কাজী ওয়াসিমুল হক : বঙ্গীয় ফেবু সমাজে ‘ম্যারিটাল রেপ’ নিয়ে প্রচুর হা হুতাশ আর হাহাকার প্রায়ই চোখে পড়ে, ইন্টারেস্টিংলি এসব লেখার প্রায় সবই অ-আইনজীবীদের লেখা, আইনজীবীরা কেন আইন নিয়ে সচরাচর লেখেন না, এই প্রশ্ন উত্থাপন করলে দুষ্ট লোকজন তাদের সেলফিপ্রিয়তা, দলবাজি এবং লুটপাটের রেফারেন্স টানে দেখে আমি সচরাচর এই প্রশ্ন আর উত্থাপন করি না।
তো যা বলছিলাম, সহজ ভাষায় ‘ম্যারিটাল রেপ’ হচ্ছে স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া বা এমন পরিস্থিতিতে দৈহিক সম্পর্ক করা, যা অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে করলে তা রেপ হিসেবে গণ্য হতো, আমি জানি বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ম্যারিটাল রেপ বিষয়টাই একটা গাঁজাখুরী কনসেপ্ট, কিন্তু বিদেশে আসলেই এটা একটা স্বীকৃত আইনি ইস্যু, মানে বিদেশে ম্যারিটাল রেপের শাস্তি আছে।
বাংলাদেশে রেপের ব্যাপারে কি আইন আছে? প্রথমে আছে আক্ষরিকভাবেই ব্রিটিশ আমলের দ-বিধি (১৮৬০) এবং তারপর আছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০। দ-বিধির ৩৭৫ ধারায় এবং নারী শিশু আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞা পাবেন। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে এই দুই আইনেই ম্যারিটাল রেপ অস্বীকৃত হয়েছে, ছিটেফোঁটা যা আছে তা হচ্ছে বয়স সংশ্লিষ্ট, যেমন দ-বিধিতে পরিষ্কার বলা আছে স্ত্রীর বয়স তেরো বছরের নিচে না হলে স্বামী দ্বারা দৈহিক সম্পর্ক রেপ হবে না, আবার উপরোক্ত নারী শিশু আইনে আছে (বৈবাহিক সম্পর্ক থাকুক না থাকুক) ষোলো বছরের নিচে কোনো মেয়ের সঙ্গে সেক্স করলে তা রেপ হিসেবে গণ্য হবে। যারা জানেন না, একই বিষয়ে দুই রকম আইন থাকলে স্পেশাল আইনের বিধান কার্যকর হয়। সোজা বাংলায় মানে কি দাঁড়ালো? মানে দাঁড়ালো, স্ত্রী যদি ষোলো বছরের উপরে হয়, তাহলে স্বামী যেভাবেই তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করুক না কেন, অন্য মেয়ের সঙ্গে করলে যা রেপ হতো, নিজ স্ত্রীর সঙ্গে তা করলে রেপ হবে না। বলছি না এটা একটা নায্য আইন, তবে এটাই আপাতত বাংলাদেশের আইন, আপনাদের পূর্ণাঙ্গ অধিকার আছে এই আইন বদলাতে চাওয়ার, কিন্তু যা বাংলাদেশের আইনে রেপ নয়, তাকে রেপ দাবি করে যখন আপনারা ফেবু ভাসিয়ে দেন, ব্যাপারটা আসলেই কেমন যেন হয়ে যায়। আর ইয়ে, যারা আঠারো বছরের নিচে মেয়ের বিয়ে দেয়া যায় না উপদেশ কপচাতে আসবেন, বিষয়টা যে শাস্তিযোগ্য তা ঠিক, কিন্তু সেই বিয়ে যে বাংলাদেশের আইনে ‘অবৈধ’, তা কোথায় আছে, সেই আইনের লিংকটা একটু দিয়ে যাবেন।
আপনার মতামত লিখুন :