রাশিদ রিয়াজ : ইতালির বিখ্যাত গাড়ি প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বোরগিনি’র আদলে গাড়ি তৈরি করে ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার আকাশ আহমেদ সাড়া বেশ ফেলেছেন। । তার প্রশংসনীয় এ কাজে অনুপ্রেরণা যোগাতে তাকে ১ লাখ টাকা অনুদান দিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান। বৃহস্পতিবার রাতে ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়া রেজা হিমেলের মাধ্যমে একলাখ টাকা আকাশ আহমেদের হাতে তুলে দেন।
শাহরিয়া রেজা হিমেল জানান, আকাশের কাজে আরো উৎসাহ যোগাতে সাংসদ পুত্র অয়ন ওসমান আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। আর এই অর্থ দিয়ে আকাশ তার মেধাকে আরো বিকশিত করার সুযোগ পাবে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত অটোরিক্সা ওয়ার্কশপে আকাশ ‘ল্যাম্বোরগিনির’ আদলে এ গাড়িটি তৈরি করেন যেটি ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে প্রায় ১০ ঘণ্টা পাড়ি দিতে সক্ষম। দেশীয় প্রযুক্তিতে ব্যাটারি চালতি এ গাড়ি তৈরির আগে আকাশের অনেকদিনের শখ ছিলো গাড়ি তৈরির।
দেড় বছর আগে আকাশ বাবার কাছে প্রস্তাব দেয় গাড়ি তৈরির। বাবার কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০/২০০ করে নিয়েই অল্প অল্প করে কাজ শুরু করে আকাশ। । ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল ফলো আর জাহাজ কাটার অভিজ্ঞতা থেকে ইস্পাতের পাত কেটে কেটে গাড়ির বডির শেপ তৈরি করে সে। ল্যাম্বোরগিনির আদলে গাড়ির নকশা প্রণয়ন, নির্মাণ, জোড়াতালি সবই নিজের হাতে তৈরি। আকাশ জানায়, গাড়ির চাকা আর স্টিয়ারিং হুইলটাই কেবল কিনে আনা হয়েছে। চাকার সাসপেশন, হেডলাইট ব্যাকলাইট, গিয়ার, এসবও তার নিজের হাতে তৈরি। প্রায় দেড় বছরের টানা প্রচেষ্টায় আজ সেটি পূর্নাঙ্গ গাড়িতে পরিণত হয়েছে।
আকাশ জানায়, গাড়িটিতে প্রায় ৫টি ব্যাটারি লাগানো হয়েছে। যেটি প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। আর এই ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ হতে লাগবে ৫ঘণ্টা। আর রাস্তায় নামলে ২জন আরোহীকে নিয়ে ঘণ্টা ৪৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে সে। আর পুরো গাড়িটি এই অবস্থায় দাঁড় করাতে তার ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তবে গাড়ির বডি কার্বন ফাইবারে নিয়ে আসলে ৩ লাখ টাকাতেও বানানোও যাবে।
সে আরও জানায়, গাড়িটির দেড় বছরে প্রতিনিয়তই সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকটা অনুমান নির্ভর করেই পারি দিতে হয়েছে অধিকাংশ পথ। কিন্তু লক্ষ্য ছিল একটাই। আর সে কারনেই আমি গাড়িটি তৈরি করতে পেরেছি। ঈদের ছুটিতে গাড়িটি নামানোর পরেই অসাধারণ সাড়া পেয়েছি। আরো কিছু কাজ বাকি আছে। যেমন গাড়ির দরজাগুলো সুইচের মাধ্যমে অটো দরজা খুলবে ও বন্ধ হবে।
আকাশের বাবা নবী হোসেন বলেন, ছেলের উপর কেউ হিংসা করে তার ক্ষতি যাতে না করে এই অনুরোধ রাখি। অনেকেই এসে বিরক্ত করে ছেলেকে। সম্প্রতি একজন গাড়ি জোড় করে চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে সামনে কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলেছে। ছেলে ২দিন যাবত কষ্টে খায়নি কিছু। নতুন করে গাড়ি খুলে সেটি মেরামত করতে হবে। শুরু অনুরোধ করি ছেলের গাড়িটা অনেক শখের। কেউ যাতে এসে বিরক্ত না করে।
গাড়িটি নিয়ে পরবর্তী লক্ষ্য কি জানতে চাইলে আকাশ জানায়, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো যাতে আমাকে গাড়িটি বাজারজাত করার অনুমতি দেয়। অন্য কারো কাছে আমি এটির নকশা বিক্রি করতে চাই না। শুরু অনুমতি দিলেই আমার জন্য অনেক বড় সুবিধা হবে। দেশীয় প্রযুক্তি ও পরিবেশ বান্ধব এই গাড়িটি দেখে আমি আরও ২৫টি গাড়ি তৈরির অর্ডার পেয়েছি। বাজারজাত করলে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকাতেই মানুষ পরিবেশবান্ধব এই গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবে। ব্যক্তিগত ভাবে আরেকটি গাড়ি বানানোর ইচ্ছা আছে। তবে সেটির মডেল আপাতত অপ্রকাশিতই থাকুক। দেশের মানুষ যখন গুণির কদর করতে জানবে তখনি সেটি দেখতে পাবে।
আপনার মতামত লিখুন :