ইকবাল আনোয়ার : ১৩ মাসের শিশু প্রত্যয়কে যে মা আমার কাছে চিকিৎসার জন্য এনেছেন, সে মায়ের রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। এক দেড় মাসে অন্তত তার একবার রক্ত দিতে হয়। কারণ তিনি থ্যালাসেমিয়া রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন। তিনি ফিলোসফিতে অর্নাস তৃতীয় বর্ষে আছেন কুমিল্লার এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। তিনি বললেন তার রক্তের অভাব হয় না। তার সহপাঠি বন্ধু-বান্ধবীরা তা নিজে থেকে দেয় বা জোগাড় করে দেয়। তার স্বামী পাশের গ্রামের। তাদের মধ্যে ধৎৎধহমব সধৎৎরধমব হয়েছে। বিয়ের আগে তার রোগ সমন্ধে বলা হয়েছে। স্বামী এটা জেনেই বিয়ে করেছেন। এক বছর হলো বিদেশে কৃষি শ্রমিকের কাজ নিয়ে গেছেন তার স্বামী।
ইন্টারমেডিয়েট পাস। তবে আট মাস যাবৎ বেতন পাচ্ছেন না। স্বামী কখনো তাকে তার রোগ নিয়ে খোটা দেননি। বরং তিনি তার স্বামীকে তার কঠিন ব্যাধি সমন্ধে ও স্বল্প আয়ু সম্বন্ধে বলেন ও আরেকটা বিয়ের কথা বললে খুব অভিমানী... রাগ করে তিনি বলেন, আল্লাহ নারাজ হবেন, সব উনার ইচ্ছা, আমি তোমাকে নিয়ে সুখে আছি। আমি পরীক্ষার কাগজপত্র দেখে তাকে বললাম... আপনার শিশুর থ্যালাসেমিয়া নেই, সে সম্পূর্ণ সুস্থ। আরো বললাম, বুকের দুধের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া ছড়ায় না। রোগটি সম্বন্ধে মূল ধারণা দিয়ে তাকে আমি ভবিষ্যতে সন্তান নিতে চাইলে কতোটুকু ঝুঁকি রয়েছে এ রোগ হবার ও এ সম্বন্ধে করণীয় কি তা বোঝালাম। মায়ের প্লিহা ইতোমধ্যে বড় হয়ে গেছে। তার প্লিহা ফেলে দেবার সার্জারি করতে হতে পারে। না হলে রক্ত দেবার মাত্রা বেড়ে যাবে।
এতে দেহে আয়রন জমে তার দেহস্থ অঙ্গ নষ্ট করতে পারে। এ লেখা নাম প্রকাশ না করে ( সন্তানের নামটিও ছদ্দ) মায়ের অনুমতিতে লিখছি। কেননা এটি এক জীবন সংগ্রাম ও মহানুভবতার কাহিনী, এক শিক্ষণীয় উপমা। আমি সালাম জানাই মহান স্বামীকে। তাকে আমি পেলে একবার তার পবিত্র হাত দু’টি স্পর্শ করতাম। আমি অভিনন্দন জানাই জীবন সংগ্রামে অগ্র সেনানী এই মাকে এবং তার বন্ধু-সহপাঠিদের। তারপর বলবো, অবশ্যই বিয়ের আগে সম্ভাব্য পাত্র-পাত্রির রক্তের হিমগ্লোবিন ইলেকট্রপরসিস টেস্ট করা ফরজ। আমাদের সমাজে অনেক ‘থ্যালাসেমিয়া ট্রেড’ রয়েছেন। যদি দু’জন ‘ট্রেড’ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তবে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হবার পঁচিশ শতাংশ বিপদ রয়েছে। ‘ট্রেড’ যার, তার কোনো সমস্যা হয় না, রোগ ছড়ানো ছাড়া। ট্রেডের সঙ্গে নরমাল হিমোগ্লোবিনের মানুষের বিয়েতে কোনো সমস্যা নেই। পরিশেষে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সোসাইটিকে যাকাত ও অনুদান দিয়ে সহায়তার আহ্বান জানাই এবং এ লেখার বহুল প্রচার কামনা করি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :