শিরোনাম
◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত

প্রকাশিত : ০৯ মে, ২০১৯, ১০:৪২ দুপুর
আপডেট : ০৯ মে, ২০১৯, ১০:৪২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুন্দরবন যেভাবে দস্যুমুক্ত হলো

মৌরী সিদ্দিকা : বঙ্গোপসাগর থেকে ৭০ জেলে অপহরণ কিংবা সুন্দরবনের মালঞ্চ নদী থেকে ৩৫ জেলেকে অপহরণ করেছে জলদস্যুরা - একটা সময় এই ধরনের খবর জাতীয় পত্রিকাতেও ঠিকঠাক জায়গা পেতো না।

শুধু সংবাদ নয়, এই দুই ধরনের অপহরণের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও থাকতো দুই রকম। এবিষয়ে স্থানীয় থানায় মামলা হতো না। মুক্তিপণের টাকা দিয়ে দরিদ্র জেলেরা একে একে ঘরে ফিরতো। মাঝের দিনগুলো তাদের কাটতো নির্যাতন আর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে।

সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম জার্মান রেডিয়ো ডয়েচে ভেলেতে লেখেন। সাংবাদিকতায় আসার পর থেকে উপকূলে কাজ করার আগ্রহ কাজ করতো।

২০০৯ সালে আইলার পর সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগরের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বলতে জলদস্যু-বনদস্যুদের ভয়াবহতার চিত্র বোঝার চেষ্টা করি। শ্যামনগরের সাংবাদিক সালাহউদ্দীন বাপ্পী সাতক্ষীরা সুন্দরবনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ দস্যু মোতালেব বাহিনীর প্রধান মোতালেব এর ফোন নাম্বার জোগাড় করে কথা বলিয়ে দেন তিনি। পূর্বনির্ধারিত সময়ে ফোন দিয়ে কথা বললাম জলদস্যুনেতা মোতালেবের সঙ্গে। দীর্ঘ কথোপকথনে বুঝলাম, তাদের বাড়ি ফেরার আকুতি আছে। দস্যু জীবনটাও উপভোগ করছে না তারা । আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিতেই মোতালেব বললেন, প্রাণভয়ে এই পথে আসার সাহস পাচ্ছেন না। অবশ্য কিছুদিন পরই র‌্যাব এর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মোতালেব।
এদিকে অন্য দস্যুবাহিনীগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করি। রাজু বাহিনী, জুলফিকার বাহিনীসহ বড়, মাঝারি ও ছোট দস্যুবাহিনীগুলোর সঙ্গে ফোনে কথা বলা শুরু করি। তারা সবাই ফিরতে চায়। তবে শুরুতে ক্রসফায়ারের ভয়ে কেউই আত্মসমর্পণের পথে এগোতে রাজি হয়নি। অবশ্য জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারলে তারা সকলেই আত্মসমর্পণ করবে, তেমনই বুঝলাম।

আত্মসমর্পণের প্রস্তাব কেন? গহীন সুন্দরবন বনদস্যু-জলদস্যুদের লুকিয়ে থাকার জন্য অনুকূল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বনের ভেতর থেকে তাদের আটক করা খুব কঠিন। অভিযানে আংশিক সফলতা আসলেও দস্যুবাহিনীগুলো থেকেই যাচ্ছিলো। সবগুলো অস্ত্র উদ্ধারও সম্ভব হচ্ছিলো না। অন্যদিকে বেশিরভাগ দস্যুই বিভিন্ন মামলার ফেরারি আসামি। ধরা পড়ে জেলখানায় গেলেও জামিন নিয়ে তারা সোজা ফিরে যেতো সুন্দরবনে, দস্যুজীবনে।

প্রথম দেখা হয় রাজু বাহিনীর সঙ্গে। ২০১১ সালে রাজু বাহিনীর আত্মসমর্পণের আগ্রহের কথা তুলে ধরি সংবাদের মাধ্যমে। দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় সে সময়ের র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা আমাকে দস্যুদের পৃষ্ঠপোষক ভাবতেন।

প্রথম দফায় প্রত্যাখ্যাত হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পরে আবারও উদ্যোগ নেই। তখন সবচেয়ে বড় জলদস্যু বাহিনীর নাম ‘মাস্টার বাহিনী’। এর প্রধান মোস্তফা শেখের সঙ্গে দীর্ঘ যোগাযোগের কারণে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলাম। সেই সূত্রে দস্যুদলটির সঙ্গে দেখা করি। আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নিয়ে আবারও সংবাদ প্রচার করি। এই দফায় অবশ্য ফিরতে হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র‌্যাব মহাপরিচালক এই দফায় বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

২০১৬ সালের ৩১ মে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দস্যুদল ‘মাস্টার বাহিনী’ আত্মসমর্পণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। তারই ধারাবাহিকতায় পরের আড়াই বছরে একে একে দস্যুতা ছেড়ে ফিরে আসে ৩২টি দস্যুবাহিনী। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সবশেষ ছয়টি দস্যুবাহিনী আত্মসমর্পণ করে৷ সেই অনুষ্ঠানে সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মোট ৩২৮ জন বনদস্যু-জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। জমা দেয় ৪৭০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও সাড়ে ২২ হাজার গুলি। দস্যুতা বন্ধ হয় সুন্দরবন ও বিস্তীর্ণ বঙ্গোপসাগরে। বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ হলেও পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া বাকি মামলাগুলোতে আইনি সহায়তা করার আশ্বাস দেওয়া হয়।

এই মুহূর্তে তিন-চারটি ছোট ছোট অনিয়মিত দল বনদস্যুতা করার চেষ্টা করছে বিচ্ছিন্নভাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়