শিরোনাম
◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

প্রকাশিত : ১২ মে, ২০১৯, ০২:১৫ রাত
আপডেট : ১২ মে, ২০১৯, ০২:১৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পঞ্চগড়ে কারাগারে দগ্ধ হয়ে আইনজীবীর মৃত্যু : দায় কার?

বিভুরঞ্জন সরকার : পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট পলাশ কুমার রায় (৩৬) পঞ্চগড় জেলা কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন।

পলাশের মা, আটোয়ারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মীরা রানী জানিয়েছেন, ‘আমার ছেলে ২০১৩ সালে কোহিনূর কোম্পানিতে লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তাকে একটি ‘অনৈতিক’ কাজ করতে বললে পলাশ সেটা করতে অস্বীকার করে এবং ২০১৬ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের মিথ্যা মামলা দেয় কোম্পানিটি। এই মিথ্যা মামলায় তাকে দুইবার জেলে যেতে হয়েছে। তখন তার ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে এতে পলাশ শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন।

মীরা রানী মনে করেন, সুপরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে কারাগারের ভেতর পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানি জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন মীরা রানী। মীরা রানী আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধওে কোহিনূর কোম্পানি পলাশ ও তাদেও পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। হয়রানি ও নির্যাতনে তার মুক্তিযোদ্ধা স্বামী মারা গেছেন বলেও মীরা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা গোটা পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোহিনূর কেমিক্যালসের মামলা, নির্যাতন আর হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য গত ২৫ মার্চ গোটা পরিবার পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পুরো বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। মানববন্ধনের বক্তৃতায় পলাশ কুমার রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রশাসন ও পুলিশকে নিয়ে কটুক্তি করেন বলে অভিযোগ তুলে জনৈক রাজীব রানা পলাশের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে গত ২৬ মার্চ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তখন থেকে তিনি জেলেই ছিলেন।

জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কোহিনূর কেমিক্যালসের মামলার হাজিরার জন্য গত ২৬ এপ্রিল পলাশকে পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় পাঠানোর কথা ছিলো। সেদিনই দুপুরে কারাগারের শৌচাগারে তিনি অগ্নিদগ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওইদিনই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ এপ্রিল দুপুরে মারা যান পলাশ। তার শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে চিকিৎসকরা জানান।

অ্যাডভোকেট পলাশের এই আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জেলের ভিতর একজন বন্দীর শরীরে আগুন কীভাবে লাগলো? জেলের শৌচাগারে পলাশ দিয়াশলাই বা দাহ্য পদার্থ কীভাবে পেলেন? তিনি যদি আত্মহত্যার চেষ্টা করে থাকেন তাহলে কি কারণে তিনি তা করলেন ? কে বা কারা তাকে প্ররোচিত করলো? তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোহিনূর কোম্পানির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তা তদন্তের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা? অ্যাডভোকেট পলাশকে দিয়ে কি ‘অনৈতিক’ কাজ করাতে চেয়েছিলো কোহিনূর কোম্পানি?

পঞ্চগড়ের সিনিয়র সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম শহীদ জানিয়েছেন, পলাশ কুমার রায়ের মৃত্যুতে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও জেল সুপারিনন্টেন্ডেন্ট এহতেশাম রেজা বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, কারা হাসপাতারের অন্য বন্দী ও দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীদের বক্তব্যসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জমা দেয়া হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন বলে জেনেছি। তিনি তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে, পঞ্চগড়ে কারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হকের এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৮ এপ্রিল এই আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, পঞ্চগড়ের মুখ্য বিচারিক হাকিমের তত্ত্বাবধানে একটি ম্যাজিস্ট্রেট টিম দিয়ে ওই ঘটনার বিচারিক তদন্ত করতে হবে। এই আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

আমরা আশা করবো, বিচারিক তদন্তে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে এবং এজন্য যদি কারো কোনো দায় বা অপরাধ থাকে তা শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানির বিষয়টিও যেন তদন্তের বাইরে না থাকে। একজন অপরাধীরও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।

লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়