স্বপ্না চক্রবর্তী : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্যবহার করে সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে জাপান টোব্যাকো কোম্পানি আইন ভঙ্গের পাশাপাশি তরুণদের তামাক ব্যবহারে আকৃষ্ট করতে অপচেষ্টা শুরু করেছে। কোম্পানিগুলোর এই আগ্রাসী কার্যক্রম সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের প্রতি চ্যালেঞ্জ। আইন ভঙ্গ করে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রদানের দায়ে জাপান টোব্যাকো কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারের আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ২১টি সামাজিক সংগঠন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত এই ২১টি সংগঠনের প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একই দাবিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। সারা দেশেও জেলা প্রশাসকদের কাছে স্মারকলিপি দেন স্থানীয় তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘জাপানিজ কোয়ালিটি’ স্লোগান, বিক্রয়কর্মীদের পোশাক ও ভ্যানগাড়িতে কোম্পানির ব্র্যান্ড কালার ও লোগো ব্যবহার করছে জাপান টোব্যাকো কোম্পানি। এছাড়াও জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন নির্মিত অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রচার এবং সংশ্লিষ্ট ভিডিও বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। যা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনের ধারা-৫ ভঙ্গের প্রেক্ষিতে এক (১) লাখ টাকা জরিমানা এবং তিন (৩) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে র বিধান রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, এ সময়ের জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী তাহসান তামাক কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত এ সকল কার্যক্রমে যুক্ত আছেন। অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, রাষ্ট্রের আইন লংঘন করে জনপ্রিয় একজন শিল্পীর এ ধরনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা তরুণ প্রজন্মকে তামাকজাত পণ্য সেবনে উদ্বুদ্ধ করবে। দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পীদের গণমানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকা প্রয়োজন। শিল্পীকর্মীদের জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো পণ্যের প্রসার বা ব্র্যান্ড প্রমোশনে কাজ করা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সমাবেশে তাহসান খানকে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে এই কর্মকাÐ থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ারও আহবান জানানো হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে জাপান টোব্যাকোসহ সকল তামাক কোম্পানির প্রচারণা কার্যক্রম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংগঠনগুলো, অনতিবিলম্বে জাপান টোব্যাকোর প্রচার-প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া, প্রতিটি এলাকায় পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ডেলিভারি ভ্যানসহ নানাভাবে যেসব বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে তা সাতদিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেয়া, আইন লঙ্ঘন করে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে জাপান টোব্যাকো কোম্পানি, কোম্পানির এজেন্ট/ডিলার/স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা এবং দ্বিতীয়বার একই অপরাধের ক্ষেত্রে আইন অনুসারে দ্বিগুণ জরিমানা নিশ্চিতের দাবিও জানান বক্তারা।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, তাবিনাজের সমন্বয়কারী সাঈদা আখতার, দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের কান্ট্রি ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন শেখ, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের প্রোগ্রাম অফিসার আতিউর রহমান মাসুদ, নাটাবের প্রকল্প সমস্বয়কারী একেএম খলিলুল্লাহ, ইপসার কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হায়দার, ডবিøউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান প্রমুখ।
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়
আপনার মতামত লিখুন :