শিরোনাম
◈ অবশেষে মার্কিন সিনেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস ◈ কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল চলাচল বন্ধ ◈ ইউক্রেনকে এবার ব্রিটেননের ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা ◈ থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ◈ জিবুতি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে ৩৩ জনের মৃত্যু ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ এফডিসিতে মারামারির ঘটনায় ডিপজল-মিশার দুঃখ প্রকাশ ◈ প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ◈ প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাত চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন নির্বাচিত ◈ বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত : ০২ জুন, ২০১৯, ১২:১৯ দুপুর
আপডেট : ০২ জুন, ২০১৯, ১২:১৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পলাতক দুর্ধর্ষ জঙ্গীদের ছবিসহ বিশেষ তালিকা বিনিময়

নিউজ ডেস্ক :  শ্রীলঙ্কার পর ঢাকায় স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুইবার পুলিশের গাড়িতে জঙ্গী হামলার ঘটনায় আইএসের দায় স্বীকারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে ইতোমধ্যেই কিছু কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। ঈদের ডামাডোলের মধ্যেই গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে হামলাকারী জঙ্গী এবং তাদের নেপথ্য কারিগরদের গ্রেফতার করার উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বেশি মানুষের যাতায়াতের সুযোগ নিয়ে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীরা পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোর চেষ্টা করে। আবার বিদেশে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীরাও ঈদকে উপলক্ষ করে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি নাশকতা চালাতে দেশে প্রবেশ করতে পারে। এমন সুযোগটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ও ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যেই দুই দেশই পলাতক থাকা দুর্ধর্ষ জঙ্গীদের ছবিসহ একটি বিশেষ তালিকা হাতবদল করেছে। দুই দেশেই জঙ্গী গ্রেফতারে কমান্ডো স্টাইলে অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। এছাড়া দুই দেশের কারাগারে থাকা দুর্ধর্ষ অনেক দেশী-বিদেশী জঙ্গীকে জেরা করে জঙ্গীদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।  জনকণ্ঠ।

গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে হস্তান্তরিত হওয়া জঙ্গীদের তালিকা মোতাবেক দুর্ধর্ষ জঙ্গীদের একটি শর্টলিস্ট বা বিশেষ তালিকা করা হয়েছে। জঙ্গীদের গ্রেফতার করতে ইতোমধ্যেই দুই দেশের তরফ থেকেই একটি এ্যাকশন প্লান নির্ধারণ করা হয়েছে। শ্রীলল্কায় ভয়াবহ জঙ্গী হামলা এবং ঢাকায় পর পর দুই বার পুলিশের গাড়িতে জঙ্গী হামলার ঘটনায় আইএসের দায় স্বীকার করার পর বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। আইএস কর্তৃক পাকিস্তানে তাদের হিন্দ প্রভিন্স সদর দফতর স্থাপন এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে ও ভারতে হামলা পরিচালনা করার খবরের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জঙ্গীবাদকে এখন প্রধান ইস্যু হিসেবে নির্ধারণ করেছে। দায়িত্বশীল একজন উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, জঙ্গীবাদ বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের সামনে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ জঙ্গীবাদ ইস্যুকে পুঁজি করেই দেশী-বিদেশী চক্র বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করার কূটকৌশলে নেমেছে। এই কৌশল সফল হলে দুই দেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এরমধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।

যারা গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা এবং আইএসের দায় স্বীকারের ঘটনাটিকে হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করছেন, তারা এর গভীরতা বুঝতে পারছেন না। এর পেছনে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আছে দেশী-বিদেশী চক্রের। মূলত দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করার জন্যই দেশী-বিদেশী চক্র জঙ্গী হামলা করাচ্ছে। যাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক থাকে। দেশে বিদেশী বিনিয়োগ কম হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় বিদেশী বিনিয়োগ তুলনামূলক অনেক কমে যাবে।

সূত্রটি বলছে, সার্বিক বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করার পরই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যাতায়াতের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। তালিকাভুক্ত জঙ্গীদের সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানতে বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গেও রীতিমতো যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। যেটি ইতিপূর্বে হয়নি। অনেক জঙ্গী ভুয়া নামে পাসপোর্ট করে বিদেশে আছে। তারা যেসব দেশে আছে, সেসব দেশের সরকার ওইসব নাগরিকদের ভাল জানে। তাদের কোন দেশে যাতায়াত করতেও বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। এটিও এক ধরনের বড় ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সম্প্রতি জঙ্গীদের মধ্যে সেলফ রেডিক্যালাইজড হওয়ার প্রবণতা বেশি। এটিই মূলত বড় ভয়ের কারণ। তারা সেলফ মোটিভেটেট হয়ে আত্মঘাতী হামলা চালাচ্ছে। এ ধরনের হামলা ঠেকানো খুবই কঠিন ও দুরূহ বিষয়। সেলফ রেডিক্যালাইজড জঙ্গীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ভারতের কাছে যে শর্ট তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে, তাদের প্রকৃত নাম ঠিকানা যাচাই বাছাই করার কাজ চলছে। তালিকাভুক্তদের কারও বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া মাত্র তা ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলদের জানানো হচ্ছে। ভারতও একইভাবে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা তালিকাভুক্ত জঙ্গীদের সম্পর্কে পাওয়া বাড়তি তথ্য সরবরাহ করছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশী অনেক জঙ্গী বেনামে বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে আত্মগোপনে আছে। সেই পাসপোর্ট মোতাবেক, পলাতকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন ইউনিটের কাছে কোন অভিযোগই নেই। অথচ প্রকৃতপক্ষে এসব পলাতকদের প্রায় অধিকাংশই বাংলাদেশের মোস্টওয়ান্টেড আসামি। গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও বেকারিতে জঙ্গী হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী এবং অস্ত্রগোলাবারুদ সরবরাহকারী জেএমবি জঙ্গী হাতকাটা সোহেল মাহফুজ গ্রেফতার হওয়ার পর জঙ্গীদের আত্মগোপনে থাকার এমন নানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর হাতকাটা মাহফুজকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশের পুলিশ। এই জঙ্গী ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর ভারতে নসরুল্লাহ নামে আত্মগোপনে ছিল।

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির আস্তানায় বিস্ফোরণের ঘটনা না ঘটলে হয়তো কোন দিনই মাহফুজের নামও প্রকাশ পেতো না। তাকে গ্রেফতার করাও সম্ভব হতো না। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে গ্রেফতার হওয়া দুই আত্মঘাতী জঙ্গীর স্ত্রীদের দেয়া তথ্য মোতাবেক এবং ভারতীয় গোয়েন্দাদের গভীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশী জঙ্গী নসরুল্লাহ ওরফে হাতকাটা মাহফুজের নাম। ডান হাত না থাকার কারণে তাকে শনাক্ত করতে সহজ হয় বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দাদের। ভারতের মোস্টওয়ান্টেড আসামি নসরুল্লাহকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দিতে সেদেশ ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। মাহফুজের বিষয়ে জানতে ভারতের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ) ও দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) দুইটি দল বাংলাদেশে এসেছিল। তারা ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে মাহফুজের কাছ থেকে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ, ভারতে জেএমবিসহ অন্য জঙ্গী সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক, জঙ্গীদের অর্থায়ন, কোন কোন দেশের কি পরিমাণ জঙ্গী ভারতে ও বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য দেশে আছে তা জানার চেষ্টা করেছে।

পুলিশ সদর দফতরের ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড স্পেশাল এ্যাফেয়ার্স শাখার তথ্য মোতাবেক, ঈদের সময়কে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে জঙ্গীদের গ্রেফতারে বাংলাদেশ ও ভারতে কমান্ডো অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। মালিবাগে ও গুলিস্তানে হামলার ঘটনায় আইএসের দায় স্বীকারের পর এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ও বিদেশে কারাবন্দী থাকা অনেক দেশী-বিদেশী দুর্ধর্ষ জঙ্গীকে নতুন করে জেরা করা হয়েছে।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও বেকারিতে জঙ্গী হামলা, জঙ্গী অর্থায়ন, জঙ্গীদের আত্মগোপন, জামিন, সীমান্তপথে অন্যদেশে পালিয়ে যাওয়াসহ নানা বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আমেরিকা ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত আলোচনা চলছে। ভারত ও আমেরিকার সঙ্গে এসব বিষয়ে বেশ কয়েক দফায় বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে জঙ্গী তৎপরতা ও তাদের অর্থায়নের কৌশলসহ নানা বিষয়াদি সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করা হয়। তাতে ঈদের সময় জঙ্গীদের অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রম, দেশত্যাগ, দেশে প্রবেশসহ নানাভাবে তৎপরতা থাকার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। জঙ্গী অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানী জঙ্গীরা ঈদের সময় জালমুদ্রার ব্যবসা করে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের জেএমবি জঙ্গী ও পাকিস্তানের জঙ্গীদের তৈরি জালমুদ্রা এতটাই নিখুঁত যে, স্বাভাবিকভাবে কোন ব্যাংকারের পক্ষেও ধরা সম্ভব নয়। ভারতের ল্যাবরেটরিতে বাংলাদেশের জেএমবি ও পাকিস্তানী জঙ্গীদের তৈরি করা জালনোটের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এমন তথ্য মিলেছে।

 

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ঈদের সময় সীমান্ত পথে অনেক লোক বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াত করেন। ব্যবসা, চিকিৎসা, বেড়ানো ও ঈদ উপলক্ষে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গী ও পেশাদার অপরাধীরা অন্যদেশে আত্মগোপন ও দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে থাকে। এজন্য তারা ঈদের অনেক আগেই সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে আত্মগোপন করে। এরপর সুযোগ বুঝে দেশে অনুপ্রবেশ বা দেশত্যাগ করার চেষ্টা করে। এমন তথ্যের সূত্রধরেই বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে একসঙ্গে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সীমান্তের অনেক পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

 

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম (সংঘবদ্ধ অপরাধ) নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলছেন, জালমুদ্রার কারবারি এবং এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গী ও অপরাধীদের গ্রেফতার করতে ঈদ একটি মোক্ষম সময়। আমরা এই মোক্ষম সময়টিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অত্যন্ত কৌশলী এসব অভিযান আরও স্বল্প সময়ের মধ্যে এবং ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চালানো হবে।

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়