শিরোনাম
◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী 

প্রকাশিত : ২০ মে, ২০১৯, ০৩:১৪ রাত
আপডেট : ২০ মে, ২০১৯, ০৩:১৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টাঙ্গাইলে ধান চাষে বিঘা প্রতি কৃষকের ঘাটতি ১১ হাজার টাকা!

অলক কুমার দাস, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের কৃষকদের প্রতি এক বিঘা (৫৬ শতাংশ) জমিতে ইরি-বোরো আবাদে প্রায় ১১ হাজার টাকা করে ঘাটতি হচ্ছে বলে কৃষকদের দাবি। এতে করে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এদিকে শ্রমিক সংকট, শ্রমিকের দাম বেশি এবং ধানের দাম কম থাকায় টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের পাকা ইরি-বোরো ধান এখনও জমিতেই পড়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এদিকে জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা এলাকার আব্দুল মালেক ও বাসাইল উপজেলার কাশিল গ্রামের নজরুল ইসলাম খান তাদের নিজ পাকা ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানান।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ইরি-বোরো চাষে এক বিঘা (৫৬শতাংশ) জমি প্রস্তুত করতে ৬ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ওই সময় শ্রমিকের মূল্য থাকে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে। ট্রাক্টর বাবদ খরচ হয় প্রায় ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। বীজ ও বীজ তলা প্রস্তুত করতে শ্রমিকের মূল্যসহ প্রায় ১৫শ’ টাকা খরচ হয়। ধানের চারা রূপন করতে ৮ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এই ৮জন শ্রমিকের খাবারসহ প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এরপর ধান ক্ষেত থেকে ঘাস পরিস্কার (নিরানী) করতে ৪ জন শ্রমিক লাগে। এই ৪ জন শ্রমিকের খাবারসহ ২৫শ’ টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে। ধান কাটতে ১০ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ধান কাটার শ্রমিকের মূল্য এই সময়ে প্রতিজন ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা পর্যন্ত থাকে। এই ১০ জন শ্রমিকের খাবারসহ প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।

অপরদিকে সার বাবদ প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে বীজ তলা প্রস্তুতসহ কৃষকের সোলানী ধান গোলায় তুলতে প্রায় ৩০ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। আর এই ৩০ জন শ্রমিকের খাবারসহ সব মিলিয়ে কৃষকের খরচ হচ্ছে ২৭ হাজার টাকার ওপরে। এদিকে ওই এক বিঘা (৫৬ শতাংশ ) জমিতে ধান হচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ মণ করে। আর ভালো ফলন হলে ৩০ মণও হয়। ধানের বর্তমান মূল্য ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা করে। ৫৫০ টাকা হিসেবে ২৮ মণ ধানের মূল্য ১৫৪০০ টাকা। কৃষকের ২৭ হাজার টাকা খরচ হলে এক বিঘা (৫৬ শতাংশ) জমিতে কৃষকের প্রায় ১১ হাজার টাকা করে ঘাটতি হচ্ছে।

বাসাইল উপজেলার কলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর, শ্রমিক ও সারের খরচ বাবদ প্রায় ২৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে ২৬ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত ধান হয়। এবার ধানের দাম কম। তাই আমার প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১০ হাজার টাকা করে ঘাটটি হবে।
ধান ক্ষেতে আগুন দেয়া বাসাইলের কৃষক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ধান কাটার শ্রমিকের মূল্য প্রায় এক হাজার টাকা। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৫শ’ টাকা করে। এছাড়াও ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ চিটা হয়ে শুকিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রায় ৫৬ শতাংশের ধান কেটেছি। এই ৫৬শতাংশ জমিতে মাত্র ৪মণ ধান হয়েছে। এক বিঘা (৫৬শতাংশ) জমিতে আমার প্রায় ২৫হাজার টাকার ঘাটতি হয়েছে। তাই দিশেহারা হয়ে ২০ শতাংশ পাকা ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেই। পরে স্থানীয়রা এসে আগুন নিভিয়ে দেয়। আমি এবার ১২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এর ৮ বিঘা জমির ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে চিটা হয়েছে। এবার আমার বোরো আবাদে অনেক টাকা ঘাটতি হবে।’

ধান ক্ষেতে আগুন দেয়া কালিহাতীর কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ধান কাটতে শ্রমিককে দিতে হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ধান কেটে বাড়িতে আনতে এক মণ ধানের মূল্য প্রায় এক হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে। ধান বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ৫শ’ টাকা করে। প্রতিমণে ঘাটতি পড়ছে ৫শ’ টাকা করে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষেতে ধান পাকলেও তা ঘরে তুলতে পারছিলাম না। তাই দিশেহারা হয়ে এক দাগের ৫৬ শতাংশের ধানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম। পরে শিক্ষার্থীর এসে ধান কেটে দিয়েছে।

একাধিক কৃষকেরা জানান, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার কারণে শ্রমিকের দামও বেড়ে গেছে। তারা শ্রমিকের বিকল্প হিসেবে ধান কাটা ও মাড়াই যন্ত্র প্রতিটি এলাকায় দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। সরকার প্রতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে ধান নেয়ার জন্য বললেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ধানগুলো গোডাইনে তুলছেন। এরফলে কৃষকরা সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা সরকারকে কৃষকদের প্রতি সুদৃষ্টি দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন শ্রমিকের মূল্য বেশি। আর বাজারে ধানের মূল্য ৫শ’ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এই সময়ে ধানের বাজার কিছুটা কম থাকলেও কৃষক যদি ধান সংরক্ষণ করে রাখে তবে ক’দিন পরেই অধিক মূল্য পাবে। এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে বলেও তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়