শিরোনাম
◈ অবশেষে মার্কিন সিনেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস ◈ কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল চলাচল বন্ধ ◈ ইউক্রেনকে এবার ব্রিটেননের ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা ◈ থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ◈ জিবুতি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে ৩৩ জনের মৃত্যু ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ এফডিসিতে মারামারির ঘটনায় ডিপজল-মিশার দুঃখ প্রকাশ ◈ প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ◈ প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাত চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন নির্বাচিত ◈ বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত : ১১ মে, ২০১৯, ০৪:২৫ সকাল
আপডেট : ১১ মে, ২০১৯, ০৪:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা সাজাতে চেয়েছিল তানিয়ার ‘খুনিরা’

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে নার্স শাহীনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করে হাসপাতালে নিয়ে আসে দু’জন। ওই সময় তারা কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের জানায়, এয়ারফোনে গান শুনতে শুনতে বাস থেকে নামতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তানিয়া। কটিয়াদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

গত ৬ মে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে কটিয়াদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয় নিথর তানিয়াকে। ওই সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ব্রাদার রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি তখন ডিউটিতে ছিলাম। দুইটি ছেলে একটি মেয়েকে (তানিয়া) জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। কী হয়েছে জানতে চাইলে তারা জানায়, মেয়েটিকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে তারা। মেয়েটিকে তারা চেনে না বলেও দাবি করে। তারা আরও দাবি করে, প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে শুনেছে যে, মেয়েটি চলন্ত বাস থেকে পড়ে গেছে। ওই সময় মেয়েটির কানে এয়ারফোন ছিল।’

ব্রাদার রাসেল বলেন, ‘যখন আমি মেয়েটিকে দেখি, তখন তার সালোয়ার রক্তে ভেজা ছিল। ঠোঁটে আঘাতের দাগ ছিল। মেয়েটি যদি লাফ দিয়ে থাকে, তবে তার হাঁটু ছিলে যাওয়া বা কেটে যাওয়ার কথা; কিন্তু তার হাঁটুতে কোনও দাগ ছিল না। মেয়েটির হাতের মুষ্টি কালো হয়ে গিয়েছিল। সজোরে কাউকে ঘুষি দিলে হাতের মুষ্টি এমন কালো হতে পারে। হাসপাতালে আনার পর তানিয়ার সঙ্গে কোনও এয়ারফোন পাওয়া যায়নি।’

তিনি জানান, সব দেখে তার সন্দেহ হয়। প্রাথমিকভাবে দেখে তার কাছে মনে হয়, মেয়েটি এক থেকে দেড়ঘণ্টা আগে মারা গেছে।

ব্রাদার রাসেল আরও বলেন, ‘যে দুজন তানিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল, তাদের একজনের নাম আল আমিন, তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বীর উজলী গ্রামে। সে স্বর্ণলতা পরিবহনের স্টাফ হিসেবেই আমার কাছে তার পরিচয় দিয়েছিল। সঙ্গে থাকা ছেলেটির নাম রফিকুল ইসলাম, তার বাড়িও গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার লোহাদি গ্রামে।’

তিনি জানান, সব কিছু দেখে তার সন্দেহ হওয়াতে তিনি জরুরি বিভাগের বাথরুমে গিয়ে ফোন করে বিষয়টি জানান আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাজরিন তৈয়বাকে। ডা. তৈয়বা জরুরি বিভাগে আসার আগে পুলিশকে খবর দেন।

রাসেল বলেন, ‘এরপর কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) শফিকুল ইসলামসহ পুলিশের একটি দল হাসপাতালে আসে; তখনও আল আমিন ও রফিকুল হাসপাতালেই ছিল। তাদের সঙ্গে পুলিশের কথাও হয়। হঠাৎ তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে পালিয়ে গেলো, সেটা এক রহস্যজনক। পরবর্তী সময়ে রফিকুল ইসলামকে হাসপাতালের আশপাশ থেকে আটক করে পুলিশ। আর এখন আল আমিনকেও ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ।’

আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাজরিন তৈয়বা বলেন, ‘মেয়েটিকে যারা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল, তারা ঘটনাটিকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। তাদের কথার সঙ্গে তানিয়ার শরীরের আঘাতের চিহ্ন ও অন্য বিষয়গুলোর মিল পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই আমরা তাদের বুঝতে না দিয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছিলাম। পুলিশ এসে তাদের পেয়েছিল। হঠাৎ শুনলাম, ছেলে দুটো পালিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল, মেয়েটির সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে।’

ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ময়নাতদন্তে তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। তানিয়ার শরীরের বিভিন্ন অংশে জবরদস্তির অনেক চিহ্ন রয়েছে। কোথাও কোথাও নখের আঁচড় আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ময়নাতদন্তকালে সব বিষয় খুঁটিয়ে দেখেছি। মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে –এটা নিশ্চিত। ধর্ষণের পর তার মাথার পেছনে ভারী কিছু দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত করা হয়েছিল। মাথার খুলির পেছনের অংশ দুইভাগ পাওয়া গেছে। মাথার ভেতর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এমন আঘাতের পর যে কারও সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হওয়ার কথা; তা না হলেও ৩০-৪০ মিনিটের বেশি বেঁচে থাকার কথা নয়।’

এসব বিষয়ে ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যখন আমরা জরুরি বিভাগে প্রবেশ করি, তখন আবাসিক চিকিৎসকের সঙ্গে রফিক কথা বলছিল। আমরা যখন খোঁজখবর নিচ্ছি, রফিক তখন জরুরি বিভাগ থেকে বের হয়ে যায়। আমরা জানতাম না যে, এই ছেলেটিই লাশ নিয়ে এসেছে। তবে পরে হাসপাতালের আশপাশ থেকে রফিককে আটক করি। এখনও আল আমিনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

চলন্ত বাসে তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বাজিতপুর থানায় গত ৭ মে রাতে তার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে আল আমিনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় বাসের চালক নুরুজ্জামান নুরু (৩৯) ও সহকারী লালন মিয়াসহ (৩২) মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (৮ মে) গ্রেফতার ব্যক্তিদের কিশোরগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাদের প্রত্যেকের ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে এলোমেলো কথা বলছে গ্রেফতার আসামিরা। একজনের কথার সঙ্গে আরেকজনের কথার মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ঘটনার সময় স্বর্ণলতা বাসের স্টাফ আল আমিন বাসেই ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের পিরিজপুর রুটে চলাচলকারী স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে গত ৬ মে তানিয়াকে ধর্ষণের পর করে হত্যা করা হয়। বাজিতপুর উপজেলার গজারিয়া নামক স্থানে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন ঢাকা থেকে কটিয়াদী ও বাজিতপুরের পিরিজপুর হয়ে নিজ গ্রামে ফিরছিলেন তানিয়া। তিনি কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মো. গিয়াসউদ্দিনের মেয়ে। তানিয়া ঢাকার কল্যাণপুরে ইবনে সিনা হাসপাতালে সেবিকা পদে কর্মরত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়