জাহিদ বিন আজিজ : টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি পরে আসতেন। গায়ে গয়নার কোনো চিহ্ন নেই। আড্ডা দিতেন অতি সাধারণ ছাত্রীর মতো। কলা ভবনে প্রথম ক্লাসের দিনই কাঁদানো গ্যাস খেতে হয়। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু দেশের অবিসংবাদিত নেতা। কিন্তু শেখ হাসিনা যে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে সেটি সহপাঠী- সহপাঠিনী তারা টেরই পেতো না।
আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতার লড়াইয়ের শরিক সেই প্রজন্ম যাদের হাত ধরে স্বাধীন বাংলাদেশ, রাজপথ তখন স্থায়ী ঠিকানা তাদের। রাজপথ-বটতলা-কলাভবনের দোতলা কাঁপানো কোনোটিতেই মেয়েটি পিছিয়ে নেই। তবে এমন নয় যে, ক্লাসে একেবারেই ঢুকিনি। লেখাপড়া তখন গৌণ এবং রাজনীতিটা মুখ্য হয়েই ছিলো। বরং এ কথা বলা যায় যে, ১৯৬৮-৬৯-৭০ সালটা তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে। ছাত্রলীগ স্বাধীন, সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য তখন সশস্ত্র যুদ্ধে সমর্থকদের প্রস্তুত করছে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে প্রস্তুত হয়। এমন উত্তপ্ত রাজনৈতিক অবস্থাতেই ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের স্নাতক সম্মানের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করা শুরু করে।
তেমন একটি সময়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রোকেয়া যিনি ছাত্রলীগ করতেন একদিন দোতলার বাংলা বিভাগের বারান্দায় দাঁড়িয়ে, দেখলেন এক মেয়ে আসছেন যার চেহারাটা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মিলে যায়। তার হাসিভরা মুখ। গলায় সোনার চেন এবং হাতে আংটি। এমনিতেই হৈচৈ করা রোকেয়া এই দৃশ্য দেখে পুরো বিভাগ মাতিয়ে ফেললো। চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ওই যে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা। তারা তখনো ভাবিনি যে মেয়েটি কলা ভবনের দোতলাতেই আসছে। মেয়েটি দোতলায় উঠলো এবং সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বললো। শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলা বিভাগের ৬৮ ব্যাচের পরিচয় সেদিন থেকে। কলা ভবনের দোতলার বারান্দায় ছিলো তার নিয়মিত আড্ডা। সহপাঠী-সহপাঠিনী যারা তারা ধীরে ধীরে জানতে পারেন যে, তিনি বিবাহিতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে তিনি বদরুন্নেসা ও ইডেন কলেজ মাতিয়ে এসেছেন। ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্রসংসদের সহসভাপতি ছিলেন। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় হয়ে উঠলেন। বিভাগীয় নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখলেন। নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের জয় হয়। নেতারা হারলেও জিতলেন শেখ হাসিনা। ততোদিনে ছাত্রনেতারা বুঝে ফেললেন ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়ন দু’দলেই আছে তার জনপ্রিয়তা। একসময় তাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হতো যে, শেখ হাসিনা ইডেন কলেজের মতো ছাত্র ইউনিয়নের ঘাঁটিতে জিতেছিলেন কেমন করে। সেই উত্তর আজ তারা পেলেন, যে তার বিজয়ের পেছনে ছাত্রলীগ ইমেজ না বরং কাজ করেছে তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা।
শেখ হাসিনা অতি সাধারণ বাঙালি ঘরের বধূ-কন্যা হিসেবে পুরো বিভাগের জন্য ছিলেন একটি দৃষ্টান্ত যার ছাত্রজীবন থেকেই অভিজ্ঞতা সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির সেই শেখ হাসিনার বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন, সরকার পরিচালনা, দল চালানো, পরিবার ইত্যাদি নানা বিষয়ে বইয়ের পর বই মহাকাব্য লেখা যায়। তার সময়োপযোগী, সুশৃঙ্খল এবং গতিশীল নেতৃত্বে আমাদের গর্বের স্বদেশ আজ সারাবিশ্বের বিশ্বয়, উন্নয়নের রোল মডেল।
ইনশাআল্লাহ তার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবো আমরা আরো বহুদূর। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :