তানজিনা তানিন : গত দুই মাসে পর্যায়ক্রমে দেশের পাঁচটি ডিপোর অধীনে থাকা এসব বাসের ইজারা বাতিল করে সংস্থাটি। একই কারণে আরো বেশ কয়েকটি বাসের ইজারা বাতিল করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিআরটিসির কর্মকর্তারা। বণিক বার্তা
বিআরটিসির বাস ইজারা নীতিমালা ২০০৭ অনুযায়ী, কোনো গাড়ি ইজারা নেয়ার সময় ১৫ দিনের রাজস্ব করপোরেশনে অগ্রিম জমা দিতে হবে। এর সাতদিন পর আরো সাতদিনের অগ্রিম রাজস্ব জমা দিতে হবে এবং প্রতি সাতদিন পরপর একইভাবে রাজস্ব প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। এর বাইরে নীতিমালায় আরো ৬১টি ধারা রয়েছে, যেগুলোয় বিআরটিসির বাস পরিচালনা সম্পর্কিত বিভিন্ন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাসগুলো সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, তৃতীয় পক্ষকে ইজারা না দেয়া, নির্ধারিত রুট বাদে অন্য রুটে চলাচল না করা, পিক আওয়ার ছাড়া (শহর এলাকায়) সিটের অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা, যাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা, বেআইনি/অবৈধ মালামাল পরিবহন না করা, চালক ও কর্মীদের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম ব্যবহার ইত্যাদি। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে নীতিমালা অনুযায়ী ইজারা বাতিল ও ইজারা গ্রহীতার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে বিআরটিসি।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শর্ত ভঙ্গ ও রাজস্ব পরিশোধ না করায় বিআরটিসির কল্যাণপুর ডিপো থেকে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাসের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। কল্যাণপুর ডিপো থেকে সব মিলিয়ে ইজারা বাতিল হয়েছে ১৯টি বাসের।
ঢাকার বাইরের ডিপো থেকেও বাসের ইজারা বাতিল করেছে বিআরটিসি। বগুড়া ডিপোর অধীনে থাকা ছয়টি বাসের ইজারা বাতিল হয়েছে। একইভাবে বিআরটিসির দিনাজপুর ডিপো থেকেও একটি বাসের ইজারা বাতিল হয়েছে।
এর মধ্যে ইজারার শর্ত ভঙ্গ ও বকেয়া রাজস্বের দায়ে হাসান আলী মন্ডলের বিরুদ্ধে বগুড়া জেলায় একটি মামলা করেছে বিআরটিসি। একইভাবে রাজস্ব জমা না দেয়ায় অন্য ইজারাদারদের বিরুদ্ধেও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থাটি।
ইজারা বাতিল হওয়া বাসগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, যেসব ইজারাদার দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া পরিশোধ করতে পারেননি, তাদের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থতার পাশাপাশি এসব বাসের ইজারাদাররা বিভিন্ন সময় লিজের শর্তও ভঙ্গ করেছেন। রাজস্ব জমা দেননি, এমন ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিআরটিসির অপারেশন শাখার তথ্য বলছে, পুরনো বাসগুলোর মধ্যে বর্তমানে সচল বাসের সংখ্যা ৮৮৯টি। এর মধ্যে মেরামতযোগ্য অবস্থায় রয়েছে ৭০টি বাস। এর বাইরে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় কেনা হচ্ছে ৬০০ নতুন বাস। এরই মধ্যে নতুনগুলোর ২৫৩টি বিআরটিসির বহরে যুক্ত হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই বহরে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন বিআরটিসির কর্মকর্তারা।
বিআরটিসির বাস ইজারা নেয়ার ক্ষেত্রে নিয়মিত রাজস্ব জমা দেয়ার পাশাপাশি বাসের ধরন অনুযায়ী জামানতও দিতে হয় ইজারাদারদের। এক্ষেত্রে যেসব বাসের বয়স এক বছরের কম, সেগুলোয় সংগ্রহ মূল্যের ২০ শতাংশ হারে জামানত দেয়ার নিয়ম। একইভাবে দুই বছরের কম বয়সী বাসের ক্ষেত্রে সংগ্রহ মূল্যের ১৫ শতাংশ, তিন বছরের কম বয়সী বাসের ক্ষেত্রে সংগ্রহ মূল্যের ১০ শতাংশ, চার বছরের কম বয়সী বাসের সংগ্রহ মূল্যের ৮ শতাংশ ও পাঁচ বছরের কম বয়সী বাসের ক্ষেত্রে সংগ্রহ মূল্যের ৫ শতাংশ জামানত দিতে হবে। যেসব বাসের বয়স পাঁচ বছরের বেশি, সেগুলোর ক্ষেত্রে রিজার্ভ মূল্যের ২৫ শতাংশ হারে জামানত দেয়ার নিয়ম।
আপনার মতামত লিখুন :