ডেস্ক রিপোর্ট : নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে খুলনার বিভিন্ন নদীর তীরে ও চরে গড়ে উঠেছে প্রায় দেড়শ’ ইটভাঁটা। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এই ইটভাঁটাগুলো মানছে না পরিবেশ আইন। প্রাণ হারাচ্ছে নদীগুলো। জনকণ্ঠ
নদীর চরে গড়ে ওঠা ইটভাঁটাগুলো ক্রমান্বয়ে নদীকে গিলে ফেলছে। বেশ কিছুর নেই লাইসেন্স। আর লাইসেন্সধারী ইটভাঁটার এক শ্রেণির মালিকও নিয়ম লঙ্ঘন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যেগুলো লাইসেন্সবিহীন সেখানে তো আইন-কানুনের কোনো বালাই নেই।
ইটভাঁটাতে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ও নির্দিষ্ট মাপের চিমনির ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। কাঠ দিয়ে কাঁচা ইট পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন ভাঁটাতে। চর দখল করে স্থাপিত ইটভাঁটার কারণে নদী সঙ্কুচিত হচ্ছে। গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় ইটভাঁটার ওপর পাড় ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হচ্ছে। ভাঁটার দূষিত গ্যাস ও ধুলোবালির কারণে আশপাশের এলাকার জনস্বাস্থ্য, গাছপালা এবং ফসলের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন বিভিন্ন উপজেলায় মোট ১১৭ ইটভাঁটার লাইসেন্স দিয়েছে। এর মধ্যে রূপসায় ৪৯, ডুমুরিয়ায় ২৭, ফুলতলায় ১৩, পাইকগাছায় ১১, তেরখাদায় ছয়টি, বটিয়াঘাটায় চারটি, দিঘলিয়ায় তিনটি এবং দাকোপে একটি ইটভাঁটির অনুমোদন রয়েছে। তবে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলায় ইটভাঁটা রয়েছে ১৪০টির অধিক। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নেই কয়েকটির।
লাইসেন্সবিহীন ইটভাঁটার মালিকরা প্রভাবশালী। তারা ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন উপেক্ষা করে ইট তৈরি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বৈধ ইটভাঁটার মালিকদের মধ্যেও প্রভাবশালী ব্যক্তি আছেন। তারাও যথাযথভাবে আইন মানছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
খুলনার রূপসা উপজেলার আঠারোবেকি নদীর তীর ও চর দখল করে অনেক ইটভাঁটা গড়ে উঠেছে। রূপসায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দুটি ভাঁটিতে কিছুদিন আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আবার সেখানে ইট তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এ উপজেলায় অর্ধশতাধিক ইটভাঁটি রয়েছে। রূপসা ও তেরখাদা উপজেলার শোলপুর, মল্লিকপুর ও মোকামপুর গ্রাম এলাকায় ভৈরব নদ এবং আতাই নদীর তীরেও সাতটি ইটভাঁটা গড়ে উঠেছে। এর অধিকাংশই লাইসেন্সবিহীন। রূপসা উজেলার ভৈরব নদের তীরে লাইসেন্সবিহীন দুটি ইটের ভাঁটা ভৈরবের সীমানা গ্রাস করেছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, কেবিসি এবং এনকেবিসি নামের দুটি ইটভাঁটা ভৈরবের কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ ফিট জায়গা দখল করে ময়লা ফেলে সীমানা আটকে দিয়েছে। তৈরি করেছে ছোট ছোট ঝুপড়ি। ওই নদীর চরে কয়েকটি চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হচ্ছে। ভেকু দিয়ে এই অবৈধ স্থাপনা ও চুল্লিগুলো গুড়িয়ে দেয়া হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর সীমানা দখল করে ২৭ ইটভাঁটি গড়ে উঠেছে। এগুলো উচ্ছেদে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠনো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :