শিরোনাম
◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান

প্রকাশিত : ০৪ জুন, ২০১৯, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ০৪ জুন, ২০১৯, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কথা বলার শেষ মানুষটা হারানোর আগেই ঘুরে দাঁড়ান

কাকন রেজা : একুশে পদক পাওয়া খ্যাত সাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের সামাজিক মাধ্যমে লিখলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধেও কমছে না ইয়াবা পাচার, পত্রিকায় এমন রিপোর্ট পড়ে একজন মন্তব্য করলেন হুম, এবার সময় হয়েছে কামান, গাইডেড মিসাইল এসব নিয়ে নামার।’... বিষয়টি স্যাটায়ার হলেও এর পেছনের নিদারুণ সত্যটি অনুধাবনের সময় এসেছে। এনকাউন্টার কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো তা খুঁজে বের করার মধ্যেই রয়েছে সমাধানের মূল সূত্র। তবে সেই সূত্র ব্যবহারে সমীকরণ মেলানো যে সহজ কাজ নয়, তা আমরা সবাই জানি।

সূত্রের প্রধান ক্যারেক্টার যারা, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে সবকালেই। তা সত্ত্বেও লক্ষ্য স্থির করলে তাদের কাজের পথ রুদ্ধ করা যায়। জানি প্রথমেই অনেকে মাথা পেতে দেবেন। বলবেন আমরা ছা-পোষা মানুষ, আমাদের ক্ষমতাই কতোটুকু। আরে ভাই গলাটা একটু উঁচু করুন না, নিজের স্বার্থটা ছাড়ুন। ঈদে যাওয়া-ফেরার বাস যাত্রা থেকেই শুরু করুন না। টিকিটের দাম বেশি চাইছে, দশজন মিলে রুখে দাঁড়ান। বলুন নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে নিলে আমরা কেউ উঠবো না, উঠতেও দেবো না। ¯্রফে এটুকুই করে দেখুন, দেখবেন সুড়সুড় করে বাস চলতে শুরু করেছে।

ট্রেনে টিকিট না কেটে উঠার অভ্যাস ত্যাগ করুন। লক্ষ্য নির্দিষ্ট করুন বিকল্প তিনটা দিন ঠিক রাখুন একদিন যেতে না পারলে আরেকদিন যাবেন, সেদিনও না পারলে অন্যদিন। কালোবাজারে টিকিট কিনবেন না। স্টেশনে যান, আরো ক’জন ভুক্তভোগীকে জড়ো করুন। তারপর গলা উঁচু করুন। দেখবেন সমাধান একটা হবেই। তা না করে শুধু নিজের কথা ভাবেন, তাহলে আপনিও একসময় বাটে পড়বেন। এমন বাটে যে, বাট থেকে কেটে উঠার শক্তি আপনার থাকবে না। আমার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ নেই। আমি আমার ছেলে হারিয়েছি। বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনে খুন করা হয়েছে আমার ছেলেকে। লাশ ফেলে রাখা হয়েছে রেল লাইনের ধারে। হ্যাঁ আপনারা জানেন সাংবাদিক ফাগুন রেজার সেই নির্মম হত্যাকা-ের কথা। কই আমি তো বসে নেই। বুক ভেঙে গেছে। মন মানতে চাইছে না। তবু মস্তিষ্ক বলছে যারা বেঁচে আছে, সেসব ফাগুনদের নিরাপদ করতে হবে। দেশটাকে নিরাপদ করতে হবে। আমার ছেলেকে ট্রেনে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা ট্রেনেই ছিলো। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি এমন কারো দ্বারাই সম্ভবত খুনটা করানো হয়েছে। আজকে যদি আমি বা আপনি সচেতন হতাম তাহলে হয়তো এমনটা হতো না। আজকে রেলওয়ের যে অরাজকতা, এর জন্য আমরাও কতকটা দায়ী। ছাদে উঠছি, টিকিট ছাড়া যাচ্ছি।

অবলীলায় ট্রেনে খাবার ফেরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা বাধা দিচ্ছি না। কে জানে হন্তারক হয়তো খাবারওয়ালার ছদ্মবেশে আপনার পিছু নিয়েছে। আপনাকে টার্গেট করেছে ভিখারীর বেশে ছিনতাইকারী বা কোনো ভাড়া করা খুনি। বলতে পারেন এদের তো আমরা ট্রেনে উঠতে দেইনি। ভালো কথা, ব্যর্থতা রেল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু আপনারা মানলেন কেন? কেন ট্রেন থেকে নামিয়ে দিলেন না তাদের? কেন নিজেরা ফেরি করা খাবার কিনে খেলেন? এই কেনর উত্তর কি রয়েছে আপনাদের কাছে? আপনার সন্তান নিখোঁজ হচ্ছে, খুন হচ্ছে, আপনি হয়তো কাঁদছেন, হু হু করা কান্না। কিন্তু অন্যরা তারা কি করছে? না তারা নিজের সন্তান ঘরে ফিরেছে এটাতেই শোকর জানাচ্ছে সৃষ্টিকর্তার কাছে। অথচ সৃষ্টিকর্তাই বলেছেন, প্রতিটি ধর্মে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের সমব্যথী হতে, বিপদের সঙ্গী হতে। জানি আমার এই কথাগুলোও হয়তো বৃথা যাবে। যেখানে সৃষ্টিকর্তার কথাই কেউ শোনেন না, আমি তো কোন ছাড়। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, চালিয়ে যাবো। সুকান্ত যেমন বলে গিয়েছেন, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি’। সুকান্ত তারপর ইতিহাস হতে চেয়েছিলেন। অতোটা দুরাশা আমার নেই। ইতিহাস হবো না জানি। তবু ‘যতোদিন এ দেহে আছে প্রাণ’ অন্তত চেষ্টা করে যাবো’। এই চেষ্টা আমার বাকি ফাগুনদের জন্য।

সবশেষে সাবের ভাইকে বলি আপনিও জানেন, আমিও জানি। কামান, মিসাইল কিংবা প্যাটেন্টওয়ালাদের ড্রোন কোনোটাই শেষ পর্যন্ত কাজে দেবে না, যতোদিন না এ জনপদের ইচ্ছা ঘুম না ভাঙে। যতোদিন না আমরা ঘুরে দাঁড়াই, কথা না বলি। এভাবে চললে সেই কবিতার শেষ লাইনটিই হয়তো সত্য হবে, ‘ঞযবহ ঃযবু পধসব ভড়ৎ সবÍধহফ ঃযবৎব ধিং হড় ড়হব ষবভঃ ঃড় ংঢ়বধশ ভড়ৎ সব’...।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়