সাজিয়া আক্তার : দুই সংকটে তিস্তা, একদিকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার, অন্যদিকে বাংলাদেশে নির্বিচারে চলছে পাথর উত্তোলন। নদী ও পরিবেশ গবেষকরা বলছেন, পানি না থাকায় অস্তিত্ব বিপন্ন হবার মুখে তিস্তা। এই দুই কারণে তিস্তা ব্যারেজ অকেজো হওয়ায় বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি উপজেলার কৃষিতে প্রভাব পড়ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিকতাই পারে তিস্তা বাঁচাতে। সেই সাথে বালু ও পাথর ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার পরামর্শ গবেষকদের। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, ১৬.০০
ডালিয়া পয়েন্টের দোয়ানী বাজার এলাকায় অবাদ্বে চলছে পাথর উত্তোলন। বর্ষা মৌসুম বাদে প্রায় সারা বছরেই তোলা হয় তিস্তার নুড়ি ও পাথর। শুকনো মৌসুমে কাজের সংকট দেখা দিলে এলাকার দিন মজুররা বেশি ঝোকেন এই কাজে। সারা দিনে পাথর উত্তোলনে আয় হয় দু থেকে তিনশত টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, গয়াবাড়ি ইউনিয়ন ও ডিমলা উপজেলার একটি প্রভাবশালী মহল এ ব্যবসায়ে জড়িত। গত দু বছর ধরে চলছে এ পাথর উত্তোলন। এতে এক দিকে যেমন কৃষি খাতে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে অন্যদিকে পরিবর্তন হচ্ছে তিস্তার স্বাভাবিক গতিপথ। পশ্চিম বঙ্গ কি বলছে না বলছে সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বাংলাদেশ কোনো দিন পশ্চিম বঙ্গের সাথে আলোচনায় বসবে না। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ফেল করেছে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানি দিতে।
পরিবেশবিদ আইনুন নিশাত বলেছেন, একটি ব্যারাজে পানি ছাড়তে হবে। অর্থাৎ ভাটির পরিবেশগত বিবেচনায় উজান থেকে যে পানি আসবে তার একটি অংশ নদীকে দিতে হবে। কাজেই আমাদের চিন্তাভাবনার একটা পরিবর্তন আনতে হবে।
ভারত গজল ডোবায় বাঁধ দিয়ে দীর্ঘ খালের মাধ্যমে প্রতিদিন ১ হাজার ৫ কিউসেক পানি মহানন্দা নদীতে নিয়ে যায়। তিস্তার পুরো অংশকে কাজে লাগিয়ে আগামী ১০ বছরের মধ্যে পঞ্চাশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশাল প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা। সিকিমে তিস্তা নদীর উপর তিনটি বাঁধ ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। আরো দশটি বাস্তবায়নের পথে। এর প্রভাবে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা ব্যারাজ হয়ে পড়েছে অকেজো। অথচ চুক্তি অনুযায়ী তিস্তার পানি বন্টনে ভারতের আন্তরিকতার অভাবকে দায়ি করছেন পরিবেশবিদেরা।
ঢাবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেছেন, পানি সম্পদ নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যত সমস্যা সেটা এটা সম্পূর্ণ টেকনিকেল সমস্যা, কিন্তু সমাধানটা পলিটিকাল। বিজ্ঞানিরা এটা সমাধান করতে পারবে না। এবার লোক সভা নির্বাচনের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রভাব অনেকখানি কমেছে। তাই চুক্তি বাস্তবায়নে এবার দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ। সম্পাদনা : কায়কোবাদ মিলন
আপনার মতামত লিখুন :