ডেস্ক রিপোর্ট : লক্ষ্যমাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে আবারো পিছিয়ে গেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। চলতি অর্থ-বছরের মে মাসে কাস্টম হাউজের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৭ শ ৯৬.০৭ কোটি টাকা। মে মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫ হাজার ৪ শ ৪৪.৩৮ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায় কম হয়েছে ১ হাজার ৬ শ ৪৮.৩১ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম প্রতিদিন
জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে গত দুই মাস থেকে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) কমে যাওয়া এবং আমদানিকারকরা আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে যেসব পণ্যে রাজস্বের পরিমাণ বেশি সেসব পণ্যের আমদানি কমে যাওয়াকেও রাজস্ব ঘাটতির কারণ হিসেবে দেখছেন কাস্টমস হাউজের অনেক কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থ-বছরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫৭ হাজার ৪ শ ৬২.৭৯ কোটি টাকা। মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫২ হাজার ৯ শ ৫৬.৮০ কোটি টাকা। এই অর্জনের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪০ হাজার ৫ শ ৭.৯৪ কোটি টাকা। ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি ১২ হাজার ৪ শ ৪৮.৮৬ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩.৫১ ভাগ কম।
রাজস্ব আদায়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে চলতি অর্থ-বছরসহ বিগত ৩ অর্থ-বছরের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় ৪ হাজার ২ শ ৯২.৭৯ কোটি টাকা। এছাড়া জানুয়ারি মাসে অর্থ-বছরের ২য় সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৪ হাজার ১ শ ৬৪.৯৯ কোটি টাকা। জানুয়ারি এবং এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকার অঙ্ক পেরুলেও বাকি মাসগুলোতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিলো চারহাজার কোটি টাকার নিচে।
এদিকে বিগত ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ওই অর্থ-বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরিমাণ ছিলো তুলনামুলক বেশি। পক্ষান্তরে চলতি অর্থবছরে এসে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরিমাণ গত অর্থবছরগুলোর তুলনায় তেমন বাড়েনি।
১১ মাসে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিলো ১৫.৩২ ভাগ। আর চলতি অর্থবছরে একই সময়ে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে মাত্র ৪.৪৪ ভাগ।
রাজস্ব আদায় কম হওয়ার বিষয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট ওয়ারিশা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী সরওয়ার আলম খান বলেন, জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে বাজেট ঘোষণার কয়েকমাস আগ থেকে আমদানিকারকরা এলসি গ্রহণ বন্ধ রাখে। কমিয়ে দেয় আমদানির পরিমাণও। এসব কারণে অর্থ-বছরের শেষ দিকে এসে কাস্টম হাউজে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কমে যায়। এছাড়া চীনে তাদের রাষ্ট্রীয় উৎসবের কারণে প্রায় এক মাস আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকে। তার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যেও।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব কম আদায় হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ অনেক বেশি। এছাড়া গাড়ি, কসমেটিকসসহ যেসব পণ্যে শুল্কের পরিমাণ বেশি সেসব পণ্য আমাদানি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে।
চলতি অর্থ-বছরের এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড গড়ার পর মে মাসে এসে প্রায় ৪৯৭ কোটি রাজস্ব কমে যাওয়া প্রসঙ্গে কাস্টম কমিশনার বলেন, অনেক সময় আটক হওয়া পণ্যগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসে খালাস দেওয়া হয়।মিথ্যে ঘোষণাসহ নানা অনৈতিক পন্থায় আনা আটকে যাওয়া পণ্য ইনডেমনিটির (দায়মুক্তি) আওতায় অনেক ক্ষেত্রে আমাদানিকারকদের খালাস করার সুযোগ দেওয়া হয়। সেসব কারণে কোন কোন মাসে হঠাৎ গড় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়ে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :