আমিন মুনশি : মাহে রমজানে অনেক শিশুদের রোজা পালন করতে দেখা যায়। অনেকটা উৎসাহ নিয়েই তারা রোজা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করে। যদিও ছোট শিশুদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ নয় কিন্তু শিশুকালে রোজা পালনে রয়েছে অনেক সওয়াব ও উপকারিতা। শিশুদের রোজা রাখার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, অল্প বয়স থেকে রোজা রাখার অভ্যাস গঠন হয়; বড় হলে তাকে রোজা পালনে কোনো প্রতিবন্ধতার মুখোমুখি হতে হয় না।
প্রত্যেক মা-বাবার দায়িত্ব হলো, সন্তানকে পর্যাপ্ত ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দেয়া। পাশাপাশি আমল ও ইবাদতের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে তোলা। সাহাবায়ে কেরাম তাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকে নামাজ-রোজায় অভ্যস্ত করাতেন, যেন তারা এই মহান ইবাদত পালনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সন্তানকে উত্তম গুণাবলি ও ভালো কাজে অভ্যস্ত বানানোর জন্য মহানবী (সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। নামাজ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজ আদায়ের আদেশ করো। এ ব্যাপারে অবহেলা করলে ১০ বছর বয়সে তাদের প্রহার করো এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)
শিশুদের রোজার অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে- রুবাই বিনতে মুআব্বিজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘আশুরার সকালে আল্লাহর রাসূল (সা.) আনসারদের সব পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি সাওম (রোজা) পালন করেনি, সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে; আর যার সাওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সাওম পূর্ণ করে। তিনি (রুবাই) (রা.) বলেন, পরবর্তী সময় আমরা ওই দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের সাওম পালন করাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কান্না করলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেতো। (বুখারি শরিফ : ১৯৬০; মুসলিম শরিফ : ১১৩৬)
ইমাম বুখারি (রহ.) সহিহ বুখারি শরিফে একটি অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন ‘সাওমুস সিবয়ান’ বা শিশুদের রোজা। এ অনুচ্ছেদের অধীনে তিনি হজরত ওমর (রা.)-এর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ওমর (রা.) রমজান মাসে এক নেশাগ্রস্ত লোককে বলেছিলেন, ‘তোমার জন্য আফসোস! আমাদের ছোট শিশুরা পর্যন্ত রোজাদার! (অথচ তুমি রোজা রাখো না)।’ এরপর ওমর (রা.) তাকে প্রহার করেন। এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ইবনে সিরিন, ইমাম জুহুরি ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)সহ পূর্ববর্তী বহু মনীষী শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানোকে মুস্তাহাব ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মতে, নামাজের মতো সাত থেকে ১০ বছরের শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানো যায়। (ফাতহুল বারি : ৫/৩) আলেমদের কেউ কেউ এ সময়কে ১০ বছর বয়স থেকে নির্ধারণ করেছেন।
সময় ভেঙে ভেঙেও শিশুদের রোজা রাখানো যায়। যেমন, প্রথমে কিছুদিন ঠিক দুপুরে পানাহার করিয়ে পরে মাগরিবের সময় ইফতার করানো। এভাবে শিশুরা রোজা পালনে অভ্যস্ত হয়। তবে রোজা রেখে কোনো শিশু যদি একেবারে কাতর বা দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে দেরি না করে তার রোজা ভেঙে ফেলতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :