নূর মাজিদ : পণ্যের বিনিময় বাণিজ্য বিশ্বের সবচাইতে পুরোনো বাণিজ্যের মাধ্যম। আদি কৃষিভিত্তিক সমাজে এটাই ছিলো প্রধান বিনিময় প্রক্রিয়া। যার আদলটাই বদলে যায় মুদ্রার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। তবে আধুনিক যুগে এসে পুনরায় এই বানিজ্যটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিক পরিক্রমা ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরার প্রয়াস এই প্রবন্ধ। সূত্র : বিবিসি।
বর্তমান বিশ্বে যেসব দেশ বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর নানা প্রকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় ব্যাপক আর্থিক চাপ এবং মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়েছে, সেখানেই পণ্যের বিনিময় বাণিজ্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে দৈনন্দিন লেনদেনে। উদাহরণ, হিসেবে ভেনেজুয়ালার কথাই বলা যেতে পারে। দেশটির জেলেরা এখন তাদের ধরা মাছ খাদ্য এবং ওষুধের বিনিময়ে বিক্রি করছেন। ক্রমান্বয়ে মান কমতির দিকে থাকা জাতীয় মুদ্রা বলিভারের চাইতে এটাই বরং অধিক মুনাফাজনক বাণিজ্যিক মাধ্যম। এছাড়াও, আটবছর আগে গ্রীসে অর্থনৈতিক মন্দা যখন তীব্র হয়, তখন সেখানেও পণ্য বাণিজ্যের একাধিক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।
তবে শুধু ব্যক্তি এবং ভোক্তাপর্যায়েই যে পণ্য বিনিময় মাধ্যম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এমনটি নয়। বরং আন্তর্জাতিক পরিসরেও এর ব্যাপ্তি কম নয়। ঐতিহাসিক উদাহরণও প্রচুর। ১৯৭০-এর দশকে যখন শীতযুদ্ধ তুঙ্গে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন পণ্য বাণিজ্যে অংশ নিয়েছে। তখন পেপসির মতো জনপ্রিয় পানীয়ের পরিবর্তে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে টমেটো পেস্ট আমদানি করে তারা। তখন পেপসিকো ছিলো পিজাহাটের মালিক। ফলে ভোগবাদী অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নে উৎপাদিত টমেটো পেস্ট ব্যবহার করে পিজা বিক্রি এক চমৎকার আঙ্গিক যোগ করে। এছাড়াও, রাশিয়ার ভদকা এবং পরবর্তীকালে ডিকমিশন করা সোভিয়েত যুদ্ধজাহাজ ক্রয়েও পেপসির মতো ভোগ্যপণ্যের বিক্রয় এক শক্তিশালী বাণিজ্য হয়ে ওঠে।
তবে সবকিছু যে ইতিহাসেরই অংশ এমনটাও নয়। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০০৮ সালের পর থেকেই পণ্যের বিনিময়ে বৈদেশিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বেড়েছে। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তীব্রতা পাওয়ার আগে ভারতের সঙ্গে দেশটি বিপুল পরিমাণ পণ্য বাণিজ্য করে অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মাধ্যমে। এই সময় ভারত থেকে তেলের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ চাল, ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী আমদানি করে ইরান। তবে গত মে মাসেই যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা পূর্ণমাত্রায় প্রয়োগ করলে, ভারত এই বাণিজ্য বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
তবে এখানেই শেষ নয়, ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে বিশ্বশক্তিগুলো যে পরমাণুচুক্তি করে, সেখান থেকে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন ট্রা¤প। যদিও, চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপের শক্তিসমূহ ইরান যেন পূর্ণদ্যমে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ শুরু না করে, সেই বিষয়ে যথেষ্ট সংবেদনশীল। ইরানের সঙ্গে নগদ অর্থবাণিজ্য করলে, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞায় পড়বে ইউরোপের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এই নিষেধাজ্ঞাকে এড়াতে তাই চলতি বছরের শুরুর দিকেই জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য জানায়, তারা ইরানের সঙ্গে জ্বালানি তেলের বিনিময়ে পণ্য বিনিময় বাণিজ্য প্রতিষ্ঠার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ইরানের সঙ্গে পণ্য বিনিময় বাণিজ্য করতে পারবে ইউরোপের কোম্পানিগুলো। তবে দেশগুলো এও বলেছে, শুধুমাত্র মানবিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত যেমন খাদ্য এবং ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রেই শুধু এই ব্যবস্থা ব্যবহার করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :