বাংলা ট্রিবিউন : ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল লক্ষ্য (ভিশন) বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। নিজস্ব অর্থ ও সামর্থ্যে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে বাংলাদেশ। মূলত এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়া এখন বিশ্বাস করে যে, উন্নতমানের প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয় করার সামর্থ্য রয়েছে বাংলাদেশের।
অতীতে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও এখন দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বৈঠকে নিয়মিতই বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। গত ৮ এপ্রিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এর সঙ্গে বৈঠকের পর স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র মর্গান অর্টাগাস বলেন, ‘বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও দেশটির সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।’
পম্পেও গত বছরের জুনে বাংলাদেশের সমুদ্র নিরাপত্তার জন্য চার কোটি ডলার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ঘোষণা করেন।এই অর্থ ব্যয়ের প্রক্রিয়া এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কূটনীতিক বলেন— প্রতিরক্ষা সামগ্রী কেনার বাস্কেট (দেশ অর্থে)) বাড়ানোর তাগিদ বাংলাদেশের আছে। কারণ, দেশটি শুধুমাত্র একটি দেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না।’
এর আগে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে মিগ-২৯ এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফ্রিগেট ক্রয় করেছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব থেকে গুনগত মানসম্পন্ন পণ্য কেনার পরিমাণ অত্যন্ত কম বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তার আর্থিক সামর্থ্য প্রদর্শনের পর অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছে। কারণ, তারা এখন বিশ্বাস করে যে, ঢাকা উন্নত ও মানসম্পন্ন পণ্য ক্রয়ের ক্ষমতা রাখে।’
পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্ব ব্যাংক সরে দাঁড়ানোর পর বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। এটি বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়ে পশ্চিমা দুনিয়াকে বার্তা দিচ্ছে।’
যেকোনোও বড় ধরনের প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয় সাধারণত ন্যূনতম ১০০ কোটি ডলারের মতো হয়ে থাকে এবং ওয়াশিংটন এখন মনে করে, ঢাকা এ পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতা রাখে বলে জানান এই কূটনীতিক।
তিনি আরও জানান,বাংলাদেশকে গত কয়েক বছরে কয়েকটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াশিংটন। সেসব প্রস্তাব এখন ঢাকার বিবেচনাধীন আছে।
প্রতিরক্ষার বিভিন্ন চুক্তি
অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা) এবং জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) করার জন্য বাংলাদেশকে এরইমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আকসা চুক্তিটি হচ্ছে মানবিক সহায়তা ও যৌথ মহড়া সংক্রান্ত এবং এটি সম্পূর্ণভাবে নন-কমব্যাটান্ট।’
শ্রীলঙ্কা ও ভারতসহ অনেক দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই চুক্তি আছে বলে জানান তিনি।
জিসোমিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই চুক্তির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে— যদি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র গোপনে মিলিটারি তথ্য আদান-প্রদান করে, তবে ওই তথ্য অন্য আর কোনও দেশ বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না।’
উল্লেখ্য,ইরানসহ বিশ্বের ৭৮টি দেশের সঙ্গে ধরনের চুক্তি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
বাংলাদেশ সরকারের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আশা করছি, আগামী মাসে (জুনে) দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের পার্টনারশিপ ডায়ালগে এ চুক্তিগুলোর বিষয়ে আলোচনা হবে।’
পার্টনারশিপ ডায়ালগ
পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক আগামী ১০ জুন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হ্যালের সঙ্গে ওয়াশিংটনে সপ্তম পার্টনারশিপ ডায়ালগে বসবেন। আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরপরই দুদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য গত জানুয়ারিতে পররাষ্ট্র সচিবকে যুক্তরাষ্ট্র পাঠান।এরপর এপ্রিল মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ওয়াশিংটন সফর করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব হক বলেন, ‘এটি একটি নিয়মিত বৈঠক এবং এর আগে আমরা ছয়টি বৈঠক করেছি। এখানে আমরা ব্যবসা-বিনিয়োগসহ রোহিঙ্গা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদির সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করি।’
ওয়াশিংটন আমাদের বন্ধু এবং দেশটির সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যুতে আমাদের নিয়মিত আলোচনা হয় বলেও তিনি জানান।