আমিন মুনশি : মাহে রমজানের শেষ জুমার দিন ‘জুমাতুল বিদা’ নামে পরিচিত। এদিন রমজান মাসের শেষ জুমা হিসেবে ‘আল কুদস দিবস’ও পালিত হওয়ায় এর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। সাপ্তাহিক জুমার নামাজ মুসলমানদের বৃহত্তর জামাতে অনুষ্ঠিত হয়। রমজান মাসের জুমাবার আরও বেশি গুরুত্ব বহন করে। এক মাসের সিয়াম সাধনা শেষে মুসলিম মনে ঈদুল ফিতরের যে আনন্দ আসে তারই বার্তা জানান দেয় জুমাতুল বিদা।
প্রতি সপ্তাহের জুমা দিবসে মুসলিম মনে এক নয়া জাগরণ সৃষ্টি হয়। ইসলামে জুমাতুল বিদা’র সরাসরি গুরুত্ববহনকারী কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও একে কেন্দ্র করে মানুষের হৃদয়ে আনন্দ বয়ে যায়। কোনো কোনো মানুষের ধারণা, জুমাতুল বিদা’র বিশেষ ফজিলত রয়েছে। তারা এ জুমাকে খুব গুরুত্ব দেয় এবং একে শরিয়ত-নির্দেশিত ফজিলতপূর্ণ দিবস-রজনীর অন্তর্ভুক্ত মনে করে। ফলে এ জুমা আদায়ের জন্য পারতপক্ষে এলাকার সবচেয়ে বড় মসজিদে গমন করে। সাথে সাথে এ জুমায় মুসল্লির সমাগমও বেশি হয়। কিন্তু শরিয়তে ‘জুমাতুল বিদা’ বলে আলাদা ফজিলতের কিছু নেই। এটি একটি নব আবিষ্কৃত পরিভাষা। এর কোনো বিশেষ ফজিলত কুরআন-হাদিসে পাওয়া যায় না। বরং এটি রমজানের অন্যান্য জুমার মতই ফজিলত রাখে; বাড়তি কোনো ফজিলত এ সম্পর্কে প্রমাণিত নয়।
এ কথা ঠিক যে, জুমার দিন একটি ফজিলতপূর্ণ দিবস। সাথে সাথে রমজানের জুমার দিন হিসেবে তার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। তাই বলে ‘হাজ্জাতুল বিদা’-এর সাথে মিল রেখে ‘জুমাতুল বিদা’ নামকরণ এবং এর বাড়তি প্রচার-প্রচারণার কোনো ভিত্তি নেই। ঐ দিবস-রজনীকেই আমরা ফজিলতের দিবস-রজনী মনে করবো, কুরআন-হাদিসে যার বিশেষ কোনো ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। সাথে সাথে কিছু মানুষের মাঝে রমজানের শেষ জুমাকেন্দ্রিক আরেকটি মনগড়া আমলেরও প্রচলন রয়েছে। তা হলো, এদিন নাকি বিশেষ পদ্ধতিতে চার রাকাত নামাজ আদায় করলে তা সারা জীবনের কাজা নামাজের কাফফারা হবে! এ বর্ণনা ও আমল সবই জাল ও বাতিল। আল্লামা শাওকানী (রাহ.) তার জাল হাদীস বিষয়ক রচনা ‘আলফাওয়াইদুল মাজমুআহ’তে রমজানের শেষ জুমার নামাজ বিষয়ে আরেকটি জাল বর্ণনা উল্লেখ করেছেন- ‘এদিন যে ব্যক্তি সারা দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ (গুরুত্বের সাথে) আদায় করবে, এর দ্বারা তার সারা বছরের ছুটে যাওয়া নামাজের কাজা আদায় হয়ে যাবে।’ এটি উল্লেখ করার পর তিনি বলেন- ‘প্রশ্নাতীতভাবে এটি একটি জাল বর্ণনা।’ -(আলফাওয়াইদুল মাজমূআহ, বয়ান : ১১৫)