বিভুরঞ্জন সরকার: বড় রকমের কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সারাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। মানুষ এবার কম ভোগান্তিতে ঢাকা থেকে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছে। ঈদের দিন সকালে বৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হলেও মানুষের আনন্দে তাতে কমতি হয়নি। ঈদ উপলক্ষে রাজনীতিবিদদের নিজ নিজ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার যে রীতি চালু হয়েছে, এবার তাতে কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ করা গেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা এলাকায় যাননি, কারণ তাদের মন ভালো নেই, নেত্রী কারাগারে, আবার তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেও অনেক মামলা-মোকদ্দমা আছে। এলাকার চেয়ে ঢাকা-ই তাদের জন্য বেশি নিরাপদ। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও এলাকামুখী হননি। কারো কারো ধারণা, সামনে কোনো নির্বাচন না থাকায় অনেকেরই কিছুটা গা-ছাড়া ভাব আছে। নির্বাচন সামনে থাকলে জনসংযোগের যে ব্যাপার থাকে এবার সেটা ছিলো না। তবে কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপি ঠিকই নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ঈদ করেছেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন।
এবার ‘ঈদ-রাজনীতি’ জমজমাট না হওয়ার আরও একটি বড় কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের বাইরে থাকা। এবার ঈদের আগেই প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গিয়েছেন। ফিরবেন আরো ক’দিন পর। তার অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই তার সমর্থক-অনুসারীদের মধ্যে কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব রয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও যেহেতু মুক্ত মানুষ হিসেবে ঈদ পালন করতে পারেননি সেহেতু তার সমর্থক-অনুসারীরাও সানন্দে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ অসুস্থ। তার দলের মালিকানা বিরোধে অন্য নেতারাও ব্যতিব্যস্ত থাকায় তাদের ঈদ পালনও উৎসবমুখর হয়নি।
তবে দেশের মানুষ যার যার সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দের সঙ্গেই ঈদ পালন করেছেন। ঈদের দিন উত্তেজনাহীন কাটলেও ঈদের পর রাজনীতিতে কিছুটা উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে বিএনপি। ঈদের পরদিন সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় রেজিস্ট্রারের কক্ষের সামনে ‘বোমাসদৃশ’ একটি বস্তু দেখা গেলে পুলিশ সেটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। বস্তুটি কি পেট্রোল বোমা, না কি অন্যকিছু সেটা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশও বলতে পারেনি। আসলে বস্তুটি কি, কারা, কী কারণে সেটি সেখানে রেখেছিলো তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু বোমাসদৃশ্য বস্তুটি উদ্ধারের খবরে বিএনপি উদ্বিগ্ন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি সরকারের কোনো ‘মাস্টার প্লানের’ অংশ কিনা সে প্রশ্ন তুলেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১ এপ্রিল থেকে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। বিএনপি মনে করছে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে সরকার উদাসীন বলেই বিএসএমএমইউতে বোমা ঢুকতে পেরেছে।
বিএসএমএমইউতে বোমা না ফাটলেও বিএনপি এখন রাজনীতিতে বোমা ফাটানোর চেষ্টা করবে বলে মনে হয়। তবে দেশের মানুষের এসব বিষয়ে আগ্রহ কম। তাই না-ফোটা বোমা ফাটানোর নিষ্ফল চেষ্টা করে বিএনপি কোনো সুফল পাবে বলে মনে হয় না । বিএনপি এখন অথৈই পানিতে ভাসছে, যেখানেই কোনো খরকুটো দেখছে সেটাই আঁকড়ে ধরে নিঃশ্বাস ফেলার চেষ্টা করছে। ‘বোমাসদৃশ’ বস্তুটির বিস্ফোরণ ঘটলে কি হতো তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা না করে এখন বলার কথা এটাই যে, যে বোমা ফাটেনি তা ফাটানোর প-শ্রম না করাই বিএনপির জন্য মঙ্গলজনক হবে।
লেখক: গ্রুপ যুগ্ম-সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়
আপনার মতামত লিখুন :