মোহাম্মদ সবুর মিয়া: ঢাকার জুরাইনের বাসিন্দা পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী প্রবীণ ও বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি মিজানুর রহমান কিছুদিন পূর্বে প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন কাওরান বাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনে। তার সঙ্গে ছিলেন জুরাইন অঞ্চলের কিছু সংখ্যক যুবক নারী ও শিশু। তাদের প্রতিবাদের প্রতীকী ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী। প্রতিবাদকারিরা ওয়াসার এম ডি ও কর্মকর্তাদের জন্য নিয়ে গিয়েছিল ওয়াসার সাপ্লাইয়ের শতভাগ বিশুদ্ধ সুপেয় পানি, চিনি ও লেবু, সঙ্গে ছিল লেবু কাটার জন্য ছোট্ট ছুরি বা চাকু। প্রথমে তার অবস্থান নিয়েছিল ওয়াসা ভবনের সামনে। ওয়াসা ভবনের ভেতর প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করেছিল পুলিশ। অফিস কর্মকর্তারা জানিয়েছিল এমডি স্যার অফিসে নেই কিন্তু আন্দোলনকারীরা ছিল প্রতিবাদমুখর। অল্প সংখ্যক প্রতিবাদী কন্ঠ হলেও প্রতিবাদের ধরন ছিল ভিন্ন ও শক্তিশালী। আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী মিজানুর রহমান সঙ্গে এক যুবক,মহিলা ও শিশু সঙ্গে শরবত তৈরির সমস্ত উপকরণ নিয়ে ওয়াসা ভবনের ভিতর প্রবেশ করেন । সেই সময়ে জনাব এমডি সাহেব তার কার্যালয় উপস্থিত ছিলেন না। ওয়াসার কর্মকর্তারা দাবি করে তাদের পানি শতভাগ সুপেয়। মজার ব্যাপার পানি শতভাগ সুপেয় কিন্তু এ প্রচণ্ড গরমে কেন সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানি দ্বারা তৈরি শরবত পান করবে না। বিপত্তি এখানে সৃষ্টি হয় সারাদেশে মিডিয়ার মাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হয়। সাংবাদিকদের কাছে ওয়াসার একজন কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করে আমাদের পানি
পানযোগ্য তবে কিছু কিছু জায়গায় পাইপ লাইনে সমস্যা আছে, যার কাজ চলছে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সমাধান হবে। আন্দোলনকারীদের সাথে ওয়াসার কর্মকর্তাদের
বাকবিতন্ডা হয় অনেক সময় ধরে, যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি দেখায় উভয় পক্ষ। সাংবাদিকরাও বিভিন্ন প্রশ্ন যুক্ত করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। আন্দোলনের
পরবর্তী ফলাফল, ওয়াসার ইঞ্জিনিয়াররা মিজানুর রহমানের বাসায় যেয়ে হুমকি- ধামকি দেয় ব্যাপারটি বাংলাদেশের সব মিডিয়া দেশের মানুষের নজরে আনে।
2
ঢাকা শহরে বসবাসকারী মানুষেরা পানি পান করে থাকে। পানি পান করে তো থাকবেই। এটাতো, আলোচ্য বিষয় নয়। মূল কথা হচ্ছে আমরা প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে পানি
পান করছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পানির ব্যবহার করছি যেমন, কাপড়চোপড় পরিস্কারের ক্ষেত্রে, রান্না করার ক্ষেত্রে, পান করার ক্ষেত্রে তো বটেই। এই পানি আমাদের
শরীরের জন্য কতটুকু নিরাপদ আমরা কি ভেবে দেখেছি। আমরা কি করে সত্যিকার অর্থেই বুঝবো যে আমরা নিরাপদ পানি পান করছি। যারা বিবৃতি দেয়, তাদের পানি
শতভাগ সুপেয়, আবার তারাই বলে কিছু সমস্যা আছে লাইন সংস্কারের কাজ চলছে অতি শীঘ্রই সমাধান পাবেন। কথাগুলো কি বাস্তবসম্মত, নাকি স্ববিরোধী? আসল
কথা হচ্ছে সমাধান কোথায়; আমরা কি বাজার থেকে নামিদামি ব্র্যান্ডের পানি ক্রয় করে পান করবো, এই সামর্থ্য কত পারসেন্ট মানুষের আছে সেটাও কি একটা বড়
প্রশ্ন নয়? আর আমরা কিসের ভিত্তিতে বলতে পারি নামিদামি ব্র্যান্ডের পানি পান করা শতভাগ নিরাপদ। কেউ কি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারবেন? সরিষার মধ্যেই তো
ভূত, তা হলে ভূত তাড়াবে কে? বিশেষজ্ঞদের কথাই সীমাহীন গড়মিল। আমরা যে বাসায় থাকি সেই বাসার পানি কতটুকু নিরাপদ, পানির ট্যাংকি কতদিন পর
পর পরিষ্কার করা হয় কিংবা আদতেও হয় কিনা। এর দায়িত্ব কে নিবে? কতদিন পর পর পানির ট্যাংকি বাড়ির মালিক কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার করবে এমন কোন নির্দেশনা
কি আছে? পানি পানের নামে আসলে আমরা কতটুকু নিরাপদ পানি পান করছি বা করব কেউ কি বলতে পারবেন কে দিবে আমাদের নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা?
E-mail: [email protected]
আপনার মতামত লিখুন :