শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৩ মে, ২০১৯, ০৪:২৮ সকাল
আপডেট : ১৩ মে, ২০১৯, ০৪:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কানাডায় ‘ধ্রুপদ’ এর বর্ণিল বৈশাখী আয়োজন

অভ্র সাহা : কানাডার মিসিসাগা বাঙালি কমিউনিটির প্রাণের সংগঠন ‘ধ্রুপদ’ সাড়ম্বরে বরণ করেছে বাংলা নতুন বছর ১৪২৬। ২৭ এপ্রিল, শনিবার এ উপলক্ষে স্থানীয় গ্লেন ফরেস্ট সেকেন্ডারি স্কুল অডিটরিয়ামে দিনব্যাপী এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৈশাখী মেলা, নাচ, গান, আবৃত্তি, ফ্যাশন শো, কৌতুক ও পালাগানের পসরায় সাজানো মনোমুগ্ধকর বর্ণিল এ আয়োজনে প্রাণের টানে মিলিত হয়েছিলো মিসিসাগার বাঙালি সম্প্রদায়ের সব বয়সের ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জীর্ণ ও পুরাতনকে ভাসিয়ে সূর্যের নবকিরণচ্ছটায় নতুন যে বছরটির সূচনা হয়েছিলো ১ বৈশাখে ২০২৪ সকলের কল্যাণ ও মঙ্গল কামনায় সে বছরটিকে স্বাগত জানাতেই ছিলো মিসিসাগাভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ধ্রুপদের এই অভূতপূর্ব আয়োজন। উপস্থিত সকলে নাচে-গানে, হাসি-আনন্দে এবং পরম মমতা ও ভালোবাসায় বরণ করে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ।

অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় হলের ভেতরে মূল মঞ্চের সামনের খোলা অংশে বৈশাখী শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। এতে নেতৃত্ব দেন মিসিসাগার নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতি কর্মী ও ধ্রুপদের কর্ণধার বনফুল (মণি ভাবি)। নানা রকম বাহারি পোশাকে সজ্জিত হয়ে শিল্পী ও কলাকুশলিরা হারমোনিয়াম, ঢোল, একতারা, বাঁশি, মন্দিরা, হাতপাখা, মাটির কলসি ইত্যাদি নানা দেশিয় বাদ্যযন্ত্র ও উপকরণ হাতে নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করেন। শিশুরা সেজেছিলো রঙিন মুখোশে। সকলের কণ্ঠে ছিলো ‘আইলো আইলো রে রঙে ভরা বৈশাখ/আমার আইলো রে’ গানটি। সূচনা পর্বটিকে পূর্ণতা দিতে সমবেত কণ্ঠে সকলে গেয়ে উঠেন রবি ঠাকুরের সেই চিরচেনা গান, ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।

এরপর একে একে একক ও দলীয় পরিবেশনায় দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠে পুরো অনুষ্ঠানটি। একক পরিবেশনায় রবি ঠাকুরের গান গেয়ে শোনান অমিত কর। তার ভরাট কণ্ঠে হেমন্তের গান আলাদা মাত্রা যোগ করে। মিসিসাগার চেনা মুখ ও গিটারিস্ট মির্জা গোলাম রাশেদের নেতৃত্বে বাংলা ব্যান্ডের দুটি জনপ্রিয় গান, ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখেছিলাম বায়োস্কোপ’ এবং ‘গাড়ি চলে না চলে না/চলে না রে’ পরিবেশন করা হয় দলীয় উপস্থাপনায়।

বাংলাদেশে ষড় ঋতুতে প্রকৃতির পালাবদলের যে অসাধারণ রূপ, তা অপূর্ব দ্যোতনায় উপস্থাপন করেন একঝাঁক তরুণ-তরুণী। ক্ষুদে শিল্পীরা তাদের একক ও দলীয় সংগীত, নাচ, ফ্যাশন শো, ও রম্য নৃত্যে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের মন কেড়ে নেয়। বিশেষ করে, ‘বাবা আমার কি বিয়ে হবে না’... এই রম্য গানে কিশোরদের দলীয় নৃত্য অথবা ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি’ গানে কিশোরীদের অসামান্য নাচ সত্যিই ছিলো বিস্ময়কর, যা উপস্থিত সকলকে আনন্দে ভাসিয়েছে। আমাদের যাপিতজীবনের একঘেঁয়েমিতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দৈনন্দিন খুনসুটির বিষয়টি গানে গানে উপস্থাপন করেন মিজানুল করিম ও সালমা হেনা দম্পতি।

বৈশাখ যে সার্বজনীন ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রাণের উৎসব, তারই প্রমাণ রেখে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান, ‘মধু হৈ হৈ বিষ খাওয়াইলা’র সঙ্গে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করে নিক ও কাজল। তাছাড়া ‘ধিম তানা ধিম তানা’ গানের তালে তালে অসাধারণ নৃত্যশৈলী পরিবেশন করে নিজের জাত চেনান সুজানা খান। অনুষ্ঠানে আরো গান করেন আবু নাসের তোয়াব, পৌলমী নন্দন মল্লিক, দিল আফরোজ রুমা, শাহরিয়ার রণি, শাম আলম, মাধুর্য বিশ্বাস প্রমুখ।

পুরো আয়োজনে বাড়তি মাত্রা যোগ করে বৈশাখী মেলা। অডিটরিয়ামের প্রবেশ মুখের উন্মুক্ত চত্বরে ছিলো নানা ধরনের স্টল। তাতে গ্রামীণ লোকজ ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ মাটির হাঁড়ি, বাসন-কোসন না থাকলেও শোভা বাড়িয়েছে বাহারি পোশাক-শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, চুড়ি, কানের দুল, মাথার ব্যান্ড... আরো কতো কী! উৎসুক ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় ছিলো স্টলগুলোতে। ক্যাফেটরিয়াতে ছিলো নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পিঠাপুলির সম্ভার... পাটিসাপটা, পাক্কন, দুধচিতই ও মালপোয়া প্রভৃতি। ছিলো ঝালমুড়ি, ছোলা, চটপটি, পিঁয়াজু, চপ, চা প্রভৃতি। আমাদের প্রবাসজীবনে দেশীয় ঐতিহ্যের চিরচেনা রূপটি ধরা পড়েছিলো । ঠিক যেন এক টুকরো বাংলাদেশ!

পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময় আর কুশল জিজ্ঞাসায় এ অনুষ্ঠানটি প্রকৃতপক্ষে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিলো। আনন্দ আর উৎসাহের কমতি ছিলো না শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবা এমনকি প্রবীণদের মাঝেও। এই প্রজন্মের শিশুদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে সমৃদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতিকে সামনে এগিয়ে নেবার দৃঢ় প্রত্যয়। সকলের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে দিনটি সত্যি হয়ে উঠেছিলো বরণের এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

২০০৫ সালে বাংলা সংস্কৃতিকে লালন করার স্বপ্ন নিয়ে ধ্রুপদের যাত্রা শুরু। দু’জন নিবেদিত প্রাণ সংস্কৃতিসেবী বনফুল (মণি ভাবি) ও আনিতা করগুপ্তা আজ থেকে ১৪ বছর আগে নিছক ভালোবাসার টানে ধ্রুপদ নামে বাংলা সংস্কৃতির যে বীজ বপন করেছিলো, তা আজ মহীরুহে পরিণত হতে চলেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো, প্রবাসে আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে বাংলা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা। সে প্রত্যয় নিয়ে ধ্রুপদ এগিয়ে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটি চায় বাংলা সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আর তা হলেই সমৃদ্ধ বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্য বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে ধ্রুপদের বিশ্বাস। জয়তু ধ্রুপদ!  ফেসবুক থেকে

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়