শিরোনাম
◈ তিন মাসের মধ্যে সালাম মুর্শেদিকে বাড়ি ছাড়তে হবে: হাইকোর্ট  ◈ সরকারের হাত থেকে রক্ষা পেতে জনগণকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: বিএনপি ◈ সরকারের ফাঁদে পা দেইনি, দল ছাড়িনি, ভোটেও যাইনি: মেজর হাফিজ ◈ আমার একটাই চাওয়া স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ জিম্মি জাহাজ উদ্ধারে অভিযান নয়, আলোচনা চায় মালিকপক্ষ ◈ বিএনপিকে আমরা কেন ভাঙতে যাবো, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের  ◈ হলমার্ক মামলায় তানভীর-জেসমিনসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন ◈ ভোরে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত ২০ ◈ রাখাইনে আরো একটি শহর দখল করেছে আরাকান আর্মি ◈ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির অভিযোগ, দেশে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজউক

প্রকাশিত : ১৯ মে, ২০১৯, ১০:৩৭ দুপুর
আপডেট : ১৯ মে, ২০১৯, ১০:৩৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিবাহকাল

সাকুর মজিদ :  ১৯৯৩ সালটা বুয়েট জীবনে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এ বছরের ১৩ মে তারিখে বিয়ে করে ফেলি। আমি তখনো মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাস। এই নভেম্বরের থিসিস পার হলে আমি বি-আর্ক হবো। ব্যাচেলর অফ আর্কিটেকচার। এটা স্নাতক পর্যায়ের ডিগ্রি। যিনি আমার স্ত্রী হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে এমফিলএ ভর্তি হয়ে আছেন, বিসিএসও দিয়ে দিয়েছেন। তার পরিবার থেকে চাপ। নানা রকমের ছেলেরা তাকে দেখতে আসছে। তিনি পরিবারকে বলে দিয়েছেন, তার আছে। পরিবার বলছে, তাহলে বিয়ে করো, ছেলে কী করে? ছেলে ভালো। মেধাবী। বুয়েটে পড়ে, সাংবাদিকতা করে। পরিবার সাংবাদিকের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যান। ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করার অনেক সুবিধা। খরচাপাতি নেই। বিয়ে করে এসে ক্লাসের ছেলেমেয়েদের একদিন শিঙ্গাড়া খাওয়ালাম। ব্যাস।

বিয়ের তারিখ দুইবার পেছানো হলো। প্রথম তারিখ ছিলো এপ্রিল মাসের এক বৃহস্পতিবার। কিন্তু তার আগেরদিন পূর্ণ দিবস হরতাল ডাকা হয়েছে। তাই সেদিন বাদ। ঠিক হলো পরের বৃহস্পতিবার। এর মধ্যে আগের হরতালের কারণে আমাদের একটা মিডটার্ম পরীক্ষার তারিখ পড়েছে সেই বৃহস্পতিবার পরের রোববার। ঠিক হলো, পরীক্ষার পরের যে বৃহস্পতিবার সেদিন বিয়ে করা যাবে। বিয়ের তারিখ অবশেষে ঠিক হলো ১৩ মে, ১৯৯৩। আমি ১১ মে বিকালবেলা বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম।

আমার সঙ্গে বড় এক স্যুটকেসে বিয়ের বাজার। যিনি এগুলো ব্যবহার করবেন, তিনি নিজ অর্থে, নিজ দায়িত্বে এগুলো কিনেছেন, আমি তা খুলেও দেখিনি। আমি শুধু বহন করে বাড়ি নিয়ে এসে দুইদিন পর বিবাহ আসরে আবার তার কাছেই সেগুলো পৌঁছে দেবো। বিয়ে করতে যাই বিয়ানীবাজার। কিন্তু ১২ মে ঘোষণা হয়, ১৩ মে অর্ধদিবস হরতাল। হরতাল শেষে বেলা ১টায় দুইটা মাইক্রোবাস আর একটা প্রাইভেটকার নিয়ে বিশাল বরযাত্রা শুরু হয় বিয়ানীবাজার থেকে। আমি মাইক্রোবাসে থাকি আমার ছোটবেলার স্কুল ফ্রেন্ড খালেদ, আকবর, নুরুল, খসরুল, পুতুল ভাই, রাইব, এদের সঙ্গে। শ্রীমঙ্গল পার হয়ে আমি গাড়ি বদলাই, প্রাইভেটকারে উঠি, একটা পাগড়িও পরি। আমরা যাবো বিয়ে করতে হবিগঞ্জ। ঠিকানা জানি, কিন্তু জায়গা কেউ চিনি না। আমরা সন্ধ্যা ৭টায় শায়েস্তাগঞ্জ পৌঁছে ঠেলাওয়ালা, রিকশাওয়ালা, পান দোকানদার রাস্তার পথচারী এদের জিজ্ঞেস করে করে একসময় গিয়ে পৌঁছাই হবিগঞ্জের গোসাই নগরের কাছে এক সিনেমা হলে। সেখানে গিয়ে লাল নীল বাত্তি জ্বলা এক বাড়িতে পৌঁছে আমার বিয়ে বাড়ি পেয়ে যাই। গিয়ে দেখি আমার রুমমেট আখতার উজ্জামান, জামিল, টিটু সাম আমিনুল হক আর নায়ক আরটিএন হাসনাইন সাবিহ নিজের দায়িত্বে এসে গেছে। শুধু তাই নয়, সেকেন্ড ইয়ার থেকে আমাকে নানাভাবে সঙ্গ দেয়া তরুণ কবি আমার এক ব্যাচ জুনিয়ার ফারুকও দেখি এসে হাজির ।

জলীর সঙ্গে তাদের পূর্ব পরিচয়। তারা এই বাড়িতে কন্যাপক্ষ না বরপক্ষের লোক ঠিক বোঝা গেলো না। জলীর সঙ্গে এসেছে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের রুমমেট চীনু। চীনুর সঙ্গে দেখি আমার ফ্রেন্ডরা খুব খাতির দেখায়। তারা সবাই মিলে একজোট। রাতের বিয়ে। বরযাত্রীদের নানা রকমের আবাসিক হোটেলে রাখার ব্যবস্থা হয়। পরদিন সকালবেলা ভরপেটা খেয়ে বউ নিয়ে বাড়ি আসি, বিয়ানীবাজার। সঙ্গে চীনু আসে আমাদের বাড়ি। এটা দেখে নায়কও আসতে চাইলো। নায়ক একা আসবে না, টিটোকে চাই। নায়ক-টিটো আর চীনু ফুসুর ফুসুর করতে করতে আমাদের বাড়ি আসে।

আমাদের বাড়িতে তখন সরাসরি গাড়ি যায় না। কিছুদূর কাঁচা পায়ে হাঁটার পথ। এই পথে নৌকা দিয়ে গিয়েছি যাবার সময়। কিন্তু বউয়ের বায়না... তিনি পালকি চড়বেন। তার জন্য পালকি জোগাড় করা হলো। সেটা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দুই বেহারা নিয়ে এলো বাড়ি। পরদিন বউভাত এবং বউভাত শেষ করে গাড়ি ভাড়া বাঁচানোর জন্য কন্যাপক্ষের গাড়িতে করে ফেরত রওয়ানা দিই হবিগঞ্জের পথে, নতুন বউ নিয়ে। নায়ক-টিটোকে আলাদা ঢাকার বাস ধরিয়ে দিই। তারা চলে যায়। রাস্তায় নতুন বউয়ের ইত্তেফাক পত্রিকা কেনার দরকার পড়লো। তিনি খবর পেয়েছেন আজকের পত্রিকায় বিসিএস (১৪তম বিশেষ-শিক্ষা) এর ফাইনাল রেজাল্ট দেবে। তিনি কাঁপা হাতে পত্রিকা খুলে তার রোল নম্বর দেখতে পান। বাঁচা গেলো। ফেল করলে নতুন জামাই নিয়ে বাপের বাড়ি ফেরাটা তার বিষাদময় হতো। সেটা হয়নি।

রাতে হবিগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে, পরদিন ভোরবেলা অপর একজনের গাড়িতে করে আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢাকা। আমি নববিবাহিতা বউকে বাপের বাড়ি হবিগঞ্জে রেখে বউয়ের বান্ধবী চীনুকে নিয়ে ঢাকা আসি। আমি বুয়েটে ফেরত এসে থিসিসের জন্য প্রস্তুতি নিতে আর আমার কর্মস্থল বাংলাবাজার পত্রিকার কাজে যোগ দিই আর চীনু-নায়কের বিয়ের ঘটকালির কাজে মনোযোগ দিয়ে সফলকাম হয়ে যাই।

পত্রিকা অফিসে যোগ দিয়েই নিজের সরবরাহ করা ছবি দিলে বাংলাবাজার পত্রিকায় দ্বিতীয় পাতায় আমার বিয়ের খবর ছাপা হয়। ফটো নিউজ। ডাবল কলাম ছবির সঙ্গে দুই লাইনের খবর। বাংলাবাজার পত্রিকার স্টাফ অমুকের সঙ্গে অমুক তারিখে অমুকের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জ শহরের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এই যা। বিবাহউত্তর জীবন আমার খুবই ছেঁড়াবেরার মধ্যে ছিলো। বাকিটা আছে ‘বুয়েটকালে’। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়