শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১০ জুন, ২০১৯, ০৪:২২ সকাল
আপডেট : ১০ জুন, ২০১৯, ০৪:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী বললেন, চাপ থাকলে ওই সম্পাদক জার্মানিতে গিয়ে ওই কথা বলার সাহস পেতেন না, গণতান্ত্রিক পন্থা তার ভালো লাগে না, ফরমায়েসি লেখাই তিনি লেখেন

আবুল বাশার নূরু : ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম স¤প্রতি জার্মানি গিয়ে দেশে নিজের মতো করে কলাম লিখতে পারছেন না বলে যে দাবি করেছেন, তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যদি চাপ থাকতো তাহলে তিনি কি জার্মানি গিয়ে এই কথাটাই বলার সাহস পেতেন? আসলে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থাকলে তার ভালো লাগে না। অগণতান্ত্রিক সরকার এলেই তিনি ভালো থাকেন। ফরমায়েশি লেখা ছাড়া তিনি কিছুই লিখতে পারেন না।’

জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফর নিয়ে রবিবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। কারো নাম উল্লেখ না করে ডেইলি স্টার সম্পাদকের প্রতি ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

‘জাপানে আপনার গ্রান্ড গালা সংবর্ধনা হয়েছে, তখন বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধি দল জার্মানিতে গিয়েছিল। সেখানে দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক ডয়েচে ভেলেতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে তিনি তার মতো করে কলাম লিখতে পারছেন না। নানা ভয়ে, তিনি কলাম লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তার যা বলবার কথা ছিল সেটি তিনি বলতে পারছেন না। গণমাধ্যমের প্রতি আপনার কোনো দিক নির্দেশনা আছে কি না?’- এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে সম্পাদক এই কথা বলছেন, যদি সত্যিই এই অবস্থাটা হতো তো তিনি কি এই কথাটুকু বলার সাহস পেতেন? যদি চাপ থাকতো তাহলে তিনি এই কথাটাই বলার সাহস পেতেন কি না আমার প্রশ্নটা এখানে। কেউ তো চাপ দেয়নি।’

সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ এমন মত পোষণকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকলে তাদের ভালো লাগে না। তাদের ভালো লাগে, অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকলে, যেমন ইমার্জেন্সি সরকার হোক, মিলিটারি সরকার হোক তখন তারা ফরমায়েশি লেখা লিখতে পারেন।

প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার কথা আপনি বলতে চাইছেন, আমি বুঝতে পারছি, তিনি কে?’ এরপর ওই সম্পাদকের বিষয়ে একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একবার একটা টেলিভিশন টকশোতে কোনো একটা মিথ্যা নিউজ দেওয়া হয়েছিল বলে কেউ তাকে ধরেছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, আমাকে ডিজিএফআই যেটা সাপ্লাই দিয়েছিল, আমি সেটাই নিউজ হিসেবে ছেপেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি ওই কথাটার সঙ্গে এই কথাটার লিংক করেন তার মানে দাঁড়ায়, এখন ডিজিএফআই তাকে (সম্পাদককে) কোনো লেখা দিচ্ছে না, সেজন্য তিনি ফরমায়েশি লেখা লিখতে পারছেন না। আমরা তো জিজিএফআইকে দিয়ে কোনো তথ্য দেয়াচ্ছি না। সে কারণে এখন তিনি নিজেই লিখতে পারছেন না। তার মানে কোনো ফরমায়েশি লেখা না হলে তিনি লিখতে পারেন না। তার মানে তো এটাই দাঁড়াচ্ছে।’

এরপর প্রধানমন্ত্রী তার উদ্দেশে বলেন, তিনি লিখুন না, তার যা খুশি তাই লিখে ফেলুন। লিখে তো যাচ্ছেনই।
এসব পত্রিকার কোনো সহযোগিতা পান না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যদি মনে করি, আমার নিজের যদি সব কিছু ঠিক থাকে, সঠিক বলছি, সঠিক করছি, সেটাই আমার কাছে বড়। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি, আমি যা কাজ করি দেশের কল্যাণে করি। কে মন্দ বললো, কী করলো এটা নিয়ে তো আমার মাথাব্যথার কিছু নেই ।’

প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, ‘বাংলাদেশ কি এগিয়ে যাচ্ছে না? এর সুফলটা কি সবাই পাচ্ছে না? বাংলাদেশের মর্যাদাটা কি বিদেশে একটু উন্নত হচ্ছে না? সারা বিশ্ব যে বাংলাদেশের দিকে তাকায়, প্রশংসা করে এটা কি সবার ভালো লাগে না? ভালো লাগে না তাদের, যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। যাদের স্বাধীনতাবিরোধীদের পদলেহন করার অভ্যাস ছিল তাদের ভালো লাগে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও লেখায় আমি বাধা দেইনি তো? যার যা খুশি লিখুক না। তিনি হঠাৎ বলে ফেললেন, লিখতে পারছেন না। তো আমি তো মনে করবো ওটাই যে, তিনি ফরমায়েশি লেখা পাচ্ছেন না। তিনি যদি চান, ডিজিএফআই তাকে সাপ্লাই দিক, তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা সাপ্লাই দেবে। এর বাইরে আমি কী বলবো?’
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সংকট নিরসনে ভারত, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তারা সবাই রোহিঙ্গার বিষয়টি বাংলাদেশের সংকট বলে স্বীকার করে। কিন্তু কেউ কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না। সবচেয়ে বড় বিষয় মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চাচ্ছে না। এছাড়া আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো চায় না যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরে যাক। তারা ফিরে গেলে অনেকেই চাকরি হারাবেন এই ভয় কাজ করছে।’
এবার ঈদ জামাতের সময় জঙ্গি হামলার হুমকি ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক চেষ্টায় কোনো অঘটন ছাড়াই সব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর থেকেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও পুলিশ কড়া নজরদারি শুরু করে। কোথাও কোনো ধরনের তথ্য পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সব বিষয় প্রকাশ করা যায় না। আপনারা জানেন যে নানা নামে নানাভাবে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে নানা ধরনের থ্রেট কিন্তু দিতেই থাকে। সারাক্ষণ কিন্তু এগুলো আসছে। সবটা আমি বলে মানুষকে ভীত করতে চাই না। কিন্তু যতদ‚র পারি, এগুলোর পেছনে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা আমরা নিয়ে থাকি।’

জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের সচেতনতাকে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ হিসেবেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গত বছর শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তিস্তায় সুবাতাস বইবে। সেই মোদী প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বিধায় চুক্তির বিষয়ে কী হবে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মতো কঠিন একটা সমস্যার সমাধান করেছি। আমরা আমাদের যে ছিটমহল, সেটা বিনিময় করেছি। অথচ পৃথিবীর বহু দেশে যুদ্ধই বেঁধে যাচ্ছে এই ছিটমহল নিয়ে। আর আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আরও অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের ডেল্টা প্ল্যান নিয়েছি। নদীগুলো ড্রেজিং করে দিচ্ছি। কারও কাছে পানির জন্য মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। কারণ, আমাদের এটা হচ্ছে ডেল্টা। হিমালয় থেকে যে নদীগুলো আসছে, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যেতেই হবে। এখন পানিটা আমরা কতোখানি ধরে রাখতে পারবো, সেই ব্যবস্থা যদি করি, তাহলে পানি আমাদের চাইতে হবে না। কাজেই এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করার দরকার নেই।’

সম্পাদনা: অশোকেশ রায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়