শিরোনাম

প্রকাশিত : ০১ জুন, ২০১৯, ০৪:১৬ সকাল
আপডেট : ০১ জুন, ২০১৯, ০৪:১৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বস্তুনিষ্ঠতা হারানোর কারণেই বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের প্রক্রিয়া জোরদার হয়েছে

নূর মাজিদ : বিশ্বব্যাপী যখন সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমের প্রধানরা বিভিন্ন কারণে তাদের বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে আপোষ করছেন, ঠিক তখনই গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলোর তৎপরতা বাড়ছে। যার মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করে দেয়া। চলতি সপ্তাহে ডয়েচে ভেলে আয়োজিত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে এশিয়ার শীর্ষ সাংবাদিকেরা বিদ্যমান হুমকি ও এই পরিস্থিতির অবসানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা আলোচনা করেছেন। সূত্র : ডয়েচে ভেলে

সারা বিশ্বের গণমাধ্যমের সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষপটের তুলনা করে তারা জানান, অনেক সময় রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই গণমাধ্যম পাঠক বা দর্শকের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারায়। যা উগ্র-জাতীয়তাবাদি রাষ্ট্রনায়কদের গণমাধ্যম বিরোধী অবস্থান মজবুত করে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী মার্কিন সরকার ব্যবস্থার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤প তীব্র ভাষায় নিজ দেশের গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন। তাদের প্রকাশিত সংবাদকেও তিনি মিথ্যে প্রচারণা বলে উড়িয়ে দেন। এবং সবচাইতে বড় বিষয় হচ্ছে, বিপুল সংখ্যক মার্কিনীও এখন নিজ দেশের গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে সন্দিহান।

যুক্তরাষ্ট্র বাদ দিলে বাকি বিশ্বের পরিস্থিতি আরো নাজুক। সারা বিশ্বজুড়েই ফের একনায়ক্তান্ত্রিক সামরিক শাসন বা উগ্র-ডানপন্থী সরকারগুলো ক্ষমতায় আসছে। অপেক্ষাকৃত উদার ও সহনশীল শাসন কাঠামো থেকে এই ধরনের রাজনৈতিক পালাবদল গণমাধ্যমের ওপর বাড়তি হুমকি সৃষ্টি করেছে। সম্মেলনে বক্তারা আরো জানান, অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানেই গণমাধ্যমের ওপর সবচাইতে বেশি হুমকি কাজ করছে। হুমকি যে শুধু রাষ্ট্রের তরফ থেকে আসছে এমনটা নয়, বরং নানা ধরনের বাণিজ্যিক সংস্থা, অপরাধী এবং সন্ত্রাসী চক্রের তৎপরতা এইক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।এসকল হুমকি অনেক আগে থেকে বিদ্যমান থাকলেও বর্তমান যুগে এগুলোর প্রভাব আরো বেড়েছে। অন্যদিকে, সাংবাদিকতার আদর্শের সঙ্গে আপোষের কারণে পাঠকের সঙ্গেও গণমাধ্যমের নির্ভরতার সম্পর্কে চিড় ধরেছে। এসময়, আপোষহীন ও পক্ষপাতমুক্ত নিরপেক্ষ সংবাদ উপস্থাপনের চিরাচরিত ধারা এই অবস্থায় আংশিক উন্নয়ন আনবে, বলেই অধিকাংশ বক্তা একমত পোষণ করেন।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিকখ্যাতি গণমাধ্যমকর্মী শহিদুল আলম বলেন, শুধু এশিয়ায় নয়, বরং সারা বিশ্বজুড়েই এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশ, হংকং, ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের গণমাধ্যম কর্মীরাও এই বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তারা নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, এখন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থাও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনে নিত্য-নতুন আইন করছে, আর এটাই সবচাইতে বড় আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। কারণ, এতে বিরোধী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়ে যাচ্ছে।

এই বিষয়ে ভারতের বিখ্যাত দৈনিক দ্য হিন্দুর প্রাক্তন স¤পাদক এবং দ্য ওয়্যার অনলাইনের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্ধার্থ ভারাদারাজন বলেন, বিশে¬ষণী বা অনুসন্ধানী সংবাদ সরকার এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ উভয়পক্ষকেই ক্ষিপ্ত করে। আমাদের দেশেও অধিকাংশ গণমাধ্যম সরকারের সুরেই কথা বলতে পছন্দ করে। তারা নিজেদের আরোপিত সেলফ সেন্সর নিয়েও সুখী। এই বিষয়ে তাদের কোন বিবেকের তাড়না নেই। অন্যদিকে, যেসকল সাংবাদিকেরা সত্য সংবাদের অনুসন্ধানে লিপ্ত তারা নানা ধরনের হয়রানিমূলক মামলার শিকার হচ্ছেন। এই ধরনের হয়রানির কারণেই প্রভাবশালী মহলের ত্রুটি অনেকাংশে কেটেছেটে সংবাদ পরিবেশনে বাধ্য হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়