শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৮ জুন, ২০১৯, ১২:০২ দুপুর
আপডেট : ১৮ জুন, ২০১৯, ১২:০২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কথা দিয়েও পদত্যাগ করছেন না ইসলামি ফাউন্ডেশনের ডিজি

ডেস্ক রিপোর্ট : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল গুরুতর অসুস্থ। তারপরেও পদ ছাড়তে রাজি নন। এ অবস্থায় এক সপ্তাহ ধরে অচল হয়ে আছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ইত্তেফাক

দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বেআইনি কর্মকাণ্ড এবং স্বেচ্ছাচারিতা অভিযোগ এনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) শামীম মোহাম্মদ আফজালের পদত্যাগের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফাউন্ডেশনের নিচে ৯ জুন থেকে প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে গত আট দিন আগে শোকজ করলেও শামীম আফজাল তা পাত্তা দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

গত এক সপ্তাহে দুই দিন অফিস করলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে প্রস্থান করেন মহাপরিচালক।

ফাউন্ডেশনের একজন পরিচালক জানান, দুই দিন পর গতকাল সকালে অফিসে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। শনিবার ছুটির দিনে ৪০টি গোপন ফাইল সরাতে গিয়ে তিনি ইফা কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন। তখন তিনি পদত্যাগ করবেন বলে জানালেও পরের দিন জানান পদত্যাগ করবেন না। এদিকে গতকাল সোমবার ফাউন্ডেশনের সকল পরিচালক উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি বৈঠক করেন। সিনিয়র পরিচালক মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে বৈঠকে ইফার ভাবমূর্তি রক্ষার্থে শামীম আফজালকে দ্রুত স্বেচ্ছায় পদত্যাগের অনুরোধ জানানো হয়। অপরদিকে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল ঘোষণা করেন যে, দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বেচ্ছাচারী, বদমেজাজী’ মহাপরিচালকের অধীনে তারা আর কাজ করবেন না। তার প্রতি লিখিতভাবে তারা অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন।

জানা যায়, ২০০৯ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ শামীম আফজাল। পরবর্তীতে দুই দফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নবায়ন করা হয়। সর্বশেষ মন্ত্রণালয় ও ইফার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরোধিতার মুখেও ‘অদৃশ্য ক্ষমতাবলে’ ২০১৭ সালে দুই বছরের জন্য চুক্তিতে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পান। শামীম আফজালের বিরুদ্ধে ওআইসি মহাসচিবের ঢাকায় সফর, ছাপাখানা ও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চলছে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন চেয়ে গত ৭ মে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সোমবার মহাপরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানিয়েছে, কয়েক মাস ধরেই টানাপোড়েন চলছে মন্ত্রণালয় ও ফাউন্ডেশনের মধ্যে। গত জানুয়ারিতে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর তার সঙ্গেও টানাপোড়েন চলছে মহাপরিচালকের। মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার আগে ইফা গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন শেখ আবদুল্লাহ। গত অক্টোবরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পিলার ভেঙে দোকানের আয়তন বাড়িয়ে নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব গাজী। এতে বায়তুল মোকাররম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম ইউনিটের সাবেক সভাপতি। এ ঘটনার তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছিল ইফার পরিচালক (মসজিদ ও মার্কেট) মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারের নেতৃত্বে একটি কমিটি। সোহরাব গাজীর স্ত্রীর দোকান বরাদ্দপত্র বাতিলেরও সুপারিশ করে কমিটি।

কিন্তু ফাউন্ডেশনের বৈঠকে পিলার অপসারণকারীর পক্ষে অবস্থান নেন শামীম আফজাল। ইফার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে গত ৩০ মে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মহীউদ্দিন মজুমদারকে। তবে পরবর্তীকালে ধর্ম মন্ত্রণালয় সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে এবং শামীম আফজালকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। আগামী ডিসেম্বরে ডিজির মেয়াদ শেষ হবে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বলেন, মহাপরিচালক কথা দিয়েছিলেন তিনি পদত্যাগ করবেন। ফাউন্ডেশনের সবাই তার কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। ফাউন্ডেশনের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসা খুবই দুঃখজনক। এছাড়া তিনি গুরুতর অসুস্থ। তারপরেও পদ ছাড়তে রাজি নন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বয়সজনিত কারণ ও মানসিক-শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল যেকোনো সময় বরখাস্ত হতে পরেন। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে আলোচিত এই ডিজিকে। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়