শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১৯ জুন, ২০১৯, ১১:২৫ দুপুর
আপডেট : ১৯ জুন, ২০১৯, ১১:২৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার পরও সুদহার কমাচ্ছে না ব্যাংকগুলো

আহমেদ শাহেদ : দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার কমছে না। সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারকরা সুদহার কমানোর পক্ষে। এ বিষয়ে একাধিকবার সুস্পষ্ট ঘোষণাও দেওয়া হয়। কিন্তু সুদহার কমেনি, বরং তা বাড়ছেই। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও সিঙ্গেল ডিজিট সুদহারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। আমাদের সময়

উল্টো ঘাটতি অর্থায়নের ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ অপরিবর্তিত থাকায় সুদহার আরও বাড়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যাংকের মালিকরা আমানতের সর্বোচ্চ ৬ এবং ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ (নয়-ছয়) সুদহার কার্যকরের ঘোষণা দেন গত বছরের জুলাই থেকে। কমানোর ঘোষণার আগে সরকারের কাছ থেকে ৪টি বিশেষ সুবিধাও আদায় করে নিয়েছেন।

এর মধ্যে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের নগদ জমা বা সিআরআর সংরক্ষণের হার কমানো এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি ধারের নীতিনির্ধারণী ব্যবস্থা রেপোর সুদহার কমানো হয়। ব্যাংক মালিকদের সুবিধা দিতে করপোরেট করহারও কমানো হয়েছে; কিন্তু কমেনি সুদহার। বর্তমানে উল্টো বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি অধিকাংশ ব্যাংকই চলতি বছরের কয়েক মাসে বিজ্ঞাপন প্রচার করে সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

সর্বশেষ গত এপ্রিলের তথ্যমতে, প্রায় ২৩টি ব্যাংকের গড় সুদহার ডাবল ডিজিটে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে সরকার ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। অন্যদিকে কমানো হয়নি সঞ্চয়পত্রের সুদহার। এই দুটি বিষয় সরাসরি সুদহারে প্রভাব ফেলবে। ব্যাংকের সুদহার কিছুদিন কম থাকা এবং কয়েকটি ব্যাংকে ভয়াবহ অনিয়মের ঘটনায় মানুষ ব্যাংকবিমুখ হতে থাকে। বিকল্প খাত হিসেবে বেশি সুদে সঞ্চয়পত্র কেনার হিড়িক পড়ে। ফলে আমানত সংগ্রহ কমে যায়।

অন্যদিকে ঋণের প্রবাহ বাড়ে অনেক বেশি হারে। ব্যাংকের তারল্য সংকট প্রকট হয়। এখন নতুন অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে ব্যাংকের তারল্য ফুরিয়ে যাবে। যেহেতু সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হয়নি, তাই বেশি সুদের আশায় মানুষ সেখানে অর্থ রাখবে। নিজেদের তহবিল জোগানের জন্য ব্যাংক বাধ্য হয়ে আমানত সংগ্রহে সুদহার বাড়াচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১১ থেকে ১২ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছে। এ সুদে আমানত নিয়ে এর চেয়ে কম সুদে ঋণ বিতরণ সম্ভব নয়। অধিকাংশ ব্যাংক আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করে আইনি সীমা লঙ্ঘন করেছে এবং লঙ্ঘনের কাছাকাছি রয়েছে। সীমা লঙ্ঘন থেকে বাঁচতে আমানত সংগ্রহে মরিয়া অনেক ব্যাংক।

এ ছাড়া সরকার খেলাপি ঋণ কমানোর ঘোষণা দিলেও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সর্বশেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণ ১৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। ওই টাকার বিপরীতেও আমানতকারীদের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক কোনো আয় করতে পারছে না। ফলে ঋণের সুদহার বাড়িয়ে তার খরচ উঠাতে হচ্ছে। সুদহার কমানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী গত মার্চে এবং সর্বশেষ গত শুক্রবার নির্দেশনা দিয়েছেন।

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংকের যে সমস্যা, আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি সুদহার যেন সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে। আর এই সিঙ্গেল ডিজিটে রাখার জন্য কতগুলো সুবিধাও দিলাম। কিন্তু অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেটা মানেনি। তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে সে সম্পর্কে বলা আছে, নির্দেশনাও আছে। এ ব্যাপারে আমাদের একটা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের এই নিয়ম মেনে চলতে হবে যেন ঋণটা সিঙ্গেল ডিজিটে হয়, কোনোমতেই ডাবল ডিজিটে না যায়।

প্রধানমন্ত্রী জানান, এত বেশি চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ হতে থাকলে মানুষ ব্যবসা করতে পারে না। সেদিকে আমরা বিশেষভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিষয়টি বাস্তবায়নে আইনও সংশোধন করা হবে। ঋণের সুদের হার কেন কমছে না, তা নিয়ে গত মার্চে এক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দিলাম। যেমন আগে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৭০ ভাগ অর্থ সরকারি ব্যাংকে আর ৩০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হতো। ব্যাংকের মালিকরা বললেন, ‘এটা যদি ফিফটি ফিফটি করে দেওয়া হয়, তা হলে আমরা (সুদের হার) সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনব।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে প্রস্তাবিত হারে ঋণ নিলে ব্যাংক খাত চাপে পড়বে। তহবিল সংকটে পড়লে ঋণ দেওয়ার মতো অর্থ থাকবে না। এতে বিনিয়োগকারীরা চাহিদামাফিক ঋণ পাবেন না। ফলে বিনিয়োগ বাড়বে না। সংকট তৈরি হলে সুদহারও বাড়তে থাকবে। ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক সুদের হার হুকুম দিয়ে কমানো যায় না। কেনিয়া এটা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানও করতে গিয়ে পারেননি।

তিনি বলেন, যখন কেউ দোষ করে, তখন তাঁকে সাজা না দিয়ে সবাইকে শাস্তি দেওয়া ঠিক নয়। আরও দুটি ব্যাংকের এমডি বলেন, সুদহার নির্ভর করে চাহিদা জোগানের ওপর। এখন আমানতের চাহিদা বেশি থাকায় ব্যাংক প্রতিযোগিতামূলকভাবে সুদহার বাড়িয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। চাহিদা কমে গেলে সুদহার এমনিতেই কমে যাবে। সময় বেঁধে দিয়ে সুদহার কমানো সম্ভব নয়। তারা আরও বলেন, তহবিল সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে। ঋণ দেওয়ার মতো অর্থ নেই। সরকারও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বাড়াতে চায়। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর দাবি ছিল। সঞ্চয়পত্রগুলোয় প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এটি ক্রমশ বাড়ছে।

এখানে সুদহার কমানো গেলে এবং গণহারে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ বন্ধ করা গেলে এর সুফল ব্যাংক খাত পেত। কিন্তু বাজেটে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটের কারণে সুদহার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংক সংস্কারের কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কবে কীভাবে এগুলো কার্যকর হবে নির্দেশনা নেই। এর আগের বাজেটে কিছু ঘোষণা থাকলেও সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। বাজেট ঘোষণায় ঋণ আমানতের সুদহারের ব্যবস্থান (স্প্রেড) ৪ শতাংশে রাখতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের শিল্প ও ব্যবসা খাতকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করার লক্ষ্যে ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার এক অঙ্কের ওপর দেখতে চাই না। এই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়