স্বপ্না চক্রবর্তী : ঈদুল ফিতরের আগে পোশাক শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস (উৎসব ভাতা) পরিশোধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসে নি ত্রিপক্ষীয় সভা থেকে। মালিক, শ্রমিক ও সরকারের সমন্বয়ে গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির এর সভা শেষ হয়েছে কোনো ধরণের সিদ্ধান্ত ছাড়াই। তবে মালিকপক্ষ দাবি করছে ঈদের আগেই সব কারখানার শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে গণহারে কারখানাগুলোতে ছাটাই চলছে বলে দাবি করছেন শ্রমিক নেতারা।
সোমবার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে ৩টায় সভা শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টার কিছু পর। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ বা ৬ জুন দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে। প্রতি বছর ঈদের আগে কোন তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হবে তা নির্ধারণ করতে রমজানে সভায় বসে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটি। আড়াই ঘণ্টার সভা শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সামনে আমাদের ঈদুল ফিতর, আমরা আলোচনায় নিয়ে এসেছি শান্তিপূর্ণভাবে কীভাবে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা মালিকদের নিয়ে পরিশোধ করাতে পারি। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, শিল্প পুলিশ ও ডিসি সাহেবরাসহ সবাই মিলে শ্রমিকরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বেতন-ভাতা-বোনাস নিয়ে বাড়ি যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করব।
তিনি বলেন, প্রাথমিক একটা আলোচনা আমরা করলাম। ঈদের ছুটির আগে বেতন-বোনাস দিয়ে দিতে হবে এটা আমরা বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ-কে জানিয়ে দিয়েছি। মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে একটা কমিটি আছে, পরবর্তী সময়ে তাদের নিয়ে আমরা আরেকটা সভা করব। আমরা সেদিন সিদ্ধান্ত নেব, কোন পর্যন্ত (বেতন) দেবেন কী দেবেন না। কিন্তু শ্রমিকের যা পাওনা তা অবশ্যই শ্রমিককে দিতে হবে।
সভায় উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন সভায় পোশাক শিল্প মালিকরা ঈদের আগে চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতন দিতে চেয়েছেন। তবে শ্রমিক প্রতিনিধিরা এতে রাজি এদিকে অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও ঈদের আগেই গার্মেন্টস খাতের সব শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মালিকরা। তাই এ নিয়ে কোনো ধরনের শ্রমিক বিক্ষোভের সম্ভাবনাও নেই বলে দাবি করছেন তারা।
পোশাক মালিকদের সংগঠনটির সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, আমাদের কাছে শ্রমিকস্বার্থ সবচেয়ে অগ্রাধিকার। আশা করছি ঈদের আগেই আমাদের প্রায় সবগুলো কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন। একই কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি রুবানা হকও। তিনি বলেন, শ্রমিক তার সঠিক জিনিসটি পাক ঈদের আগেই এটা আমরাও চাই। সংগঠনটির সদ্য সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় আমরা এ বছরও ঈদের পূর্বেই শ্রমিকদের সব পাওনা মিটিয়ে দেবো। তাই শ্রমিক অসন্তোষের কোনো প্রশ্নই উঠে না।
তবে ঈদে বোনাস না দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে কারখানাগুলোতে শ্রমিক ছাটাই শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি। তিনি জানান, আজকেও (গতকাল সোমবার) আমরা আশুলিয়ার তিনটি কারখানার মালিকদের সাথে বৈঠক করেছি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কারণ জানতে। এসময় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের নির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি তারা। তবে আমরা জানি, ঈদকে সামনে রেখে খরচ কমানোর কৌশল এটি। এখন পর্যন্ত ঈদকে সামনে রেখে প্রায় শতাধিক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :