শোভন দত্ত : বছরের অক্টোবর মাসের পরে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদের রিজার্ভ (সংরক্ষিত) পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ছাড়তে হয়। আবার জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদের জন্যও হ্রদে প্রচুর পানি ধরে রাখাও সম্ভব হয় না। চৈত্রের পর থেকেই পানি কমে যাওয়া ও হ্রদে প্রচুর পলির কারণে রাঙ্গামাটির সঙ্গে উপজেলাগুলোর নৌপথে যোগাযোগে সমস্যা সৃষ্টি হয়। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পণ্য পরিবহনসহ যাত্রীদের।
জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদে পলি জমে গভীরতা কমে যাওয়ায় এ দুর্ভোগের মাত্রা বেশি। আয়তনের দিক থেকে হ্রদটির গভীরতা বর্তমানে অর্ধেকের চেয়ে বেশি কমে গেছে। অতিরিক্ত পলির কারণে সামান্য পানি কমে গেলেই দুর্গম অঞ্চলে চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। বছরের প্রায় চার মাসেরও অধিক সময় উপজেলাবাসীকে এ নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হয়।
রাঙ্গামাটির সাতটি উপজেলার সঙ্গে নৌপথে সদরের যোগাযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কাপ্তাই, নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়িতে সড়কপথ থাকলেও বাকি চারটি উপজেলা বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু ও বিলাইছড়ির সঙ্গে সরাসরি নৌপথে আসা-যাওয়া করতে হয়। ফলে এ সময়টিতে উপজেলাগুলোর জনসাধারণ যোগাযোগের জন্য চরম দুর্ভোগ পোহান। বিভিন্ন সময় কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিংয়ের কথা বলা হলেও এখনও কোনো সুসংবাদ পাচ্ছে না জেলাবাসী।
জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং শুরুর আশ্বাস দিলেও এর কোনো কার্যক্রম চোখে না পড়ায় হতাশ ব্যক্ত করেন ভুক্তভোগীরা। প্রতিবছর চৈত্র থেকে আষাঢ় পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানির অভাবে প্রচুর দুর্ভোগ পোহাতে হয় উপজেলাবাসীকে। জেলার উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও নির্বিঘ্ন রাখার জন্য যে উদ্যোগ তা চোখে পড়ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
ইতোমধ্যে সবগুলো নৌপথে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ করে ছোট ছোট বোট করে উপজেলাগুলোতে যাওয়া আসা করতে হচ্ছে। এতে খরচ যেমন বেড়েছে, তেমটি সময়ও লাগছে দ্বিগুণ। পণ্য পরিবহনে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় উপজেলাগুলোতে বেড়েছে দ্রব্যমূল্যের দাম।
রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দীন সেলিম বলেন, পানি কমে যাওয়ায় আমরা লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। এখন কিছু ছোট ছোট বোটের মাধ্যমে যাত্রী সেবা অব্যাহত রেখেছি। ডুবোচরগুলোর কারণে বোট চালাতেও কষ্ট হচ্ছে। সহসাই কয়েকটি ডুবোচরের পাড় কেটে না দিলে ছোট বোটগুলোও চালানো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানি রয়েছে ৭৮.৪০ এমএসএল (মিনস সী লেভেল) যা রুলকার্ভ অনুসারে এ সময়ে হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৩.২০ এমএসএল। সেই হিসেবে কাপ্তাই হ্রদে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ফুট পানি কম আছে।
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, হ্রদ ড্রেজিংয়ের বিষয়ে আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়েছি। আশা করছি সহসাই কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে। জাগোনিউজ
আপনার মতামত লিখুন :