আসাদুজ্জামান সম্রাট : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকারি কৌশুলীদের মামলা পরিচালনার সুবিধার্থে এ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আছে। এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান থাকলেও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত হয়নি।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এ কে এম রহমতুল্লাহ্র টেবিলে উপস্থাপিত প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি।
মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে চলাকালে সংঘটিত গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ বিচারে সরকার ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে ট্রাইবুনাল-১ পুনর্গঠন করে বিচারাধীন কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। তবে, ট্রাইব্যুনাল-২ এর কার্যক্রম নিস্ক্রিয় রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুইটি ট্রাইব্যুনালের সহায়তায় ৩০ জনকে সাজা প্রদান করা হয়েছে।
বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিচারাধীন মোট মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৩টি। বিচারাধীন মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন আদালত সৃজন, আদালতের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণসহ মামলা নিষ্পত্তিতে তদারকি বৃদ্ধি করাসহ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
আইন ও বিচার বিভাগ সারাদেশের বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে বিচার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এজলাস সংকট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বিচার কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে, যেন শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া যায়। এ লক্ষ্যে ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬ জন ও হাইকোর্ট বিভাগে ২৮ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে, যেন অধস্তন আদালতে শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দেয়া যায়।
মন্ত্রী জানান, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অধস্তন আদালতে মোট ৫৭১ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৯৯ জন সহকারী জজ নিয়োগের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আরো ১০০ জন সহকারী জজ নিয়োগে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন বরাবর চাহিদাপত্রও পাঠানো হয়েছে। সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে সারাদেশে আরো ৪১টি ট্রাইব্যুনাল সৃজন করেছে। নতুন সৃজিত এ ট্রাইব্যুনালসহ মোট ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর অধীনে দায়েরকৃত মামলাগুলোর নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তাছাড়া ৭টি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সৃজন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর অধীনে দায়েরকৃত মামলার নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এই ট্রাইব্যুনালের জন্য ২৪০টি সহায়ক কর্মচারীর পদও সৃজন করা হয়েছে।
শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, সারাদেশে নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজিদের জাতীয়করণ করার কোনো পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের নেই। ‘মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা, ২০০৯’ অনুসারে নিকাহ রেজিস্ট্রারদের সরকার শুধুমাত্র লাইসেন্স প্রদান করে থাকেন। তাই তাদের জাতীয়করণের আওতায় আনার আইনগত সুযোগ নেই।
নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নিবন্ধন অধিদপ্তরে কর্মরত সাব-রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে, বিগত ১০ বছরে এ অপরাধে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চাকরি বহাল রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রাণঘাতি মাদকের অপব্যবহার রোধ ও মাদক প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ এর আওতায় মাদকবিরোধী আদালত, ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
বিএনপির এমপি মো. হারুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ১১৭ কোটি ৬৬লাখ ৩২ হাজার টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে কুশলী নির্মাতা লিমিটেড।
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়