রাশেদা রওনক খান : আমরা অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের দায়ী করে থাকি, কিন্তু আমরা অনেকে হয়তো জানি না, ডাক্তারদের পেছনে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করে আরও অনেক স্টেকহোল্ডার দুষ্ট ব্যবসায়িক চক্র আছে চিকিৎসা সেবার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে অসহায় মানুষের সমস্ত টাকা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কিছু দুর্নীতিবাজ রয়েছে, ডাক্তার পেশাজীবী মহলের নেতাদের নমনীয়তা আছে, একশ্রেণির দালাল চক্র আছে যারা প্রতিনিয়ত আমাকে-আপনাকে ভারত-সিঙ্গাপুর নিতে পারলেই পকেট ভারী করতে পারে, আর কতক ‘আমরা’ আছি, যারা ধরেই নিই আমাদের ডাক্তারদের চেয়ে বিদেশি ডাক্তার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক ‘ভালো’, যেই ভালো চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই ভালো হয়ে উঠেছেন, অনেকেই আবার মারা গেছেন। বিদেশি চিকিৎসা নেবার পরও মারা গেলে সেটাকে ‘ভাগ্য’ বলে ধরে নেই, আর দেশের চিকিৎসায় মারা গেলে ডাক্তারের অবহেলা বলে তাদের মারতে তেড়ে আসি... এখানে ডাক্তার ও রোগী দু’পক্ষকেই দেশপ্রেম দেখাতে হবে। কেবল ক্রিকেট খেলায় দেশ প্রেম নয়, দেশপ্রেম আমাদের প্রতিমুহূর্তের প্রতিটি কাজে প্রকাশ পায়।
ডাক্তার-রোগীর মাঝে ভালোবাসার বন্ধনই পারে এই দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্তি দিতে... মাঝের সকল কালো হাতকে ভেঙে দিতে। ডাক্তারদের ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের ও অন্যান্য দুষ্ট চক্রকে যেমন এড়িয়ে চলতে হবে, তেমনি রোগীদেরও বুঝতে হবে, বিদেশে একজন ডাক্তার পাঁচ ঘণ্টায় দেখেন পাঁচজন রোগী আর আমাদের এখানে একজন ভালো ডাক্তার পাঁচ ঘণ্টায় দেখেন ৫০-১০০ জন। কারণ আমরা সবাই চাই জ্বর বা সর্দি হলেও দেশের/শহরের নামকরা ডাক্তারের কাছেই যাবো, কেউ আমাদের লেভেল নিচে নামাতে রাজি নই। অথচ বিদেশে একজন কনসালটেন্ট অনেক পরের বিষয়, আগে এবহবৎধষ চৎধপঃরঃরড়হধৎ দেখে সাজেস্ট করলে কনসালটেন্টের সিরিয়াল পেতে ৩-৪ মাস অপেক্ষা করতে হয়।
আসুন ডাক্তার হিসেবে যেমন কিছু দায়িত্ব আছে, তেমনি রোগী হিসেবেও আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে, সেগুলোর দিকে নজর দিই। কিছু বিষয়ে ডাক্তার ও রোগী পরস্পর একতাবদ্ধ হই, প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালের মালিকদের সঙ্গে নয়, সাধারণ রোগীদের পাশে এসে দাঁড়াই, রোগীরাও ডাক্তারদের পাশে এসে দাঁড়াক। দিন শেষে একটাই কথা, ডাক্তারবিহীন আমরা রোগের বিরুদ্ধে এক অসহায় সৈনিক। তাই ডাক্তারের বিরুদ্ধে নয়, রোগের বিরুদ্ধে এবং পারলে পুরো স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :