শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৯ জুন, ২০১৯, ০২:১৫ রাত
আপডেট : ১৯ জুন, ২০১৯, ০২:১৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে বাংলাদেশকে জনস্বাস্থ্য সেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

নূর মাজিদ : সংক্ষেপে সিএফআর নামে বেশি পরিচিত মার্কিন থিংক ট্যাংকটি চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনে প্রথমে জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে অধিক মনোযোগ দেয়ার সুপারিশ করেছে। সূত্র : সিএফআর ডটওআরজি।

সিএফআর ব¬গে এই প্রতিবেদনটি লিখেছেন সিলভানা কিউ. সিলভা। তিনি বাংলাদেশে প্রভা হেলথ নামক একটি স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা ও শীর্ষ নির্বাহী। এই সংস্থাটি বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসক, রোগ-নির্ণয় এবং চিকিৎসাসেবায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে।

সিলভানা লেখেন, গত মাসে ষ্ট্যাণ্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক ঘোষণা দেয় এশিয়ার যে সাতটি দেশ ৭ শতাংশ বা তার বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে, তার মাঝে বাংলাদেশও অন্যতম। এমনকি, প্রকৃতঅর্থে ২০৩০ সালে মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে ভারতকেও পেছনে ফেলতে চলেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের অন্যতম গতিশীল অর্থনীতি হিসেবে, অনেকেই বাংলাদেশকে এশিয়ার পরবর্তী অর্থনৈতিক বাঘ হিসেবে দেখছেন। অন্তত, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, দ্য ইকোনমিস্টের মতো স্বনামধন্য পত্রিকা এবং আরো অনেকেই একই কথা বলছে। ১৯৭১ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দিয়েছিলেন, আজ বাংলাদেশ সেখান থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। ২০০৫ সালে যেখানে ৪০ শতাংশ দারিদ্রের হার ছিলো আজ সেটা এক দশকের ব্যবধানে কমে ৩০ শতাংশে অবস্থান করছে। একটি বৈচিত্রপূর্ণ ও ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত সমাজ আজ বাংলাদেশকে বদলে দিতে মেধা দিয়ে সাহায্য করছে। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে দেশটির ৪ কোটি মানুষ মধ্য আয়ের সক্ষমতা অর্জন করেছে। এসবই দৃশ্যত বড় ধরনের প্রাপ্তি।

তবে এর মাঝে একটি ‘কিন্তু’ রয়েছে। এই কিন্তু বেশ বড় মাপের এক শূন্যতা। দেশটির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর প্রবল চাপ বেড়েছে, যা সকল অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে। অন্যান্য নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতেও এই শূন্যতা বিদ্যমান। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষার এই ফাঁক আরো বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে। অর্থনীতি যত বড় হচ্ছে, দেশটির সরকারের উন্নয়ন ব্যয় ততই বাড়ছে। সেই তুলনায় জনস্বাস্থ্যখাতে সরকারের বরাদ্দ প্রকৃত চাহিদা এবং প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে হচ্ছে না। এমনকি গত দশবছরে সরকার স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দে মোট জিডিপির খুব সামান্য অংশই বরাদ্দ করছে। বাজেটের কলেবর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই বরাদ্দ মোট জিডিপির তুলনায় গত এক দশক ধরেই কমছে। এমনকি চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার পূর্ববর্তী বছরের চাইতেও কম বরাদ্দ দিয়েছে। মূল্যস্ফীতিসহ সমন্বয় করা হলে সামগ্রিক বরাদ্দের চিত্রে আরো নেতিবাচক অবস্থা ফুটে ওঠে।

বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের জন্যে এটা এক দারূণ দুর্দশার চিত্র তৈরি করেছে। এর মানে হলো এখন সঠিক চিকিৎসা পেতে বাংলাদেশী পড়িবারগুলোকে প্রচুর অর্থ নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হচ্ছে। রোগীদের এই নিজস্ব ব্যয় এখন দেশের স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দের ৭২ শতাংশ। যা এমনকি বৈশ্বিক গড়ের চাইতেও বেশি। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। যদিও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আয়ের পরিমাণ বাড়ছে, তব্য চিকিৎসা ব্যয় তার বহুগুণ বেশিগতিতে বেড়েই চলেছে। ফলে, অনেক নাগরিক সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একটি হিসেব দিলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়। এতো অর্থ খরচ করার পরেও বাংলাদেশের একজন রোগী গড়ে ৪৮ সেকেন্ড! চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন।

সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা এবং দূরাবস্থার কারণে এখন বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। এই বেসরকারি ব্যবস্থাও অনিয়ন্ত্রিত,বাজারি এবং বহুভাগে বিভক্ত। ঢাকা শহরের মতো কেন্দ্রীয় নগরে তো এদের জুড়ি মেলাই ভাঁড়। সৎ চিকিৎসক এবং আদর্শ ক্লিনিক থাকলেও তাদের সংখ্যা কম বেসরকারি খাতে। ফলে রোগীদের প্রতারিত হওয়া এবং ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা এখন নিয়মিত সংবাদে পরিণত হয়েছে। এই দুর্ভোগ এড়াতে অনেকেই বেশি টাকা খরচ করে দেশের বাহিরে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। আর নিজ দেশের অর্থ বিদেশে খরচ করে আসছেন । এটা কোন টেকসই ব্যবস্থাকে নির্দেশ করছেনা। এই অর্থ দেশে থাকলে তা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সরকারের কর প্রাপ্তিতেও বাড়তি তারল্য সৃষ্টি করতে পারত। এই আর্থিক ক্ষতিটাকে বাংলাদেশের সরকারকে গণনায় আনতে হবে। দেশের জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা না দিতে পারলে, অসুস্থ জনগোষ্ঠী দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেনা। এটাও তাদের বুঝতে হবে।

বাংলাদেশের সরকারকে বুঝতে হবে, বিপুল অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি সবসময় বজায় থাকেনা। বিশেষ করে, অসুস্থ জনগোষ্ঠী নিয়ে এই অর্জন ধরে রাখা মোটেই সম্ভব নয়। বর্তমানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে স্বাস্থ্যখাতের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল সুযোগ করে দিয়েছে। যা সরকারকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার এটিই উপযুক্ত সময়। এখনই উচ্চ-মুল্যবোধ সম্পন্ন, আদর্শ, সাশ্রয়ী এবং পরিমাপযোগ্য সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রণয়নের উপযুক্ত সময়। দেশের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি এবং জনকল্যাণের স্বার্থেই সরকারকে এই পদক্ষেপ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়