সাজিয়া আক্তার : জাটকা নিধন বন্ধে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় বরিশালের ভেদুরিয়া গ্রামের জেলে পরিবারে এবার কেটেছে নিরানন্দ ঈদ। ডেলি স্টার বাংলা
বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের বাগর জা গ্রাম। গ্রামের অধিকাংশের পেশা বলতে মাছ ধরা। নদীই তাদের কাছে সব কিছু-আয় উপার্জন, জীবন, আর বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
বাগর জা গ্রামে প্রায় ৪ হাজার মানুষের বাস। এর মধ্যে অত্যন্ত আড়াই হাজার মানুষ বিভিন্ন ধরনের নৌকা নিয়ে ইলিশ মাছ ধরে। কিন্তু এই জেলে গ্রামে ঈদের আনন্দ নেই। জাটকা ইলিশ রক্ষায় নদীতে জাল ফেলায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গ্রামের জেলেদের অনেকেই এই সময়টায় সরকারি খাদ্য সহায়তা পাননি। সে কারণেই গ্রামের কয়েকশো শিশুদের কারও এই ঈদে নতুন জামা হয়নি। ঈদের দিনের সকালটা কেটেছে রোজকার মতো পান্তা ভাত খেয়ে।
জেলে বেল্লাল জানান, ঈদ আসলে আমাদের কষ্ট বাড়ে, ছেলে মেয়েদের হাতে কিছুই তুলে দিতে পারি না বলে। বিগত চার মাসে মাত্র ৫০ কেজি চাল পেয়েছি। এতে তো আর সংসার চলে না।
কিন্তু শুধু বেল্লাল-মায়ান‚র পরিবার নয়, অলাউদ্দিন গাজী, কবির গাজী, ছবির গাজী, জলিল হাওলাদার, বজলু হাওলাদারসহ শতাধিক পরিবারে ঈদ এসেছে প্রতিদিনের মতো, কষ্ট নিয়ে।
এই গ্রামের সেন্টু রাঢি জানান, ভাঙনে মোর সব গেছে-এইহানে রাস্তার পারে কোনমতে ঘর তুইল্লা ঠাঁই লইছি-মোগো আর ঈদ, ঈদের দিনও পান্তার বেশি কিছু জোটেনি।
নদীতে নৌকা নামাতে পারেননি সেন্টু। জেলে হলেও তিনি চাল পাননি। এই গ্রামের মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ জেলে সরকারি সহায়তার চাল পেয়েছেন বলে তিনি জানান।
শুধু বাগর জা নয়, কাজীর হাট থানার বিদ্যানন্দপুর গ্রাম, মেহেন্দীগঞ্জের জাংগালিয়া গ্রাম, বরিশাল সদর উপজেলার ভেদুরিয়া, টুংগিবাড়িয়াসহ আশপাশের ১৫/২০ জেলে গ্রামে ঈদের আনন্দ বলতে কিছু নেই। এসব গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের দুই তৃতীয়াংশের ঈদ কেটেছে অন্যান্য দিনের মতো সাদামাটা।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, উপক‚লীয় এলাকায় মাছ ধরার ট্রলার নিষিদ্ধ, ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর আট মাস জাটকা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকায় মেহেন্দীগঞ্জ অঞ্চলের কয়েক হাজার জেলে পরিবার মানবেতর ভাবে ঈদ কাটিয়েছে। তবে তিনি জানান উপক‚লে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :