ডেস্ক রিপোর্ট : বৈশাখে আগুন ঝরাচ্ছে আকাশ, কাঠফাটা রোদে তপ্ত বাতাস। প্রাণ ও প্রকৃতি যখন প্রখর রোদে পুড়ছে, কৃষ্ণচূড়া ফুল তখন জানান দেয় সৌন্দর্যের বার্তা।?গ্রীষ্মের এ প্রাণহীন রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরে আপন মহিমায়। যেন রক্ত লাল রঙে হাজারও কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি। প্রাণে আসে নতুন উদ্যম।?যে কারও চোখে এনে দেবে শিল্পের দ্যোতনা, অবাক চোখে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করে সবাই। মন ছুঁয়ে রঙিন হয়ে যায় কৃষ্ণচূড়ার রঙে। যেন মনের অজান্তেই স্বভাব কবি হয়ে যায় সে।?যায়যায়দিন।
এ সময়টাতে গ্রীষ্মের প্রকৃতি চোখ ধাঁধানো টুকটুকে সিঁদুর লাল কৃষ্ণচূড়ায় সাজে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় বৈশাখের চামড়া পোড়া রৌদ্রের সবটুকু গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে এ রক্তলাল পুষ্পরাজি। সবুজ পাতার মাঝে যেন আগুনের ফুলকি ছড়াচ্ছে। প্রকৃতির এ নিয়মের উল্টো কিছু ঘটেনি তিলোত্তমা ঢাকায়।
ইটপাথরের সারি সারি দালানকোঠার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়েছে আগুনঝরা কৃষ্ণচূড়া। কখনো লাল, কখনো হলুদ আবার কখনো মিশেল। নজরকাড়া ফুলের বর্ণিল রঙের সাজে সেজেছে ব্যস্ত ঢাকার পথঘাট। প্রকৃতির এই অপরূপ শোভা দেখে হঠাৎ থমকে দাঁড়ান ব্যস্ত নগরবাসী। গ্রীষ্মের খরতাপে পোড়া ঢাকা নগরীর রূপকে বদলে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়া অপরূপ সেই সৌন্দর্যে প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে অনেকেই। গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসীকে এনে দিয়েছে একমুঠো স্বস্তি। প্রকৃতির এমন রূপে নিরেট মহানগরীর ক্লান্ত পথিকও যেন ফিরে পেয়েছে আপন ঠিকানা।
যেখানে কোনো শাসন নেই ট্রাফিকের লাল সবুজ আর হলুদ বাতির। হাজার ব্যস্ততার ভিড়ে কিংবা এক চিলতে অবসরে ঘড়ির কাঁটা ধরে চলা অতি ব্যস্ত মানুষও যেন তাই সময় কাটায় ইচ্ছে রঙের ইচ্ছে ফুলে। রঙিন ফুলে ফুলে নুয়ে পড়া সবুজ বৃক্ষের, এই যে বিনয় সেই বাতাসেও যেন সম্প্রীতির সুর। যেখানে ঝাড় লণ্ঠনের সোনালি ঝর্ণাধারার ফুল
হলুদ সোনালু যেন কেড়ে নেয় সৌন্দর্যের সব ভাষা। আর ছয় পাপড়ি মেলে ঢাকার উত্তপ্ত পথ জুড়ে, হলুদ পরাগে প্রশান্তির গান গায় জারুলের বেগুনি আভা।
উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া ?এই গাছ চমৎকার পত্রপলস্নব ও আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ?এটি ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যা গুলমোহর নামেও পরিচিত।?
কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল, কমলা, হলুদ ফুল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতা এক অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্কপত্র ঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত, তবুও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধক গুন ছাড়াও এ গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। অবাক করা বিষয় হলো, আমাদের অঞ্চলে সাধারণত এপ্রিল-জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি ফোটার সময় বিভিন্ন।?
'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জরি কর্নে-আমি ভূবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্নে'- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এমন পঙতি দিয়ে বোঝা যায় কতটা সৌন্দর্য কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিকে দান করেছে।?
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, 'গন্ধে উদাস হওয়ার মতো উড়ে/তোমার উত্তরী কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরী'।
খরতাপ রৌদ্দুরে কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য প্রকৃতির সাজ সাজ রব আমাদের এক অপার প্রাপ্তির কথা বলে। মনে এক অনাবিল সুখ এনে দেয়। শহুরে জীবনের রুক্ষতা, যানজট, ভ্যাপসা গরম আর ধুলোবালির বাইরে ক্যাম্পাসের এ কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে এক প্রশান্তির নিশ্বাস নেয়া যায়, কিছুক্ষণের জন্য হলেও মন হারিয়ে যায় প্রকৃতির মাঝে।