শিরোনাম
◈ চট্টগ্রাম বন্দরে সাইফ পাওয়ার টেকের যুগের অবসান, এনসিটির দায়িত্বে নৌবাহিনী ◈ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজের খেলায় তালেবান, পেছনে চীন-রাশিয়া-ইরান-ভারত! ◈ পাকিস্তানকে ঠেকাতে গিয়ে ভারতে বন্যা, তোপের মুখে কঙ্গনা (ভিডিও) ◈ ৫ আগস্ট লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার জাতীয় সংসদ: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ গাজীপুরে মহানগর বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার ◈ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ : মির্জা ফখরুল ◈ রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ’ ওসি, আটক করে ‘চাঁদা দাবি’ ছাত্রদল নেতার, সিসিটিভির ফুটেজ ফাঁস ◈ আর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটলে সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ: হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের ◈ ধামরাইয়ে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গৃহবধুকে ধর্ষণ, আসামী গ্রেফতার ◈ গাজীপুরে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার বিএনপি নেতা স্বপন

প্রকাশিত : ১৭ মে, ২০১৯, ১২:৩১ দুপুর
আপডেট : ১৭ মে, ২০১৯, ১২:৩১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ঘোষণায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন

আল-আমিন : বাংলাদেশের সবশ্রেণীর মুসলমান বছর বছর ধরে সর্বনিম্ন মূল্যের হিসেবে ফিতরা আদায় করে আসছেন। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সকলেই ফিতরা দিচ্ছে একই হিসাবে জনপ্রতি ৫৫/৬০ টাকা করে। মনে হয় যেন সকলে আমরা ভুলেই গেছি, গম হচ্ছে ফিতরার ৫টি দ্রব্যের একটি (যা বর্তমানে সর্বনিম্ন মূল্যের)। তাই আমরা এদেশের ফিতরা আদায়কারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, তারা যেন যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হাদিসে বর্ণিত দ্রব্যগুলোর মধ্যে তুলনামূলক উচ্চমূল্যের দ্রব্যটির হিসাবে ফিতরা আদায় করেন। পনির, কিসমিস, খেজুর, যব কোনোটির হিসাব যেন বাদ না পড়ে।

সদকাতুল ফিতর সম্পর্কিত হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচপ্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক সা’ দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। এটা হল ওজনের দিক দিয়ে তফাৎ। আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছেই। যেমন- (ক) আজওয়া (উন্নতমানের) খেজুরের মূল্য প্রতি কেজি ১০০০/- টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৩২৫৬/- তিন হাজার দুই শত ছাপ্পান্ন টাকা।

(খ) মধ্যম ধরনের খেজুর, যার মূল্য প্রতি কেজি ৩০০/- টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৯৭৭/- নয়শত সাতাত্তর টাকা।

(গ) কিসমিস, প্রতি কেজি ২৩০/- টাকা করে হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৭৪৮/- (সাত শত আটচল্লিশ) টাকা।
ঘ) পনির প্রতি কেজি ৫০০/- টাকা করে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ১৬২৮/- (এক হাজার ছয় শত আটাশ) টাকা।

ঙ) গম, প্রতি কেজি ৩৫/- টাকা হিসাবে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৫৭ টাকা।

হাদিস শরিফে এ ৫টি দ্রব্যের যে কোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেয়া হয়েছে যেন মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যে কোনো ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এখন লক্ষণীয় বিষয় হলো, সকলশ্রেণীর লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্যমানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকা ফিতর আদায় করে তবে হাদিসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসেবে ফিতরা আদায়ের উপর আমল করবে কে?

আসলে এক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন, যে ব্যক্তি উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে সদকা ফিতর আদায় করার সামর্থ্য রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসাবে দেয়ার সে তাই দিবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিসমিসের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেয়া কঠিন সে আদায় করবে গম দ্বারা। এটিই উত্তম নিয়ম। এ নিয়মই ছিল নবী, সাহাবা-তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের স্বর্ণযুগে। এ পর্যন্ত কোথাও দুর্বল সূত্রে একটি প্রমাণ মেলেনি যে, স্বর্ণযুগের কোনো সময়ে সব শ্রেণীর সম্পদশালী সর্বনিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করেছেন। এখানে এ সংক্রান্ত কিছু বরাত পেশ করা হচ্ছে- নবী করীম সা.কে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, ‘দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি’। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইতক ৩/১৮৮; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান বাব আফযালুল আমল ১/৬৯)

সাহাবায়ে কেরাম-এর আমল :
ক) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, আমরা সদকা ফিতর আদায় করতাম এক ‘সা’ খাদ্য দ্বারা অথবা এক ‘সা’ যব অথবা এক ‘সা’ খেজুর, কিংবা এক ‘সা’ পনির বা এক ‘সা’ কিসমিস দ্বারা। আর এক ‘সা’-এর ওজন ছিল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘সা’ অনুযায়ী। (মুয়াত্তা মালেক পৃ.১২৪; আল ইসতিযকার, হাদীস ৫৮৯, ৯/৩৪৮) এ হাদীসে রাসূলের যুগে এবং সাহাবাদের আমলে সদকা ফিতর কোন কোন বস্তু দ্বারা আদায় করা হত তার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।

(খ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. সারা জীবন খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করেছেন। তিনি একবার মাত্র যব দ্বারা আদায় করেছেন। (আল ইসতিযকার, হাদীস নং ৫৯০, ৯/৩৫৪) ইবনে কুদামা রা.আবু মিজলাযের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশই যেহেতু খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন তাই ইবনে ওমর রা. সাহাবাদের তরীকা অবলম্বন করতে সারা জীবন খেজুর দ্বারাই আদায় করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনে ওমরের ভাষ্য হল- ‘সাহাবীগণ যে পথে চলেছেন আমিও সে পথেই চলতে আগ্রহী।’ এবার দেখা যাক মাযহাবের ইমামগণ উত্তম সদকা ফিতর হিসেবে কোনটিকে গ্রহণ করেছেন।

উত্তম সদকাতুল ফিতর :
ইমাম শাফেয়ীর মতে উত্তম হল হাদীসে বর্ণিত বস্তুর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা দেওয়া। অন্য সকল ইমামের মতও এমনই। ইমাম মালিক রাহ.-এর নিকট খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত খেজুর ‘আজওয়া’ খেজুর দেওয়া উত্তম। আজওয়া খেজুরের ন্যূনতম মূল্য ১০০০-১২০০ টাকা প্রতি কেজি। ইমাম আহমদ রাহ.-এর নিকট সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। (আলমুগনী ৪/২১৯; আওজাযুল মাসালিক ৬/১২৮)

ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর নিকটেও অধিক মূল্যের দ্রব্যের দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরীবের বেশি উপকার হয় সেটাই উত্তম ফিতরা। সাহাবায়ে কেরামের যুগে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মদীনাতে গমের ফলন ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে হযরত মুআবিয়া রা.-এর যুগে ফলন বৃদ্ধি পেলেও মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে, সেকালে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল। হযরত মুআবিয়া রা.-এর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা ‘সা’ গমকে সদকা ফিতরের অন্যন্য খাদ্যদ্রব্যের এক ‘সা’র মতো গণ্য করা হত। (আল ইসতিযকার ৯/৩৫৫)

ইবনুল মুনযির বলেন, সাহাবীদের যুগে যখন গম সহজলভ্য হল তখন তারা আধা ‘সা’ গমকে এক ‘সা’ যবের সমতুল্য গণ্য করলেন। (ফাতহুল মুলহিম ৩/১৫; আওজাযুল মাসালিক ৬/১৩) তাহলে বুঝা গেল, হযরত মুআবিয়া রা.-এর যুগে গম দ্বারা সদকা ফিতর আদায়ের প্রচলন বেড়েছিল। এর কারণ হল যে, তখন গমই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যমানের খাদ্য। এ সময় হযরত ইবনে ওমর সাহাবাদের অনুকরণে খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করতেন। তখন তাঁকে আবু মিজলায রাহ. বলেন,
‘আল্লাহ তাআলা তো এখন সামর্থ্য দিয়েছেন। আর গম খেজুরের চেয়ে অধিক উত্তম। অর্থাৎ আপনার সামর্থ্য রয়েছে বেশি মূল্যের বস্তু সদকা করার। তবুও কেন খেজুর দ্বারা তা আদায় করছেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি সাহাবাদের অনুকরণে এমন করছি।

যাক আমাদের কথা ছিল, সাহাবায়ে কেরাম গম দ্বারা এজন্যই সদকা ফিতর আদায় করতেন যে, এর মূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। হাদিসে পাঁচ প্রকারের খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম। তাহলে এ যুগে সর্বশ্রেণীর জন্য এমনকি সম্পদশালীদের জন্যও শুধুই গম বা তার মূল্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করা কী করে সমীচীন হতে পারে?

ধনীশ্রেণীর মুসলিমদের জন্য পনির বা কিসমিসের হিসাবে ফিতরা আদায় করা কোনো সমস্যাই নয়। যেখানে রমযানে ইফতার পার্টির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়, ঈদ শপিং করা হয় অঢেল টাকার, সেখানে কয়েক হাজার টাকার ফিতরা তো কোনো হিসাবেই পড়ে না। যদি এমনটি করা হয় তবে যেমনিভাবে পুরো হাদীসের উপর মুসলমানদের আমল প্রতিষ্ঠিত হবে এবং একটি হারিয়ে যাওয়া সুন্নত জিন্দা করা হবে, তেমনি এ পদ্ধতি দারিদ্র্যবিমোচনে অনেক অবদান রাখবে। গরীব-দুঃখীগণের মুখেও হাসি ফুটে উঠবে ঈদের পবিত্র দিনে।

আরেকটি আবেদন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দেশের সম্মানিত মুফতীগণ, মাশায়েখ হযরাত ও দারুল ইফতাগুলোর কাছে, তারা যেন সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ঘোষণা দেওয়ার সময় হাদিসে বর্ণিত সকল দ্রব্যের হিসাবেই পৃথক পৃথকভাবে বলে দেন এবং মানুষকে যথাসম্ভব উচ্চমূল্যের ফেতরা আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।

(উৎস : দারুল ইফতা, মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকার মুখপত্র ‘মাসিক আল কাউসার’)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়