শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১০ মে, ২০১৯, ০৮:৪১ সকাল
আপডেট : ১০ মে, ২০১৯, ০৮:৪১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিচারের অপেক্ষায় স্বজনরা

ডেস্ক রিপোর্ট : ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার এক মাস আজ। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে দেশবাসীর মনে দাগ কাটিয়ে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন এই প্রতিবাদী তরুণী। নুসরাতকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যার ঘটনা সারাদেশে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই হত্যাকা-ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা। নিহতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করেছেন। তিনি বলেন, নুসরাতকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আশা করছি দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।

এই হত্যাকা-ের বিচারÑ বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবে। যাতে আর কোনো নুসরাতকে এভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে না হয়। একই দাবি করেছেন নুসরাতের বাবা মাওলানা মুসা, মা শিরীন আক্তার ও ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে চলতি বছরের ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসাকেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। আলোচিত এ মামলায় এ পর্যন্ত এজহারভুক্ত ৮ আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

তারা হলেনÑ নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল। গ্লাস ও বোরকা উদ্ধার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম জানান, নুসরাতের ওপর অগ্নিসন্ত্রাসের দিন অন্যতম তিন আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম, জুবায়ের আহমেদ, জাবেদ হোসেন ও উম্মে সুলতানা পপি বোরকা পরিহিত ছিল। পিবিআই আলামত হিসেবে তিনটি বোরকা জব্দ করেছে। এদিকে অগ্নিসংযোগকারীরা একটি গ্লাসে করে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন তেল ছিটিয়েছিল। সেই গ্লাসটি মামলার আলামত হিসেবে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আদালতে সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ এ মামলায় এ পর্যন্ত আদালতে সাত সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। ৮ মে দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালত তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নুসরাতের ওপর অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় কেরোসিন ও বোরকা ব্যবহার করেছে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা। ইতিমধ্যে কেরোসিন ও বোরকা বিক্রেতা ও বোরকা দোকানের কর্মচারী, নুসরাতের দুই বান্ধবী, মাদ্রাসার এক নৈশপ্রহরী ও একজন পিয়নসহ মোট সাতজনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। চলতি মাসের মধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিল সম্ভব বলে আমরা আশাবাদী। সিরাজের হুকুমেই হত্যা নুসরাতকে শ্লীলতাহানির পর কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। ২৮ এপ্রিল ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে এ স্বীকারোক্তি দেন। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টায় পিবিআইয়ের স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় তিনি বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজের সঙ্গে কারাগারে শাহাদাত হোসেন শামীম ও নুর উদ্দিন দেখা করতে গেলে তিনি নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করতে বলেন। চাপ প্রয়োগে কাজ না হলে পুড়িয়ে মেরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পপির নাম গোপন রেখেছিল হত্যাকারীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আরেক আসামি উম্মে সুলতানা পপি (শম্পা)।

সে জানায়, নুসরাতকে হত্যা করার জন্য ঘটনার দিন পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে সে-ই ছাদে ডেকে নিয়ে গেছে। তার নাম পপি হলেও সেদিন হত্যাকারীরা তার পরিচয় গোপন রেখে ‘শম্পা’ নামে ডেকেছিল। সে জন্য নুসরাতও নিজের বয়ানে তাকে ডেকে নেওয়া বোরকা পরিহিত ছাত্রীটির নাম শম্পা বলে গিয়েছিলেন। আগুন দেয় জাবেদ, বুক চেপে ধরে মনি ২০ এপ্রিল বিকালে আদালতে জবানবন্দি দেন আসামি জাবেদ ও কামরুন্নাহার মনি। তারা তাদের সহপাঠী নুসরাত হত্যার কিলিং মিশনে সরাসরি জড়িত ছিলেন। জাবেদ নুসরাতের সারা শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেন। আগুন ভালো করে লাগার জন্য মনি নুসরাতের বুকসহ শরীর চেপে ধরে। ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন ধরায় জুবায়ের সাইফুর রহমান মো. জোবায়ের কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে ম্যাচের কাঠির মাধ্যমে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নুর উদ্দিন, হাফেজ আবদুল কাদের ও আবদুর রহিম শরীফ। গেট পাহারার দায়িত্বে ছিল মামুন ও রানা ৬ মে হত্যাচেষ্টার ঘটনার দিন গেট পাহারার দায়িত্বে ছিল ইমরান হোসেন মামুন ও ইফতেখার হোসেন রানা। যাতে ছাদে কিলিং মিশনে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে। কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। খেয়াল রাখবেন হাইকোর্ট মামলা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে, এ মামলায় কোনো গাফিলতি হচ্ছে কিনাÑ তা খেয়াল রাখবেন হাইকোর্ট। সাগর-রুনি, তনুসহ অন্যান্য মামলার মতো কোনোভাবেই যেন রাফির মামলা হারিয়ে না যায়, তা হাইকোর্টের নজরে থাকবে। নুসরাত হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন। যৌন হয়রানির ঘটনাকে ‘নাটক’ বানাতে চেয়েছিলেন ওসি যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে গিয়ে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের কক্ষে আরেক দফা হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল নুসরাতকে। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিল না।

ভিডিও করার সময় নুসরাত অঝোরে কাঁদছিলেন এবং তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। শেষ চিঠিতেও লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন নুসরাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার হাতে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর কঠিন পরিস্থিতিতেও ভেঙে না পড়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন নুসরাত। সহপাঠী বান্ধবীদের উদ্দেশে হার না মেনে লড়াইয়ের কথা লিখেছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। তার পড়ার টেবিলের খাতায় দুই পাতার ওই চিঠি তামান্না ও সাথী নামে দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। তবে যৌন হয়রানির ঘটনার পর সিরাজউদ্দৌলা গ্রেপ্তার হলে তার মুক্তির দাবির মিছিলে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাফি। তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটূক্তিতেও মর্মাহত হওয়ার কথা চিঠিতে লিখেছিলেন। ‘আমি লড়ব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করব না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরব না, আমি বাঁচব। আমি তাকে শাস্তি দেব। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেব যে, তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নেবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেব। ইনশাআল্লাহ।’ নুসরাতের শেষ ইচ্ছা পূরণ হবে, কঠিনতম শাস্তি হবে দোষীদেরÑ এমনটিই প্রত্যাশা তার পরিবারের। গোটা দেশবাসীরও।
সূত্র : দৈনিক আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়