বিভুরঞ্জন সরকার : নির্বাচনের আগে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন নিজেরাই চরম বেকায়দায় আছে। ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য এখন নড়বড়ে। ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে অনৈক্য ও সমন্বয়হীনতা চরমে। মতপার্থক্য ও সমন্বয়হীনতা দূর করার জন্য জরুরি বৈঠকে বসেও ঐক্যের সন্ধান পাননি ফ্রন্টের নেতারা। ১১ জুন জেএসডি নেতা আ স ম আব্দুর রবের উত্তরার বাসায় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সভা হয়েছে। কিন্তু সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ ফ্রন্টের প্রধান দুই স্তম্ভ গণফোরামের ড. কামাল হোসেন এবং নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বৈঠকে ছিলেন না। তাদের অনুপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত না হওয়ারই কথা। দ্রুত কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে আরেকটি বৈঠক হবে এবং সেখানে হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত হলেও হতে পারে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আবার সংহত হয়ে রাজনীতিতে কোনো ঝড় তুলতে পারবে বলে মনে করে না। ঐক্যফ্রন্টের ঐক্যের কোনো আদর্শগত ভিত্তি নেই। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে ফ্রন্টের অন্য শরিকদের মতপার্থক্য প্রবল। বিএনপি তাদের সুবিধা বিবেচনা করেই ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হয়েছিলো।
কিন্তু ফ্রন্টের অন্যতম নেতা কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর ভক্ত, জয় বাংলায় বিশ্বাসী। আর এই দুইটির ঘোরবিরোধী হলো বিএনপি। নির্বাচনের আগে চমক সৃষ্টির জন্য ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলেও ধীরে ধীরে ফ্রন্টের শরিকদের মতপার্থক্য সামনে আসতে থাকে। নির্বাচনে ভালো ফল করলে হয়তো ঐক্য কিছু সময়ের জন্য হলেও অব্যাহত থাকতো। কিন্তু ভোটে শোচনীয় পরাজয় ফ্রন্টকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।
কামাল হোসেনের প্রতি বিএনপির একটি বড় অংশের অবিশ্বাস রয়েছে। আবার বিএনপির জামায়াত নিয়ে চলাও ড. কামালের না-পছন্দ। বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ অনেকেই দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি কিছুতেও জামায়াত ছাড়বে না।
ঐক্যফ্রন্টের সাতজন প্রার্থী সংসদ সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিতে না পারার ঘটনায় ঐক্যফ্রন্ট মুহ্যমান হয়ে পড়ে এবং তারা সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে গণফোরামের দুইজন এবং পরে বিএনপির চারজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের নৈতিক অবস্থানকে একটু দুর্বল করে দেয়।
কোন প্রেক্ষাপটে এবং রাজনৈতিক কোন কৌশলের অংশ হিসেবে ঐক্যফ্রন্ট সংসদে যাওয়া যুক্তিগত মনে করেছে তার ব্যাখ্যা এখন ফ্রন্টের শরিকরা জানতে চাইছে। বিএনপি এবং গণফোরামকে এই ব্যাখ্যা দিতে হবে। ফ্রন্টের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কমানোর উদ্যোগ নিলেও তেমন ফল পাওয়ার আশা করা যায় না। ভবিষ্যতে ফ্রন্টের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনাও নাকি করা হচ্ছে। তবে ছোট পরিসরের ঐক্য টিকিয়ে রাখতে যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে ঐক্যের পরিধি বাড়িয়ে বাড়তি কি সুবিধা পাওয়া যাবে তা বুঝতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পন্ডিতরা। লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়
আপনার মতামত লিখুন :