শিরোনাম
◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশিত : ০৯ জুন, ২০১৯, ০৬:৩৫ সকাল
আপডেট : ০৯ জুন, ২০১৯, ০৬:৩৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রাচ্য-প্রতীচীর পথে প্রান্তরেঃ ইতালি আর বাঙ্গালি

ডঃ শোয়েব সাঈদ : জীবিকার জন্যে সংগ্রামমুখর অভিবাসন মানব সভ্যতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে আজ অবদি জীবিকার তরে মানুষের দেশান্তর ঘটছে অব্যাহতভাবে। গ্লোবালাইজেশনের বর্তমান সময়ে ভাল থাকবার লড়াইয়ে বৈধ-অবৈধ অভিবাসন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক এবং মানবিক ইস্যু। সতের কোটি বাংলাদেশীদের উল্ল্যেখযোগ্য অংশ প্রবাসী। এদের বড় অংশটাই জীবিকার সন্ধানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশান্তরি। মালদ্বীপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকামধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ থেকে আমেরিকা সর্বত্রই বাংগালির পদচারণা। গত কয়েক বছর আগে সেন্ট্রাল আমেরিকার পানামা গিয়েছিলাম অফিসের কাছে। রোজার দিনে এক রোববারে ব্যাক্তিগত সময়ে ইফতারীর করার জন্যে মসজিদ খুঁজছিলাম।প্রবাসে মসজিদে ইফতারিতে অন্যরকম আকর্ষণ। পানামা সিটির হাতেগুনা দুয়েকটি মসজিদের অন্যতমটি হচ্ছে গুজরাটি মসজিদ। কাঠের ব্যবসায় পানামাতে গুজরাটিদের অবস্থান শত  বছরের বেশী সময় ধরে। সেখানে গল্প শুনেছিশত বছর আগে পানামা খাল নির্মাণে অনেক বাংগালিও অংশ নিয়েছিল এবং জনশ্রুতি আছে পানামায় প্রথম মসজিদ নির্মাণে মূল ভূমিকা পালন করেছিল একজন বাঙ্গালি। পানামার উদাহরণটি টানলাম বাংগালির বিশ্বায়নের ব্যাপ্তি বুঝাতে। আমরা শাসকের জাত নই আর তাই উপনিবেশ স্থাপন করার যোগ্যতা ছিলনা কখনোতবে বিচ্ছিন্নভাবে জীবিকার জন্যে যেতে হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। পেশাগত কাজে আমাকে প্রায় ৭০টি দেশের অসংখ্য শহর-বন্দরে যাতায়তের সুযোগে এবং বাংগালি দেখলেই ভাললাগার অনুভুতির প্ররোচনায় দেশে-দেশে অনেক বাঙ্গালির সাথে কথা হয়েছেমেশা হয়েছে। ইতালিতে বাঙ্গালির উপস্থিতি যেভাবে চোখে পড়েঅন্য কোথাও মোটেও এমনটি নয়। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত কিংবা স্থায়ীভাবে যুগযুগ ধরে যুক্তরাষ্ট্রকানাডাঅস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মত দেশে বসবাসরত বাঙালির সংখ্যা অনেক বেশী হওয়া সত্ত্বেও ইতালির মত এতটা লোকারণ্য নয়। ইতালিতে বাংগালিদের উপস্থিতি অনেক বেশী প্রকাশ্য আর সরব মূলত হকারীর মত বহির্মুখী কাজের ধরণের কারণে। ইউরোপের অনেক দেশে দোকানপাটের মালিক বাঙালিরা। জেনেভা,অ্যামস্টারডামজুরিখে রেল স্টেশনে পত্রিকা আর ফলমূলের দোকান চালায়  বাঙ্গালিরা। পর্তুগালের লিসবন আর ইতালির রোমে টুরিস্ট এলাকায় স্যুভেনিরের অসংখ্য দোকান বাঙ্গালি মালিকানাধীন।

প্রবাসী এবং অভিবাসী বাঙ্গালিদের কিছু অংশের ভীষণ নেতিবাচক কীর্তিকলাপের অনেক কাহিনী  শুনা যায়। বৈধভাবে বসবাসরতদের নেতিবাচক কাজের সাথে অবৈধভাবে বসবাসরতদের নেতিবাচক কাজের পার্থক্য রয়েছে। বৈধভাবে বসবাসরতদের মধ্যে নোংরা রাজনীতিপিছু লেগে থাকা,  পরশ্রীকাতরতার ব্যাপকতা বেশী। অবৈধভাবে বসবাসরতদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব যেমন সবল কর্তৃক দুর্বলদের টাকা ছিনিয়ে নেওয়া, শারীরিক লাঞ্চনার প্রবণতা বেশী। ইতালিতে আছেন এমন অনেকেই আগে মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। তাঁদের অনেকেরই এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে। ৮০ দশকের শেষদিকে জাপানে কর্মরত অবৈধ বাঙ্গালিদের মাসের শেষে বেতনের পুরো টাকা ছিনিয়ে নেবার জন্যে বাংগালিদের একটি চক্র কাজ করত। নির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও অবৈধদের পুলিশের কাছে গিয়ে নালিশে ভয় করার সুযোগে এই জগন্য অন্যায়গুলো করা হত। যাক নেতিবাচক আচরণের দিকে না গিয়ে মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি।

ইতালির রোম আর মিলানে যে পরিমাণ বাঙ্গালি দেখা যায় যদি বলি প্রতি ১০ ফুট পরপর একজন   বাঙ্গালির দেখা মিলে তবে অত্যুক্তি হবেনা। বছর পাঁচেক আগে জেনেভা থেকে সুইস আল্পসের  অপরূপ শোভা মন্থনে ট্রেনে করে ইতালির মিলানে যেতে হয়েছিল। মিলান স্টেশনে নেমে গিজগিজ করা বাঙ্গালি ছাতা বিক্রেতা দেখে মিলান সেন্ট্রাল স্টেশনকে গুলিস্থান চত্বরের মতই লাগছিল।  পুলিশের ধাওয়া খেলে  লুকিয়ে যায়পুলিশ চলে গেলে আবার ফিরে আসে। লিবিয়া থেকে পালিয়ে আসা মাতব্বর কিসিমের একজনকে দেখলাম ছাতা ব্যবসার নেতৃত্ব দিতে বিশেষ করে পুলিশের উপস্থিতি-অনুপস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করতে। পুলিশের তাড়া করার বিষয়টি মূলত অনুমোদনহীন ব্যবসা আর জনবিড়ম্বনার কারণে। অনেক হকারকে দেখেছি মাথায় ছাতা থাকার পরও ছাতা বিক্রির জন্যে পিছু নিয়েছে। জীবনের অনিশ্চয়তা মানুষকে অনেক বেপরোয়া করে তুলে। এদের সাথে যদি একটু মেশেনচা বা কফি শপে নিয়ে গিয়ে একটু আলাপ করেনজানতে পারবেন জীবন সংগ্রামের দুঃসাহসিক সব কাহিনীএকেকজনের কাহিনী একেকরকমপ্রত্যেকটি কাহিনী ভিন্নতর দীর্ঘশ্বাসে। টিকে থাকার সংগ্রামে এদের প্রত্যয় আর ধৈর্যের জন্যে হৃদয়ের গহীন থেকে অভিবাদনটি অগোচরেই বের হয়ে আসে।জনগণের ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করাক্ষমতার বলয়ে থেকে বৈধতার লেবাসে উপচে পড়া সুযোগ-সুবিধের মহা আয়োজনে দেশে বিদেশে ভাসতে থাকা কিংবা অবৈধভাবে বেগম পাড়ার ঠিকানা কেনা ইত্যাদি জনপ্রতারণার দায় থেকে উনারা অন্তত মুক্ত।

২০১৯ সালের মে মাসে মাইসিটি মন্ট্রিয়লে আমার বেশী থাকা হয়নি পরপর বিজ-ট্রিপের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তাহকালজাপানে এক সপ্তাহ থেকে মন্ট্রিয়লে ফিরে পরের দিনই ইতালির রোমে আসতে হয়েছে। রোম থেকে বুলগেরিয়ার সোফিয়াতে ব্যস্ততা। ক্লাসিক্যাল এন্টিকুইটির রোমান সভ্যতার কেন্দ্র আর ক্যাথলিকদের মক্কা ভ্যাটিকানের জন্যে রোম বিখ্যাত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই হিসেবে আমার কাছে রোমের আরেকটি পরিচয়জাতিসঙ্গের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা ফাও এর সদর দপ্তরের জন্যে। রোববার ছুটির দিনে রোমে থাকার কারণে দর্শনীয় স্থানগুলো দেখাব্র পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল আর তাই হোটেল নিয়েছিলাম রোমের সেন্ট্রাল রেল স্টেশনে কাছে। মন্ট্রিয়ল থেকে এয়ারবাস ৩৩০ এর এয়ারকানাডার ফ্লাইট ৮৯২তে ৮ ঘণ্টায় রোমের ফুমিচিন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি বিমানবন্দরে। বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে ২৫ মিনিটে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এক্সপ্রেসে সেন্ট্রাল রেল স্টেশন রোমা টার্মিনিতে পৌঁছে যাওয়া। বাংলাদেশে মৌসুমি আবহাওয়ার কারণে যে ধরণের বৃষ্টিপাত হয় রোমে তাই হচ্ছিল। রোমা টার্মিনিতে অসংখ্য ছাতা বিক্রেতা (হকার) দেখলামপ্রায় সবই বাংলাদেশী। চারিদিকে বাংলা ভাষায় কথোপকথন। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে রাস্তায় স্যুভেনিরের পসরা,জাঁকজমকপূর্ণ স্যুভেনিরের দোকানরাস্তায় দাড়িয়ে ছাতা বিক্রিছাপরা টাইপের খাবারের দোকান সব জায়গায় বাঙ্গালিদের ব্যাপক  মালিকানা আর শ্রমজীবিতা। আমার হোটেল ছিল রোমা টার্মিনি থেকে ৫ মিনিটের পথবাঙ্গালি পথচারী দেখে কথা বলবার ছলে গুগুল ম্যাপের যুগে অনেকটা অপ্রয়োজনীয়ভাবেই জিজ্ঞেস করে হোটেলে যাবার রাস্তাটিও কনফার্ম করে নিলাম। হোটেলে লাগেজ রেখেই ছাতা হাতে বেড়িয়ে পড়লাম রোমান সভ্যতার তীর্থ কেন্দ্রগুলো দর্শনে। হোটেল থেকে হেঁটে যেতে লাগে ৪০ মিনিট তাই রোমের অলিগলি দিয়ে হেঁটে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। বৃষ্টির উৎপাতে ভিজে গিয়ে বিরক্তি ছিল বটেকিন্তু ইউরোপের বহু শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটবার অভিজ্ঞতার আলোকে ভালই লাগছিল। রোমের বার্সোলোনার মত পকেটমারের কুখ্যাতি না থাকলেও বিড়ম্বনা এড়াতে পকেট সাবধানে রাখাই নিরাপদ।  মিনিট ৩৫ হেঁটে পৌঁছে গেলাম রোমান সভ্যতার প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু আর নগর সভ্যতার আদি সংস্করণ রোমান ফোরাম, গ্লাডিয়েটর আর হিংস্র জন্তুর লড়াইয়ের স্টেডিয়াম বিখ্যাত কলোসিয়ামের পুরাকীর্তি এলাকাতে। এবার ছাতা বিক্রেতার পাশাপাশি দেখলাম রোমান ফোরাম আর কলোসিয়ামের প্রবেশ টিকেট বিক্রির এজেন্ট আর টুরিস্ট গাইডের ভুমিকার অসংখ্য বাংলাদেশী। সিটি ভ্রমণের বাস সহ অন্যান্য টুরিস্ট ইভেন্টের টিকেট বিক্রিতে এরা কমিশন পায়। বাংলাদেশী টুরিস্ট গাইডরা ইউনিফর্ম পরে অপেক্ষা করছে গ্রাহকের জন্যে। এরা বিভিন্ন ভাষাতেও দক্ষ।  

রোমান ফোরামের সামনে প্রবেশ টিকেট কাটার জন্যে লাইনে অপেক্ষা করছিলাম। বাঙ্গালি ছাতা হকাররা প্রাণপণ চেষ্টা করছে বৃষ্টিতে লাইনে দাড়িয়ে থাকে দর্শনার্থীদের ছাতা গচাতে। ছাতা ছাড়া রেইনকোট গায়ে ছিল যাদের তারাই এদের লক্ষ্য। একজনকে দেখলাম যারা কিনছে না তাদের আপন মনে যাচ্ছেতাই গালি দিয়ে যাচ্ছে। আমাকে হয়তো বাংলাভাষী মনে হয়নি তাই নিষ্ঠার সাথে আমার সামনেই গালি দিয়েই যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে আমি মুখ খুললাম। বললাম “কি ভাই বাংলায় গালি দিতে খুব মজা লাগে”। আমার কথা শুনেই দৌড়ে আমার কাছে এসে বলল “ভাই সাধে কি গাইল্লাই, ইতালিগুলা কিপ্টা না  কিন্তু এই ভিনদেশী টুরিস্টগুলা কিপ্টার হাড্ডি, বৃষ্টিতে ভিজবো,কিন্তু ছাতি কিনব না”। লাইনে দাড়িয়ে থাকতেই টুকটাক কথা বললাম, জিজ্ঞেস করলাম  ছাতা বেঁচে নিজে চলেন কি করে আর দেশেই টাকা পাঠান কি করে। উনার কথা অনুসারে দিনে আয় হয় ৩০ ইউরোর মত। কিন্তু  ছাতা ব্যবসায় জড়িত নন যারা তারা ভিন্ন হিসেব দিলেন। মাত্র ৮০ ইউরোসেন্টের ছাতা বৃষ্টির সময় ৫-১০ ইউরোতে বিক্রির তথ্য দিলেন তারা এবং তাদের মতে ছাতা হকারদের দৈনিক আয় ১০০ ইউরোরও বেশী। আয় যাই হোক না কেন সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে চ্যালেঞ্জময়, ঝুঁকিপূর্ণ  জীবিকায় দিনরাত কষ্ট করেই উনারা আয় করছেন। ওনাদের আয় সেই রকমই সাদা; পারমানবিক বালিশ কিংবা বেগম পাড়ার টাকার মত কুৎসিত কদাকার নয়।   

রোমান ফোরামে বিকেল তিনটে নাগাদ কয়েক কিলোমিটার হেঁটে রোমান সভ্যতার খুঁটিনাটি দেখার পর বিকেল চারটায় একই টিকেতে কলোসিয়ামে আমার প্রবেশ সময় ধার্য ছিল। রোমান ফোরাম থেকে বের হয়ে কলোসিয়ামে যাবার পথে দেখা হল বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী টুরিস্ট গাইডদের সংগে। আলাপে আলাপে পরিচিত জনও পাওয়া গেল, চট্টগ্রামের মানুষ। একজন আমাকে গাইড করেকলোসিয়ামে প্রবেশ করার সিকিউরিটি জোনে পৌঁছে দিয়ে গেল।  বাংগালির সবচেয়ে বড় গুন  হচ্ছে অকৃত্রিম আন্তরিকতা। কলোসিয়াম দেখে সন্ধ্যা নাগাদ হোটেলে ফিরে গেলাম। বৃষ্টিতে জুতা, মোজা ভিজে একাকার। ভয় পেলাম, জ্বর আসে কিনা। হোটেলের পাশে একটা টার্কিশ রেস্টুরেন্টে ডিনার করলাম। ডিনার শেষে চা চাইলাম। এদের কফি ছিল, চা ছিলনা। রেস্টুরেন্টের মালিকের বাংগালি বন্ধু বসা ছিল সেখানে। আমার চা পানের কথা শুনে কিচেনে গিয়ে চমৎকার দুধ-চা বানিয়ে আনলেন নিজ থেকেই। ভদ্রলোকের বাড়ী সিলেটে,ইতালিয়ান রেস্টুরেন্টে কাজ করেন।

সোমবার দুপুর নাগাদ আমাকে এয়ারপোর্টে যেতে হবে বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ার উদ্দেশ্যে।  হাতে সময় নেই, আবার ভ্যাটিকান না দেখলেই নয়। সাতটায় হোটেলে নাস্তা সেরে কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন রোমা টার্মিনির সামনের বাস টার্মিনাল থেকে ৪০ নম্বর বাসে করে রোম শহরের গুরুত্বপূর্ণ  স্থাপনা দেখতে দেখতে আঁটটা নাগাদ পৌঁছলাম ভ্যাটিকানে। বাসে আমার সামনেই দাড়িয়ে ছিল এক বাঙালিসাত-সকালেই ছুটছেন তাঁর আইনজীবীর কাছে এসাইলাম সংক্রান্ত বিষয়ে। ভ্যাটিকানে পৌঁছে আবারো দেখা হল বাংগালি গাইডদের সাথে। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন স্যুটেড-বুটেড অর্থাৎ পেশাদার পর্যায়ের গাইড। ভ্যাটিকান হচ্ছে একটি স্বাধীন দেশের রাজধানীর ভেতর আরেকটি স্বাধীন দেশ। মাত্র ৪৪ হেক্টরের ১০০০ অধিবাসীর কেল্লা বা ক্যাসেলের মত ছোট্ট একটি দেশ ভ্যাটিকান হচ্ছে ১৩০ কোটি ক্যাথলিকদের মক্কা। সকাল সকাল বেশী ভিড় না থাকায় সহজেই সিকিউরিটি পার হয়ে সেন্ট পিটার’স ব্যাসিলিকা দেখা হয়ে গেল। তারপর গেলাম ভ্যাটিকান মিউজিয়া্ম এবং সিস্টিন চ্যাপেল দেখবার জন্যে। প্রায় কিলোমিটার লম্বা লাইন দেখে মনে হল ঢুকতেই সময় পার হয়ে যাবে আর ভেতরে যাবার সময় হবে না। এখানেও বাঙ্গালিরা টিকেট বিক্রির আর গাইডের কাজ করছে। সময়ের স্বল্পতার জন্যে আমার দ্বিধান্বিত অবস্থা দেখে একজন পরামর্শ দিলেন ভেতরে না গিয়ে বাহির থেকে ঘুরে ঘুরে দেখার জন্যে। কিছু দূরে দাড়িয়ে ছিল আরেক বাঙ্গালি এজেন্ট। উনি আমার সময়ের সীমাবদ্ধতা শুনে বললেন চলেন আমার সাথে। উনি আমাকে আরেক বাংগালির অফিসে নিয়ে গেলেন যারা গ্রুপ ট্যুরের ব্যবস্থা করেন। চেষ্টা করলেন ইতিমধ্যে ভেতরে প্রবেশ করা অবস্থায় কোন গ্রুপে আমাকে ঢুকানো যায় কিনা। কিন্তু হলনা, তাই তিনি পরামর্শ দিলেন ভ্যাটিকানের সরকারি ট্যুরিজম সেন্টার থেকে এক্সপ্রেস টিকেট কাটবার জন্যে। ঐ ভদ্রলোক আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে টিকেটের ব্যবস্থা করে এক্সপ্রেস লাইনে দাড় করিয়ে দিলেন। তিন ঘণ্টার অপেক্ষার বদলে, ২০ মিনিটে  মিউজিয়ামের ভেতরে চলে গেলাম। উনি আমার পেছনে নিজের কাজ ফেলে ৩০ মিনিটের বেশী সময় ব্যয় করেছেন উনার কোন লাভ ছাড়াই। ঐ ভদ্রলোকের সাহায্য ছাড়া সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে   সিস্টেমগুলো জানা আর ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়তো সম্ভব হতোনা, ফলে ১৯২৯ সালে  গোড়াপত্তন হওয়া ভ্যাটিকান রাষ্ট্রেটি দেখার ব্যাপারটি হতো আংশিক। মিউজিয়াম থেকে ফিরে এসে রাস্তায় আবারো দেখা ভদ্রলোকের সাথে। কৃতজ্ঞতায় আপ্যায়ন করতে চাইলাম কিন্তু রোজদার হওয়ার সেটি সম্ভব হয়ে উঠেনি। ভ্যাটিকান সিটি থেকে হেঁটে অটটাভিয়ানো মেট্রো স্টেশন আসা পর্যন্ত অসংখ্য  সুভেনিরের দোকান পেলাম বাঙালি মালিকানায়। বাঙালির স্যুভেনিরের দোকান থেকে কিছু কেনাকাটা করে মেট্রোরেলে চলে এলাম রোমা টার্মিনিতে।  হোটেল থেকে লাগেজ নিয়ে রোমা টার্মিনি থেকে এয়ারপোর্ট সাঁটল বাসে এক ঘণ্টায় এয়ারপোর্টে। স্কাই টিম গ্রুপের সদস্য ইটালিয়ান এয়ারলাইন্স আলইটালিয়াতে রোম থেকে সোফিয়া। সোফিয়া থেকে ফেরার পথে রোমে একদিন থেকে স্টার এয়ারলাইন্সের সদস্য এয়ার কানাডার ফ্লাইট ৮৯৩ তে মন্ট্রিয়লে ফেরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়