কোমর পানি হাঁটু জলে নামার সুচতুর অভিনয়সমৃদ্ধ বর্ণাঢ্য জীবন তার। রসে বশে। পঁচাত্তরের পর রাষ্ট্রের যে উল্টোমুখী যাত্রা তাকে পোক্ত করার বাইরে এরশাদের কৃতিত্ব তার ব্যক্তি ভ-ামি। ভ- রাজনীতির প্রবক্তার মৃত্যুতে আনন্দিত হওয়ার কথা।ঠিক আনন্দ নয়,একরাশ ঘৃণা উথলে উঠছে। কিন্তু তার মৃত্যুতে আমি কিছুটা ব্যথিত হবো তো বটেই। তবে সে ব্যথা মৃত্যুর ব্যথা নয়, তার রঙ অন্য।
এরশাদ চলে যাওয়ার সাথে সাথে আসলে আমাদের জেনারেশানের একটা স্বপ্নময় অতীত হারিয়ে যাবে। স্বপ্নময় অতীত। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের প্রজন্ম ঊনসত্তর আর একাত্তর দেখেছি, টগবগে তারুণ্য দেখেছি, স্বাধীনতার আদর্শের প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখেছি। এরশাদের শাসনামল পর্যন্ত আমরা দেশপ্রেমিক তারুণ্য দেখেছি চলন্ত ট্রাক কিংবা অস্ত্রের সামনে নির্ভীক। এরশাদের শাসনামল পর্যন্ত আমরা ছাত্র আন্দোলন দেখেছি। গভীর রাতে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকায় কান পেতে রেখেছি। যেদিন বিবিসি জানাচ্ছিলো এরশাদ পদত্যাগ করেছেন, সেদিন আমরা যারা একাত্তর দেখিনি তারা একটা ‘১৬ ডিসেম্বর’ দেখেছি। আমার বয়সী যারা তারা নিশ্চয়ই সে হিরন্ময় স্মৃতি স্মরণে আনতে পারেন চোখ খোলা রেখেই।
কিন্তু কী হলো আমাদের সব স্বপ্ন আশা গুড়িয়ে দিয়ে এরশাদের পতনের পরই দেশটার যাত্রাপথ কেমন গন্তব্য হারিয়ে ফেললো। হারিয়ে ফেললো ছাত্র আন্দোলনের মতো ঐতিহ্য, নিরঙ্কুশ দেশপ্রেমের অহংকার। রাজনীতি সমাজনীতি অর্থনীতি সব প্রগতির পথে হাঁটার বদলে কেমন এলোমেলো গুলিয়ে গেলো। স্বপ্নভ্রষ্ট আমরা দেখলাম, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের উজ্জ্বল নেতাদের আদর্শিক পতন। আমরা সাক্ষী হয়ে গেলাম একটা সম্ভবনাময় জাতি ও রাষ্ট্রের পুনর্বার পথভ্রষ্টতার। এরশাদের মৃত্যুতে আমি ব্যথিত হবো। কারণ ‘এরশাদ’ নামটির সাথে জড়িত আমাদের স্বপ্নদেখা সময়ের আবেগ আর স্বপ্নভঙ্গের বেদনার মুহূর্তগুলোর স্মৃতির পুনরুত্থান ঘটবে আর তার যন্ত্রণায় আমি ব্যথিত হবো বৈকি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :