শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৭ জুন, ২০১৯, ০৫:৪৫ সকাল
আপডেট : ১৭ জুন, ২০১৯, ০৫:৪৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দিশাহীন গন্তব্যে জাতীয় পার্টি, বিদিশা তাই হাল ধরতে চান

সালেহ্ বিপ্লব : কলকাতা ও দিল্লীতে ৫ দিনের সফরে গেছেন বিদিশা সিদ্দিক, ঢাকা থেকে কলকাতার বিমান ছেড়েছে রোববার বেলা ১১টায়। তার মেয়ে মায়া পড়ে দার্জিলিং-এ, বোর্ডিং স্কুলে এখন ছুটি। তাকেই আনতে গেছেন, সেই সাথে দিল্লীতেও ঢুঁ মারবেন। বিকেলেই দিল্লী পৌঁছে গেছেন মা-মেয়ে। এমন একটা সময়ে ভারতে গেলেন বিদিশা, যখন রাজনীতিতে আবার ফিরে আসার কথা গুঞ্জনপর্ব পার হয়ে সত্যতার তকমা লাগিয়ে তোলপাড় তুলেছে জাতীয় পার্টিতে। সরব হয়েছে গণমাধ্যম, বিদিশাও তাদের জানাচ্ছেন, ‘হ্যাঁ, আমি রাজনীতিতে ফিরবো বলে ভাবছি।’ আর জিএম কাদের ও মশিউর রহমান রাঙা গণমাধ্যমে বলেই দিয়েছেন, বিদিশা রাজনীতিতে ফিরতেই পারেন। তবে চেয়ারপারসন হতে হলে দলীয় প্রধানের সাবেক স্ত্রী পরিচয়ে নয়, নিয়ম মেনে আসতে হবে।’

এই সফরে যাওয়ার আগে বিদিশা আমাদেরসময়ডটকমের সাথে এরশাদ, জাতীয় পার্টি এবং রাজনীতি-ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন। জাপার নেতাকর্মীরা চাইলে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন, সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে অব্যাহতি পাওয়া এই নেত্রী। আর জাতীয় পার্টিতে ফেরার উদ্দেশ্য একটাই, কোনো লুকোছাপা না করেই বিদিশা বললেন, এরশাদ সাহেবের হাতে গড়া দলটাকে রক্ষা করতে চাই।

রক্ষার প্রশ্ন আসছে কেনো, দলটা কি ডুবতে বসেছে? বিদিশার জবাব, এরশাদ সাহেবের সাম্প্রতিক অসুস্থতা এবং মৃত্যুভীতির প্রকাশ ভয় ধরিয়ে দিয়েছে পার্টির তৃণমূলে। এরশাদের প্রতি অনুগত নেতাকর্মীরা আশংকা করছেন, পার্টি চেয়ারম্যান শক্তপোক্ত শরীরে মাঠে না ফিরতে পারলে   দলটা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে।

বিদিশা জানান, অনেক আগে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও সারাদেশের নেতাকর্মীদের সাথে তার যোগাযোগ বরাবরই অক্ষুন্ন ছিলো। সম্প্রতি দলের শীর্ষ পর্যায়ে নানারকম ঘটনা ঘটছে, যেসব ঘটনায় নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের মনে দলের ভবিষ্যত নিয়ে শংকা জেগেছে। সিনিয়র নেতারা যে যাই করুক না কেনো, দিনশেষে কথা একটাই, এরশাদ আর জাতীয় পার্টি সমার্থক। সাবেক রাষ্ট্রপতি ৩০ বছরে নানা ঘাতপ্রতিঘাত মোকাবেলা করে দলটাকে তিল তিল করে দাঁড় করিয়েছেন। ক্ষমতার পালাবদলের পর উত্তরবঙ্গে সীমিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে সারাদেশে সাংগঠনিক ভিত মজবুত করেছেন। দু’একজন কন্সপাইরেটর সব সময় ছিলো এবং থাকবে, কিন্তু সারাদেশের নেতাকর্মীরা এরশাদ সাহেবের প্রতি বিশ্বস্ত।

বিদিশার সাথে আলাপচারিতায় জানা গেলো, তার সাথে ধারাবাহিক আলোচনা করছেন এরশাদের হাতে গড়ে ওঠা নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। জেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন লেভেলের নেতাকর্মীরা দেখা করছেন বাসায় এসে।

খুব কনফিডেন্টলি বিদিশা বললেন,  ‘সারাদেশের নেতাকর্মী, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ৮০ ভাগই আমাকে আবার জাতীয় পার্টিতে সক্রিয় দেখতে চান। কিন্তু তাদের নামধাম কিছুই এখন জানতে চাইবেন না, প্লিজ। আমি মিডিয়ার কাছে অনেক কিছু আপাতত না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এই সতর্কতার কারণও ব্যাখ্যা করলেন তিনি। ‘এর আগের বার আমার সাথে যা হয়েছে, তার কলকাঠি নেড়েছে দলে ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারিরা। সেই চক্রটি এখনো আড়ালে আবডালে অন্তর্ঘাত চালানোর সুযোগ খোঁজে। আমি তাদেরকে আর কোনো চান্স নেয়ার সুযোগ দিবো না। সময় আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছ্,ে অনেক কিছু বুঝতে সাহায্য করেছে। কেউ আমার পিঠে ছুরি মেরে নিজের গা বাঁচিয়ে চলে যাবে, সেই দিন এখন আর নেই।’

সহজ ভাষায় সাবলীল ভঙ্গিতে কথা বলেন এই ফ্যাশন ডিজাইনার। শুধু যে বলেন, তাই নয়, শুনতেও অনেক আগ্রহ তার। সম্পূরক প্রশ্ন নিলেন, জবাবও দিলেন। ‘আপনি ঠিক বলেছেন। সময় আমাকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসীও করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনীতিতে ফিরে আসার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসে নতুন মাত্রা দিয়েছেন এরশাদ সাহেবের হাতে গড়ে ওঠা দলের লাখো কর্মীসমর্থক। আশি ভাগ নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে আমার প্রত্যাবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এটা আত্মবিশ্বাসী করে তোলার মতোই একটা ফ্যাক্টর, আপনিও একমত হবেন, যখন মাঠের অবস্থা নিজে দেখবেন।’

তাহলে আপনি দলে ফিরছেন, এটা নিশ্চিত? এই জিজ্ঞাসায় সাফ জবাব বিদিশার। `দলের নেতাকর্মীরা চাইলে ফিরবো। না চাইলে যাবো না।’

প্রাক্তন স্বামী এরশাদের শারীরিক অবস্থা নিয়েও কথা বললেন বিদিশা। জানালেন, চেয়েছিলেন দেখতে যেতে, কিন্তু এখনো সুযোগটা পাওয়া যায়নি। ‘হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর যখন দেখতে যাবো বলে ভাবলাম, তখন ফোন করে জানলাম, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন।’ জানা গেলো, এরশাদের বাসার লোকজনের সাথে নিয়মিতই কথা হচ্ছে তার।

তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির ভাঙ্গন দেখতে চাই না। এরশাদ সাহেবের স্বপ্ন ও সাধনার ফসল এই দল। দলে ফিরলে অবশ্যই আমার প্রধান কাজ হবে, জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা।’

আলাপের রাশ টানার আগে শেষ প্রশ্ন। প্রশ্ন ঠিক না, মন্তব্যই বলা চলে। ‘আপনি আসলে জাতীয় পার্টিতে ফিরতে চান ভিন্ন একটি কারণে। দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আপনি এরশাদ সাহেবের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন, এটাই আপনার প্রধানতম আকাঙ্ক্ষা’

জবাব দিতে গিয়ে একটু যেনো আনমনা হয়ে গেলেন বিদিশা। ‘তিন দশকে এরশাদ সাহেবের পরিচর্যায় তৈরি হওয়া নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিশাল একটি অংশ এখন দিকহারা। তারা তাদের এই কষ্টের কথা আমাকে জানায়, তৃণমূলের আশি ভাগ কর্মীসমর্থক আমাকে আবার দলে দেখতে চায়। ওনাদের মাঝে আমি এরশাদ সাহেবের ছায়া খুঁজে পাবো, এটাই তো স্বাভাবিক।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়