আলম খোরশেদ : ৮ মে দিনটা সকাল থেকে রাত অবধি ছিলো নানাবিধ কর্মসূচিতে ঠাসা। নাস্তা সেরে প্রথমেই আমরা ভাড়াকরা বিএমডব্লিউ বাসে চেপে সবাই মিলে চলে গেলাম জার্মানির অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাবান নাট্যশালা ঠড়ষশং ইঁযহব অর্থাৎ গণথিয়েটার পরিদর্শনে। এটি পূর্ব বার্লিন, তথা প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক জার্মান অংশে অবস্থিত, একদা যার উল্টো দিকেই ছিলো জার্মান কসিউনিস্ট পার্টির দপ্তর। আর, এর কাছাকাছিই থাকতেন পূর্ব জার্মানির বিখ্যাত চারণকবি ও গায়ক ভোলফ বিয়ারমান। পুরো নাট্যশালাটি, বিশেষ করে তার বিপুলায়তন ঘূর্ণায়মান মঞ্চটির আদ্যোপান্ত ঘুরে দেখা ছিলো এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। এক ফাঁকে, জার্মানির বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্কৃতিবিষয়ক অনুদান ও অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বসে তাদের নানান কর্মসূচি ও সুযোগসুবিধা বিষয়ে ফলপ্রসূ মতবিনিময়ও হলো আমাদের।
অতঃপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো জার্মান সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে, এর প্রশাসনিক পরিচালক মিকাইল হাসপার মহাশয়ের দেওয়া বিশেষ ভোজসভায় অংশগ্রহণের জন্য। সেটিও আরেক শতবর্ষী ইমারত, একসময় যেটি জার্মানির সোস্যালিস্ট ইউনিয়নের সদর দপ্তর ছিলো, যার অভ্যন্তরে যান্ত্রিক পুলিচালিত কাঠের লিফট দুটো এখনও দিব্যি সচল এবং সেগুলোতে আরোহণ করেই, দুরু দুরু বক্ষে, একজন একজন করে ক্রমে আমরা সবাই গিয়ে মিলিত হই রাজসিক এক ছাদ-রেস্তোরাঁয়। আমাদের আপ্যায়কের অভ্যর্থনা বক্তৃতার পর শুরু হয় আনন্দময় পানভোজনের পালা, তবে তারই মধ্যে আমরা প্রত্যেকে তাদের যার যার দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি বিষয়ে বক্তব্য রাখার সুযোগ পাই, সেও আরেক অমূল্য অভিজ্ঞতা বৈকি।
এরপর, যথারীতি যূথবদ্ধ ছবি তোলাশেষে, আমরা আবারও ফিরে আসি ফোকস বুন থিয়েটারে। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষমান ছিলো জার্মানির নামকরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। তাদের শিল্পদর্শন ও শিক্ষাপদ্ধতি বিষয়ে অন্তরঙ্গ আলাপনের পর, অবশেষে আমরা ঐতিহাসিক মিলনায়তনের ভেতরে প্রবেশ করি। উদ্দেশ্য এই সময়ের ইউরোপের অন্যতম সাড়াজাগানো নাট্যপ্রযোজনা, সুজানা কেনেডি নির্দেশিত, ভবিষ্যৎমুখী নাটক, ‘কামিং সোসাইটি’ প্রত্যক্ষ করা। এটি মূলত সমকালীন দৃশ্যশিল্পের নতুনতম প্রযুক্তি ঠজ তথা ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির একধরনের মঞ্চসংস্করণ বিশেষ, যেখানে আমরা, দর্শকেরা সবাই উপস্থিত ছিলাম একেবারে মঞ্চের মাঝখানে, খোদ কুশীলবদের সঙ্গে। আর মঞ্চটি যেহেতু ছিলো গতিশীল ও ঘূর্ণায়মান, সেহেতু আমরা প্রত্যেকেই তাদের যার যার নিজস্ব অবস্থান ও পরিপ্রেক্ষিত থেকে, স্বতন্ত্র ও ব্যক্তিগত এক নাট্যাভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছিলাম ক্রমাগত, যা ছিলো এই নাটকের এক অভিনব প্রাপ্তি ও পুরস্কার।
আমাদের সঙ্গে বসে নাটক দেখছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান মিসেস মারিয়া ফেলনার। অতীব সজ্জন ও সদাহাস্যময় এই নারী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে, কাছেই এক রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেন আমাদের, তার পক্ষ থেকে নৈশভোজে আপ্যায়ন করবেন বলে। ঘটনাচক্রে, আমার আসন পড়েছিলো ঠিক তার মুখোমুখি, ফলে খেতে খেতে অনেক গল্প হলো তার সঙ্গে, জার্মানি, বাংলাদেশ এবং অবশ্যই আমাদের প্রিয় ‘বিস্তার’ নিয়ে। ডিনার ও আড্ডাশেষে উবার ডেকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আমরা যখন হোটেলে ফিরে আসি তখন রীতিমতো মধ্যরাত! ফেসবুকে থকে
আপনার মতামত লিখুন :