খালিদ আহমেদ : বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের হোম পেজে যার যাচ্ছেন, শুরুতেই তাদের চোখে পতছে টুপি মাথায় এব ব্যক্তি গিটার বাজাচ্ছে। সত্যিকারের মানুষ নয়, বরং জন্মদনি উপলক্ষে প্রয়াত সংগীত শিল্পী লাকী আকন্দরে অ্যানমিটেডে রূপ র্সাচ বারটরি ওপরে দেখতে পাচ্ছনে । এই শিল্পী ৬৩তম জন্মদনি উপলক্ষে শুক্ররাব এই ডুডল প্রকাশ করলো গুগল।
গুগল ডুডল হলো গুগল কর্তৃক ডিজাইনকৃত কোনো বিশেষ দিন,বিশেষ ঘটনা,অর্জন বা বিখ্যাত কোনো ব্যক্তির জন্ম - মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করতে গুগলের হোম পেইজে তাদের লোগোর পরিবর্তে ব্যবহৃত শিল্পসম্মত লোগো।যেটি কোনো বিশেষ দিনে গুগলের হোমপেজে তাদের নিজস্ব লোগোর পরিবর্তে দেয়া হয়।গুগলের প্রথম ডুডল দেয়া হয় ১৯৯৮ সালের ৩০শে আগস্ট বার্নিং ম্যান ফেস্টিভ্যালের দিন।এটি ডিজাইন করেছিলো গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ ও সার্গেই বিন,এটি দেয়ার কারণ ছিলো মূলত গুগল ব্যবহারকারীদের তাদের অনুপস্থিতি সম্পর্কে বার্তা ।
লাকী আখান্দ ১৯৫৬ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার পাতলা খান লেনে জন্মগ্রহণ করেন।মাত্র ৫ বছর বয়সেই তিনি তার বাবার কাছ থেকে সংগীত বিষয়ে হাতেখড়ি নেন। তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টেলিভিশন এবং রেডিওতে শিশু শিল্পী হিসেবে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সেই এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম যুক্ত করেন।
১৯৭৫ সালে লাকী আখান্দ তাঁর ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দের একটি অ্যালবামের সঙ্গীতায়োজন করেন। অ্যালবামটিতে "আবার এলো যে সন্ধ্যা" ও "কে বাঁশি বাজায়রে" গানে কণ্ঠ দেন হ্যাপী আখন্দ, "স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে" ও "পাহাড়ি ঝর্ণা" গানে কণ্ঠ দেন হ্যাপী ও লাকী দুজনে, এবং লাকী নিজে "নীল নীল শাড়ি পরে" ও "হঠাৎ করে বাংলাদেশ" গানে কণ্ঠ দেন।
১৯৮০ সালে তিনি সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ঘুড্ডি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। নিজের প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালে। এই অ্যালবামের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান হল “আগে যদি জানতাম”, “আমায় ডেকোনা”, “মামুনিয়া”, “এই নীল মনিহার”, ও “হৃদয় আমার”।। ছোট ভাই হ্যাপী আকন্দের সাথে “স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে” ও “পাহাড়ি ঝর্ণা” গানে দ্বৈত কন্ঠ দেন ব্যান্ড দল হ্যাপী টাচ এর সদ্স্য লাকী আকন্দ।
১৯৮৭ সালে ছোট ভাই হ্যাপী আকন্দ মারা যাওয়ার পর প্রায় একযুগ তিনি সঙ্গীতের বাইরের ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে পরিচয় কবে হবে ও বিতৃষ্ণা জীবনে আমার অ্যালবামের সঙ্গীতায়োজনের মাধ্যমে গানের ভুবনে ফিরে আসেন।
বিতৃষ্ণা জীবনে আমার অ্যালবামে সেসময়ের ছয়জন জনপ্রিয় গায়ক, মাহফুজ আনাম জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, হাসান, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, ও সামিনা চৌধুরী কণ্ঠ দেন। একই বছর তিনি সামিনা চৌধুরীকে নিয়ে আনন্দ চোখ নামে একটি দ্বৈত অ্যালবাম প্রকাশ করেন। গোলাম মোরশেদের গীতে এবং আখান্দের সঙ্গীতায়োজনে অ্যালবামটি প্রকাশ করে সাউন্ডটেক। এতে ১২টি গান ছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গান ছিল “কাল কি যে দিন ছিল”, “বলো কে পারে” ও “এই বরষা রাতে”। পরের বছর আখান্দ সামিনা চৌধুরীর একক অ্যালবাম আমায় ডেকোনার সঙ্গীতায়োজন করেন।
এছাড়া তিনি ব্যান্ডদল আর্কের “হৃদয়ের দুর্দিনে যাচ্ছে খরা” গানের সুর করেন। ২০০০ সালের পর তিনি আরেকটি মিশ্র অ্যালবাম তোমার অরণ্যের সুর ও সঙ্গীতায়োজন করে। এতে লাকী আখান্দের কণ্ঠে গাওয়া ৩টি গানসহ বাপ্পা মজুমদার, ফাহমিদা নবী, ও নিপুর কণ্ঠে ১০টি গান ছিল। তিনি এই অ্যালবামে সমকালীন তাল, লোক গানের তাল ও তার প্রিয় স্পেনীয় গানের তাল ব্যবহার করেন।
লাকী আখন্দ দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি নিজের আর্মানিটোলার বাসাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ সংগীত জগত গভীর শোক প্রকাশ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :