নিউজ ডেস্ক : ইবনে সিনা, পশ্চিমা বিশ্বের কাছে যিনি পরিচিত আভিসিনা নামে; তার পাণ্ডিত্যের জন্য প্রায়শই তাকে গ্রীক চিকিৎসাবিদ গ্যালেনের সাথে তুলনা করা হয়। ইবনে সিনাকে বলা হয়ে থাকে ইসলামের গ্যালেন। বিশ্বব্যাপী বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে তার জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য বিভিন্ন দেশ নিজেদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা করে থাকে। ১৯৩৭ সালে ইবনে সিনার মৃত্যুর ৯০০ বছর পর তুরস্ক প্রথম তার জন্মোৎসব উদযাপন করে।
দর্শনশাস্ত্র এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে তার অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ ১৯৮০ সালে ইউনেস্কোর সকল সদস্য রাষ্ট্র মিলে ইবনে সিনার জন্মের হাজার বছর পূর্তি উদযাপন করে।
ইবনে সিনা আফশানায় জন্মগ্রহণ করেন, যা এখনকার উজবেকিস্তানে অবস্থিত। একুশ বছর বয়সে তিনি পারস্যে পাড়ি জমান এবং জীবনের বাকিটা সময় পারস্যের বিভিন্ন শহরে কাটান। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন বিখ্যাত দার্শনিক এবং চিকিৎসক। ইবনে সিনা তার পুরো জীবনে প্রায় ২৭৫ টির মত বই লেখেন,যার মাঝে ছোট খাটো দু একটি তার মাতৃভাষা ফারসিতে লেখা। বাদ বাকি সবগুলোই আরবী ভাষায় লেখা। কিন্তু , দুঃখের বিষয় হলো তার বিপুল এই কাজের অধিকাংশই হারিয়ে গেছে। তবে প্রায় ৬৮ টির মত বই এখনও শোভা পাচ্ছে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে।
অন্য অধ্যায়টিতে, শরীরের প্রতিটি হাড়ে সৃষ্ট ফাটলের বিষয়ে আলাদা আলাদা ভাবে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। ইবনে সিনার করা ব্যাখ্যাগুলোকে একদম বর্তমানকালের চিকিৎসাবিজ্ঞানের টেক্স্টবুকের সাথে তুলনা করা চলে।
তিনি ভাঙ্গা বা ফাটল ধরা হাড়ে তৎক্ষণাত পট্টি দেয়ার পক্ষপাতি ছিলেননা। তার মতে, ভাঙ্গা হাড়ে পট্টি দেয়ার আগে অন্তত পঞ্চম দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিৎ। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলা হয় 'থিওরি অফ ডিলেইড স্প্লিন্টেজ।' লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের অধ্যাপক জর্জ পারকিনস্ (১৮৯২- ১৯৭৯) কে বলা হয় এই থিওরির প্রবক্তা।
বর্তমান কালে যা "বেনেট'স ফ্র্যাকচার ১৮৮২" নামে পরিচিত বেনেটের হাজার বছর আগেই ইবনে সিনা বলে গিয়েছিলেন।
আগেই বলেছি, ইবনে সিনার বই ক্যাননের রচনাশৈলি বা বইটির গঠন এক্কেবারে বর্তমানকালের মেডিক্যাল টেক্সটবুকের মত। আর এ কারণেই এই বইটি মুসলিম এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে সমানভাবে জনপ্রিয়। ১২০০ শ শতকের দিকে "জেরার্ড অফ ক্রেমোনা" নামক ল্যাটিন অনুবাদের মাধ্যমে বইটি ইউরোপীয়দের কাছে পরিচিতি পায়।