শিরোনাম
◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন

প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:৫৪ রাত
আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:৫৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জঙ্গিবাদে আসক্তি বোঝার ২৩ লক্ষণ

কালের কণ্ঠ : জঙ্গিবাদের প্রতি ঝুঁকছে বেকার বা দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের পাশাপাশি উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও।বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবাদে জড়িত হিসেবে যাদের নাম প্রকাশ পাচ্ছে তাদের বেশির ভাগই শিক্ষিত, মেধাবী ও তরুণ। দেশ-বিদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, শিক্ষিত তরুণদেরই টার্গেট করে উগ্র ধর্মীয় মতাদর্শে উজ্জীবিত করে তোলে জঙ্গি সংগঠনগুলো। তারা ধর্মীয় বিষয়ে নিজেদের মনমতো ব্যাখ্যা দিয়ে এমনভাবে মগজধোলাই করে যাতে সংশ্লিষ্ট তরুণরা মনে করে, জঙ্গি হামলা ও ‘টার্গেট কিলিং মিশনে’ অংশ নিলে ‘শহীদের মর্যাদা’ পাওয়া যাবে! জঙ্গিবাদের ওই ধরনের ‘পাতানো ফাঁদে’ পড়লে তরুণদের আচরণে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। বাংলাদেশে অভিযানে নিহত এবং গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের বিষয়ে তদন্ত করে গোয়েন্দারা বেশ কিছু আলামত পেয়েছেন।

জঙ্গি দমন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত গোয়েন্দারা বলছেন, জঙ্গিবাদের বিপজ্জনক পথ থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে পরিবার, প্রতিবেশী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠনসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাঁদের মতে, কোনো তরুণ উগ্রপন্থায় জড়িয়ে পড়েছে বা পড়তে যাচ্ছে কি না তা বোঝা যাবে অন্তত ২৩টি লক্ষণ দেখে। ওই ধরনের আলামত দেখলে দ্রুত প্রশাসনের সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন সংস্থার বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা জানান, বিদেশে গিয়ে দুইভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে তরুণরা। একটি হলো বিদেশে পড়তে গিয়ে জঙ্গি সদস্য সংগ্রহকারী দলের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে পরে সেই সংগঠনের নেতাই বনে যাওয়া। আরেকটি হলো বিদেশি জঙ্গিদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে ফিরে বা বিভিন্ন দেশে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় জড়িয়ে পড়া।

জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ, নজরদারি এবং ব্যক্তিগত প্রফাইল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১২ বছরের কিশোর থেকে ৩৫ বছরের যুবকরাই ওই মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে বেশি। তাদের পাঠ্যপুস্তক বা একাডেমিক লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে ধর্মীয় বিষয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ বেড়ে যায়। তারা চুপচাপ, আত্মকেন্দ্রিক ও গভীরভাবে চিন্তামগ্ন থেকে ধর্মীয় উপদেশমূলক কথাবার্তা বেশি বলে। বিপদগামী তরুণরা নিজের শোবার ঘরে বেশির ভাগ সময় একাকী থাকে এবং নিজের কাজকর্ম গোপন রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকে। রুমের মধ্যে বেশির ভাগ সময় একাকী থাকা ও তার কার্যক্রম গোপন রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকা ছাড়াও উগ্রপন্থায় জড়িয়ে পড়া তরুণদের ইন্টারনেট ব্যবহারে অতিমাত্রায় আসক্তি দেখা যায়। এদের কেউ কেউ ফেসবুকে ফেইক আইডি ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনগুলোর লোগো ব্যবহৃত ফ্রেন্ডলিস্টে যুক্ত হয় এবং ‘জিহাদি’ কথাবার্তার পোস্টে লাইক বা কমেন্ট দেয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্মের আবেগে ফেলে জঙ্গিবাদে জড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় বিষয়ে আবেগ উসকে দিয়ে মগজ ধোলাই করা হয়। এরপর তাদের আচরণ বদলাতে থাকে। রেডিক্যালাইজড হয়ে গেলে তারা নিজেদের মতাদর্শই সঠিক বলে মনে করে। কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায়। সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশকে জানাতে হবে। জঙ্গিবাদে কেউ যেন জড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা সবার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, উগ্রপন্থায় জড়িত ব্যক্তিরা গণতন্ত্রকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করে ইসলামী শাসনব্যবস্থা, শরিয়া আইন ও খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরা নিজেদের আড়ালে রাখতে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে সিম কার্ড নিজের প্রকৃত নামে নিবন্ধন করে না। উগ্রবাদে উজ্জীবিত ব্যক্তিরা হঠাৎ করেই অতিমাত্রায় ধর্মচর্চা শুরু করে এবং নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে। এদের অনেকে হঠাৎ করেই দাড়ি রাখতে এবং পায়ের গোড়ালির ওপর পর্যন্ত কাপড় পরা শুরু করে। তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিয়ে, গায়ে হলুদ, জন্মদিন, গান-বাজনাসহ পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকে এবং এগুলোকে শিরক ও বেদাত বলে যুক্তি দেখায়। বাবা-মাসহ স্বজনদের নিজের নতুন মতাদর্শ মানতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। সুনির্দিষ্ট কিছু মসজিদে এবং ইমামের পেছনেই তারা নামাজ পড়ার চেষ্টা করে। কোরআন-হাদিসের প্রচলিত কপি না পড়ে অনলাইনে পাওয়া রেফারেন্স পড়ে এবং নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির মতামতকে যৌক্তিক দাবি করে।

উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী তরুণদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে গোয়েন্দারা জানান, ওই তরুণরা ‘জিহাদ’সংক্রান্ত বিষয়ে (গাজওয়াতুল হিন্দ/খোরাসান/শামসংক্রান্ত রেফারেন্স, ইমাম মাহদী ও দাজ্জালের আগমন ইত্যাদি) পড়াশুনা করে এবং বিভিন্ন দেশে মুসলিম নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে অতিমাত্রায় উদ্বিগ্ন থাকে। এরা দাওয়া বা হালাকার (জিহাদি গোপন বৈঠক) আয়োজন করে এবং আমির বা নেতা নির্বাচন করে বাকিরা শ্রোতা হয়। তারা জঙ্গিনেতা আনওয়ার আল আওলাকী, তামীম আল আদনানী, জসিম উদ্দিন রহমানী, আসিম ওমরসহ কয়েকজনের অডিও-ভিডিও-লেকচার শোনে এবং জঙ্গি সংগঠনের সাময়িকী (দাবিক-আইএস, ইন্সপায়ার-একিউ ইত্যাদি) ও ই-বুক পড়ে। জঙ্গিবাদের আদর্শ গ্রহণ করা তরুণরা মিলাদ, শবেবরাত, শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াসহ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দিবসগুলো পালনের সমালোচনা করে। তারা প্রচলিত মাযহাবকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করে এবং তথাকথিত আহলে হাদিস বা সালাফি বা ওয়াহাবি মতাদর্শে ঝুঁকে পড়ে। নিজেদের লা মাযহাব দাবি করে তারা। অনেকে ধর্মচর্চার পাশাপাশি শরীরচর্চা ও কাপিংয়ের মতো বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়