আমিন মুনশি : রোজার জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত না করলে রোজা হবে না। অন্তরের দৃঢ় সংকল্পকে নিয়ত বলা হয়। মুখে বলা জরুরি নয়। এ সম্পর্কে আল্লামা শামি (রহ.) লিখেছেন, ‘আভিধানিক সূত্রে নিয়ত হলো ‘আজম’ আর আজম বলা হয়- মনের দৃঢ় সংকল্পকে।’ (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/৯০) নিয়ত রোজার রোকন তথা শর্ত। আর ইবাদতের সওয়াবও নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। হাদিস শরিফে আছে, ‘সকল আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (সহিহ বোখারি)
নিয়তের ক্ষেত্রে সাধারণত আমরা দুই ধরনের ভুলের শিকার হয়ে থাকি। যেমন- ১. কেউ কেউ নিয়তের শব্দগুলো শুধু মুখে উচ্চারণ করেন; অন্তরে সংকল্প করেন না। ২. আবার অনেকে নিয়তের শব্দগুলো মুখেও উচ্চারণ করেন না; অন্তরেও কোনো কল্পনা উপস্থিত করেন না। তার মানে নিয়ত ফরজ হওয়ার কথা তিনি জানেনই না। এই দুই শ্রেণির কারো রোজাই হবে না। দলীল- ‘নিয়তের ক্ষেত্রে অন্তরের সুদৃঢ় কর্মতৎপরতা গ্রহণযোগ্য। কাজেই শুধু মুখের উচ্চারণ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, যদি তা অন্তরের কথার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়। কেননা, শুধু মুখের উচ্চারণকে কথা বলা হয়; নিয়ত বলা হয় না।’ (আদ-দুররুল মুখতার: ২/৯১)
নির্ভরযোগ্য ফিকহি উদ্ধৃতিসহ নিয়ত সংক্রান্ত কিছু মাসয়ালা হলো- ফরজ রোজার নিয়ত রাত বাকি থাকতেই করা উত্তম। উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফসা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১/৩৩৩) এই হাদিসকে ভিত্তি ধরে ইসলামি স্কলাররা বলেন, দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত করা না হয়ে থাকলে সেই রোজা সহিহ হবে না। এরপরও রোজাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানুল মোবারকের সম্মানবিরোধী বলে তা জায়েজ নয়। (সূত্র : ইমদাদুল ফাতাওয়া: ১/১৭৩)
নফল রোজা, নির্দিষ্ট মানতের রোজা এবং রমজানের রোজাসমূহের নিয়ত রাতের বেলা অথবা শরিয়তের ঘোষিত দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত করা গেলেও অন্য সব ধরনের রোজার জন্য রাতেই নিয়ত করে নেওয়া জরুরি। (ফাতাওয়া দারুল উলুম: ৬/৩৪৬)
মাসয়ালা : রমজানের প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। একদিন নিয়ত করলে পুরো রমজানের জন্য তা যথেষ্ট নয়। (ইলমুল ফিকাহ: ৩/১৮) কারণ, প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। রাতের বেলায় মনে মনে রোজা রাখার ইচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়লে তার জন্য পুনারয় নিয়ত করার প্রয়োজন নেই।
মাসয়ালা : রমজান মাসে সেহরি খাওয়াটাও রোজার নিয়ত বলে গণ্য হবে। তবে সেহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকাহ: ১/৮৮১)
মাসয়ালা : নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন- রোববারে রোজার নিয়ত শনিবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। শনিবার সূর্যাস্তের পূর্বে রোববারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদিস শরিফে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। হাদিসে আছে, হজরত হাফসা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তার রোজা নেই, যে রাতে নিয়ত করেনি।’ (মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে আবু দাউদ)
আপনার মতামত লিখুন :