তানজিনা তানিন : কষ্ট করে দিনরাত পড়াশোনা না করে বা নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে সার্টিফিকেট। হাতের নাগালে অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট পেতে শুধু টাকা আর যোগাযোগই যথেষ্ট। প্রয়োজন মতো সার্টিফিকেট সংগ্রহে গ্রাহকরা চলে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের নীলক্ষেতে। কুচক্রীরা সেখানে বই ছাপানোর পাশাপাশি ছাপেন জাল সনদও।
টাকা দিলে ওই বাজারে মিলে মেডিক্যাল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সনদ। এছাড়া শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ, নম্বরপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, স্মার্টকার্ড, ট্রেড লাইসেন্স, ম্যারেজ সার্টিফিকেট, নাগরিকত্ব সনদও পাওয়া যায় অনায়াসে। এই ভুয়া সনদ দিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরিও করছেন অনেকে।
নীলক্ষেতে জাল সার্টিফিকেট তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, নকল সার্টিফিকেট তৈরি কিংবা সার্টিফিকেট নিয়ে কোনো ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। তবে যদি এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমরা পাই তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নীলক্ষেতের সিটি করপোরেশন মার্কেট, বাকুশাহ মার্কেট ও শাহ সাহেব বাড়ি মরিয়ম বিবি শাহী মসজিদ মার্কেটে মূলত নকল সার্টিফিকেট প্রস্তুত করা হয়। গত রবিবার ও সোমবার সরেজমিনে নীলক্ষেতের তিনটি মার্কেটে সেবাগ্রহীতা সেজে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ছয় দালালের।
আলমগীর নামের এক দালাল বলেন, বোর্ডের প্রতিটি সার্টিফিকেট দেড় হাজার টাকায়, ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ১২শ টাকায়, এনআইডি ৮শ টাকায়, স্মার্ট এনআইডি ১২শ টাকায়, ট্রেড লাইসেন্স ৮শ টাকায়, ম্যারেজ সার্টিফিকেট ৩শ টাকায়, নাগরিকত্ব সনদ ৩শ টাকায়, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ৫শ টাকায় ও মার্কশিট ১ হাজার টাকায় করা যাবে।
এসবের জন্য দোকানদাররা সরাসরি কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলেন না। যোগাযোগ স্থাপনের জন্য রয়েছে দালাল চক্র। চক্রগুলো তিন ধাপে কাজ করে থাকে। প্রথম গ্রুপের কাজ হচ্ছে কাস্টমার সংগ্রহ করা। দ্বিতীয় গ্রুপের কাজ আসল সার্টিফিকেটের ফরমেট ও বিশেষ ধরনের কাগজ সংগ্রহ করা এবং তৃতীয় গ্রুপটির কাজ আসলের মতো কম্পিউটারে সনদ তৈরি করা।
সার্টিফিকেট তৈরির জন্য আছে বিশেষ সফটওয়্যার। ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে সনদের ওপর কোনো সিল ও স্বাক্ষর থাকলে সেটি নকল না আসল তা বোঝার সুযোগ নেই। বোর্ডে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদগুলো তৈরিতে অ্যাম্বুস কাগজ ব্যবহার হয়। কাগজের রঙের সঙ্গে মিল রেখে এ সনদ তৈরি করা হয়। একইভাবে তৈরি করা হয় জাল মার্কশিট।
গত কয়েক বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শত শত ভুয়া সার্টিফিকেট শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকার, সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, বিদেশে চাকরিজীবী ও আইনজীবী রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে রাব্বি নামের (ছদ্মনাম) এক শিক্ষার্থী একটি ব্যাংকের এজিএম পদে পর্যন্ত চাকরি করছিলেন।
ডিএমপির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির অপরাধে আটজনকে গ্রেফতার করেছি। জাল সনদ তৈরির সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বলেন, শনাক্ত করে সনদ ভুয়া হলে জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে ঢাবির সনদ জাল করা কঠিন বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :