শায়রুল কবীর খান : এক. দিল্লির লালকেল্লায় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ দুটি বিচার হয়েছিলো। এই বিচার ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেয়। ১৮৫৮ সালে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের বিখ্যাত বিচার। এই বিচারে ভারতের
মুঘল শাসনের অন্তিম ঘণ্টা বাজে, প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য।
দুই. একই ভাবে ১৯৪৫ সালে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন শাহনেওয়াজ খানের বিচার হয় ঐতিহাসিক লালকেল্লাতেই । ১৯৪৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে জাপানের হিরোসিমায় বোমা বর্ষণের পর যাবতীয় প্রতিরোধ শক্তি চূর্ণ হয়ে যায়। জাপানী ফৌজের আত্মসমপর্নের সঙ্গে সঙ্গে ধরা দিতে হয় আই.এন. এর অফিসার ও সেনানীদের।
তিন. ১৮ আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রাণ হারায়। জাপানের আত্মসমর্পণ ও নেতাজীর মৃত্যুতে ইতিাহসের গতিপথ ঘুরে যায়। আজাদ হিন্দ বাহিনীর যে অফিসার ও ফৌজিরা ধরা পড়ে এদেরকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে তৎপর হয় ব্রিটিশ সরকার।
চার. কিন্তু যুদ্ধ শেষ হতেই দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে যায়। একদিন না একদিন এদেশ ছাড়তেই হবে সে কথা বুঝতে পারে ইংরেজরা। বিদ্রোহ ও আনুগত্যের শপথ ভাঙ্গার অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। নয়াদিল্লির লালকেল্লাকে আই.এন. এর অফিসারদের বিচারস্থল হিসাবে বেছে নেওয়া হয়।
পাঁচ. আর ব্যাপক সংখ্যক অফিসার নয়, বিচারের জন্য বেছে নেওয়া হলো এক মুসলিম, এক হিন্দু ও একজন শিখকে অর্থাৎ ক্যাপটেন শাহানেওয়াজ খান, ক্যাপটেন পিকে সায়গল ও গুরুবক্স সিংহ ধিলোঁ। তারা যে আনুগত্যের শপথ ভেঙ্গেছেন তা নয়, হত্যা ও অত্যাচারের অভিযোগে যুদ্ধ অপরাধী হিসাবে দোষী সাব্যস্ত করাই ছিল মূল লক্ষ্য। যথারীতি এই তিন অফিসারের প্রতি সমবেদনা বেজে উঠল গোটা ভারতবর্ষে ।
ছয়. অভিযুক্তদের পক্ষ সমর্থন করার ক্ষেত্রে জাতীয় কংগ্রেস একটা ভূমিকা পালন করে। কংেগ্রসের বিশিষ্ট আইনজীবীদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়। পন্ডিত নেহেরু, স্যার তেজ বাহাদুর, আসক আলী প্রমুখরা কমিটির অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। ব্রিটিশ শাসকদের হাতে ভারতের স্বাধীনতা প্রত্যাশীদের এটাই ছিল শেষ বিচার এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি ইস্যুগুলির দিক থেকে বলা যায় এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিচার।
সাত. বিচারের কাঠগড়ায় দাড়িয়ে সংক্ষেপে বলেছিলেন, যুদ্ধের সময় আমার দুটো রাস্তা খোলা ছিল রাজা অথবা দেশকে বেচে নেওয়া। আমি দেশের প্রতি অনুগত থাকার সিদ্ধান্ত নেই এবং নেতাজীকে জানিয়েও দেই যে, দেশের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করতে আমি প্রস্তুত।
আট. হুজুর কাছে সবশেষে এই বিষয়টি আপনার ও আমার দেশের জনগণের গোচরে আনতে চাইছি যে, আজাদ হিন্দ বাহিনী যে সকল কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে, যে কষ্ট স্বীকার করেছে, তা কোনো ভাড়াটে বা ক্রীড়নক সেনাবাহিনীর পক্ষে সম্ভব হবে না। আমরা লড়ছি শুধু ভারতের স্বাধীনতার জন্য। লড়াইয়ে আমি ছিলাম সে কথা অস্বীকার করছি না। কিন্তু সভ্য জগতে যুদ্ধনীতি মোতাবেক মাতৃভূমিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে স্বাধীন ভারতের অস্থায়ী সরকারের বাহিনীভুক্ত হওয়ার সুবাদেই আমি সে কাজ করেছি। অতএব আমি কোনো অপরাধ করেনি, যার জন্য ফৌজি আদালত বা অন্য কোন আদালতে আমার বিচার হতে পারে। আজাদ হিন্দ বাহিনীর ৩ ক্যাপন্টেনের ১০টি অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার শেষ হয়।
নয়. বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সমাজতন্ত্র পদ্ধতি ও সমাজতন্ত্রের আন্দোলন তেমনভাবে নেই। যাহা আছে তা রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদের আন্দোলন। বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যার প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক স্বনির্ভর ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার স্বপ্ন ও আদর্শের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে মাত্র সাড়ে চার বছরের মাথায় বাংলাদেশ স্বনির্ভতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। বাংলাদেশ নিয়ে যাদের গভীর ষড়যন্ত্র ছিল এবং আছে তাদের কাছে এটি সবচেয়ে বড় বিষয় যার সূত্র ধরে এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
আপনার মতামত লিখুন :