শেখ সেকেন্দার আলী, মালয়েশিয়া : ঈদ উপলক্ষে মালয়েশিয়ায় দেশটির আনাচেকানাচে থাকা বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিণত হয়।
নতুন পোশাকে মসজিদ নেগারার দিকে আসছে মানুষ। সবাই যে মালয়েশিয়ার নাগরিক, তাওনয়। ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্থান, সিরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ নানান দেশের নানান জাতের মানুষ আছেন সেই দলে। আছেন অনেক বাংলাদেশিও। বিদেশে থাকলেও তাদের মন পড়ে রয়েছে বাংলাদেশে। তাদের কাছে ঈদ মানে বিদেশে বসে দেশের স্মৃতিচারণ।
বুধবার মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানী কুয়ালালামপুরে জাতীয় মসজিদ (নেগারায়) সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদ নেগারায় নামাজে অংশ নেন রাজা আল সুলতান রিয়াত উদ্দিন আল-মোস্তাফা বিল্লাহ শাহ ইবনে সুলতান হাজী আহমাদ শাহ আল মোস্তাইন বিল্লাহ, প্রধানমন্ত্রী ডা: তুন মাহাথির মোহাম্মদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।
নামাজ শুরুর আগে বয়ান পেশ করেন জাতীয় মসজিদ নেগারার খতিব তানশ্রী শাইখ ইসমাইল মোহাম্মদ।
নামাজ শেষে মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাতের পর মুসলিরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। স্থাণীয়রা মালয়েশিয়ানরা ঈদ মোবারক জানান সারা বিশ্বের মুসলমানদের ।
স্থানিয় মুসলিরা তাদের শিশুদের নিয়ে আসেন ঈদ জামাতে। শিশুরাও পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি ও ঈদ সেলফিতে মেতে উঠেন। অনেকে ছবি তুলতে ব্যস্ত। অনেক বাংলাদেশিকেও সেই দলে দেখা গেল। এদেরই একজন সিলেটের রতন মিয়া। তিনি বলেন, পাচ বছর ধরে মালয়েশিয়া আছেন। চার বছর ধরেই ঈদ এখানে কাটছে। ঈদের সারাটা দিন তিনি বাংলাদেশে পালন করে আসা ঈদের স্মৃতিচারণ করেন। তাকে সমর্থন জানালেন, জিলাল মিয়া, নূর হোসেন ও হারুন মিয়া। চারজন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে এসেছেন।
নেয়াখালীর সুমন বলেন, ঈদের দিনটায় দেশের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। বিদেশে ঈদ করতে ভালো লাগে না। কিন্তু কিছুই করার নেই। দেশে ঈদ করতে যাওয়ার যে খরচ, তা তাদের নেই। কাজেই ঈদে বিদেশেই কাটাতে হয়। সাধারণ শ্রমিক হিসেবে যারা মালয়েশিয়ায় কাজ করেন, তাদের বেশির ভাগেরই এই দশা। তারা সাত-আট বছর পর একবার দেশে ফিরতে পারেন। বাকি সময় বিদেশেই কাটে। আর যারা অবৈধ বাংলাদেশি, তারা তো দেশে ফেরার কথা ভাবতেই পারেন না।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলেন, মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদে অনেক বাংলাদেশিই শখ করে নামাজ আদায় করতে আসেন। এ ছাড়া মারদেকার কাছে মসজিদ জামেক, পুত্রাযায়া, মসজিদ ইন্ডিয়ায় অনেক বাংলাদেশি নামাজ আদায় করেন। মারদেকা মাঠে অবশ্য ‘সালামাত হরি রায়া’ লেখাটি চোখে পড়ল। মালয়েশিয়ায় রায়া মানে ঈদ।
কোতারায়ার বাঙালি রেস্তোরাগুলোতে ঈদ উপলক্ষে নানা ধরনের খাবার পাওয়া যাবে বলে জানান এগুলোর মালিক। অবশ্য অনেক বাংলাদেশিই জানিয়েছেন, যেহেতু ঈদ উপলক্ষে ছুটি আছে, কাজেই তারা আজ নিজেরাই ভালো-মন্দ রান্না করে খাবেন। অনেকে জানালেন, তারা ঘুমিয়েই ঈদের দিন কাটিয়ে দেবেন।
এদিকে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম দেশটিতে বসবাসরত সকল প্রবাসীদেরকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ সকল প্রবাসীদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শ্রম কাউন্সেলর জহিরুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘বিদেশে বসে কারোরই ঈদ করতে ভালো লাগে না। এ কারণে অনেকেই ঈদের সময় দেশে চলে যান। তবে একটা বড় অংশই বিদেশে ঈদ কাটান।’
প্রবাসী সব বাংলাদেশি মিলেমিশে সানন্দে এই দিনটি উদ্যাপন করবেন বলে তিনি আশা করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :