আমিন মুনশি : মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় তখন বাংলা ভাষা চর্চার হিড়িক। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়ার তালিবুল ইলমরাও সাহিত্য শেখার জন্য ব্যাপক উৎসাহী। স্বল্প বিরতিতে বিভিন্ন স্থানেই নিয়মিত বসতো সাহিত্য চর্চার আসর। সে সময় মতিন ভাইয়ের সঙ্গে আমিও মাঝেমধ্যে এখানে-সেখানে যেতাম। লেখক-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচিত হতাম। লেখালেখির অনুপ্রেরণাও নিতাম।
একই জামাতে পড়লেও মতিন ভাই ছিলেন বয়সে আমার চেয়ে বড়। টুকটাক লেখার হাতও ছিলো ওনার। ইসলামি ঘরানার নানান পত্রিকা-ম্যাগাজিনে প্রায়ই দেখা যেতো ওনার লেখা ছাপা হচ্ছে। একদিন তো ক্লাসে পেছনের বেঞ্চে বসে গল্প লেখার দরুন তিনঘণ্টা দাঁড়িয়ে কানে ধরে থাকতে হয়েছিল তাকে!
দুই.
মতিন ভাই একবার ভয়াবহ এক গল্প লিখলেন। সমকামিতা নিয়ে। মাদ্রাসার ভেতর তখন ঘনঘন এ ব্যাপারটি ঘটছিলো। আমাদের গোপন সাহিত্য আড্ডায় সে গল্প তিনি নিজে পাঠ করে শোনালেন সবাইকে। তার গল্প শুনে রীতিমতো কাঁপুনি উঠে গিয়েছিল আমাদের। আড্ডায় সেদিন বেশ সমালোচিত হয়েছিল মতিন ভাইয়ের গল্প। আমরা তাকে অনুরোধ করেছিলাম—এ গল্প যাতে কোনোভাবেই পত্রিকায় পাঠানো না হয়। এতে আলেম সমাজের বদনাম হবে। মাদ্রাসার প্রতি মানুষের খারাপ ধারণা জন্মাবে।
সেদিনের সাহিত্য আড্ডার পরের সপ্তাহেই মতিন ভাইয়ের জীবনে ঘটে ভয়াবহ সেই ঘটনা। যে ঘটনায় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিলো তার। আর আমাদের হারাতে হয়েছিলো প্রতিভাবান সাহিত্য সারথি। সংক্ষেপে কাহিনীটা শুনুন মতিন ভাইয়ের মুখ থেকে—‘বৃহস্পতিবার বিকেলে আমি পুরানা পল্টনে গিয়েছিলাম একটি সাহিত্য সভায়। সভা শেষে গাফফার চৌধুরী নামে এক পত্রিকা সম্পাদকের সঙ্গে তার অফিসে গিয়েছিলাম। গাফফার চৌধুরী হলো ইসলামি লেখক মহলে বেশ পরিচিত মুখ। সেদিন সন্ধ্যার পর আমরা অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলেছিলাম। সাহিত্য নিয়ে ভবিষ্যতে কী কী কাজ করা যায় এসব আলাপ করেছিলাম। ওনি আমাকে বেশ কিছু কাজের অফার করলেন। নিজে চা বানিয়ে খাওয়ালেন। তারপর কখন যে ঘটালেন কাণ্ডটা—আমি বলতে পারবো না।’
তিন.
পরদিন শুক্রবার সকালে মাদ্রাসায় ফিরেই বেডিং বিছিয়ে শুয়ে পড়লেন মতিন ভাই। লজ্জায় নিজে কারো সাথে শেয়ারও করতে পারছিলেন না ব্যাপারটি। আবার রুমের হুজুরকে জানালে পড়তে হবে আরেক বিপদে। রাতে মাদ্রাসায় উপস্থিত না থাকার শাস্তি। মতিন ভাইয়ের বন্ধু শাকিল তখন আমাদেরকে তাড়া দিয়ে বললো—‘ওরে অখনি হসপিটালে নিতে অইবো। পেছনের রাস্তা থেইক্কা থাইমা থাইমা রক্ত যাইতাছে। শরীলডা এহন খুবই কাহিল হইয়া আছে।’
আপনার মতামত লিখুন :