শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ০২ জুন, ২০১৯, ০৮:৩২ সকাল
আপডেট : ০২ জুন, ২০১৯, ০৮:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, ঈদ আনন্দ নেই উপকূলীয় জেলেদের মুখে

ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা): সরকারি নিষেধাজ্ঞায় উপকূলীয় এলাকা বরগুনার পাথরঘাটার জেলেরা বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। এ উপজেলার মানুষের একটি বড় অংশই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। মাছের ওপরে নির্ভর করেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা। তাদের মাছ ধরার প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। প্রতি বছর ‘মা ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুমে ২২ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এর পর ঝাটকা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ছয় মাস ধরে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ বছর ইলিশের ভরা মৌসুমে ২০ মে-২৩ জুলাই ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরের অর্থনৈতিক অঞ্চলে সব ধরণের মাছ ধরা সম্পূর্নভাবে নিষেধাজ্ঞার জারি করা হয়। মৎস্যসম্পদ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়েছেন জেলেরা ও বিপণন পেশায় নিয়োজিত বরগুনা উপকূলের লক্ষাধিক পরিবার। এই নিষেধাজ্ঞা উপকূল এলাকায় বসবাসকারী জেলে পরিবারগুলোর আসন্ন ঈদ আনন্দ বেদনায় পরিণত হতে চলেছে। ঈদকে ঘিরে বরগুনাসহ উপকূলীয় জেলে পরিবারগুলোতে নেই কোনও আমেজ।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, বরগুনায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৪শ’ ৪০ জন। কিন্তু সব মিলিয়ে এ জেলায় প্রায় একলাখ জেলে রয়েছে। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রতি মাসে প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। তবে নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ৭ হাজার ৬৪০ জন জেলে এখনও কোনও সহযোগিতার আওতায় আসেনি। এ ছাড়া অনিবন্ধিত জেলেরাও সহযোগিতার আওতায় নেই।

দেশের বৃহত্তম মৎস অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, জেলেরা ট্রলার ঘাটে বেধেঁ রেখে অলস সময় কাটাচ্ছেন। এ সময় জেলেরা বলেন, সাগরে ইলিশ ধরা বন্ধে তাদের একমাত্র আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। ঈদের দিনটিতেও ভালো-মন্দ খাওয়ার সুযোগ হবে না তাদের। ছেলে মেয়েদের গায়েও উঠবে না নতুন জামা-কাপড়। অধিকাংশ জেলে পরিবারই ধারদেনা করে চলছে। শুধু জেলেরাই নন, উপক‚লীয় এলাকার অনেক ট্রলার-মালিকও এখন অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। পাথরঘাটার ‘এফবি মায়ের দোয়া’ ট্রলারের মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, ট্রলার ও জাল মেরামত, জেলেদের অগ্রিম টাকা দেওয়া সহ প্রায় আট লাখ টাকা খরচ করে এখন বসে রয়েছেন তিনি। সাগরে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনিও চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সাধারণ জেলেরা বেকার থাকায় এবং উপার্জনের অন্য কোনও পথ না পেয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা সবার।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহরের দাবিতে পাথরঘাটা ও বরগুনায় জেলেসহ মৎস্যজীবীরা কয়েক দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। পরে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছুতেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি জেলেরা।

পাথরঘাটা উপজেলার রুইতা এলাকার জেলে আবদুল গণি বলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ। কি দিয়ে ছেলে-মেয়েদের জামা কিইন্যা দিমু। এ বছর মোগো ঈদ হইবনা।

বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আ. মান্নান জানান, ভরা মৌসুমে ৬৫ দিন মাছধরা বন্ধ! ‘সরকারের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় বরগুনার প্রায় লক্ষাধিক জেলে ও শ্রমিক বেকার হয়ে দারুন আর্থিক কষ্টে পড়েছেন। তারা খেয়েই বেঁচে থাকতে পারে না, আবার ঈদ করবে কীভাবে। তিনি আরো জানান, ঋণের বোঝায় অনেক বোট মালিক দেউলিয়া হয়ে যাবেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধের এই আইন বাস্তবায়নে মৎস অধিদপ্তর, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় মৎস দপ্তরের উদ্যোগে ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইন ভাঙলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এ সময় জেলেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। ইতি মধ্য ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারগুলোকে বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরগুনায় ৩৯ হাজার ৮শ জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়